গত কয়েক বছরে মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার পাশাপাশি এর উপযোগিতা বেড়েছে নানাভাবে। দেশীয় স্টার্টআপের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। আইসিটি ক্ষেত্রে বেড়েছে চাকরির বাজার। ফ্রিল্যান্সিংয়েও এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এ ধারা চলমান রেখে আরও বেশি লাভবান হতে কী করণীয়, হুয়াওয়ে কী করছে সে বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান ইউয়িং কার্ল।
প্রশ্ন : দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ডিজিটাল বাংলাদেশের ভূমিকা কী বলে মনে করেন?
উত্তর : দেখুন গত এক দশকে বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পৃথিবীর বিশেষজ্ঞদের হতবাক করেছে। বাংলাদেশকে এখন অন্যান্য উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কারণ প্রায় প্রতিটি খাতে বাংলাদেশ সাফল্যের অনুকরণীয় নজির স্থাপন করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় এসেছে। প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার ও রপ্তানি আয় ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। অর্থনীতির পাশাপাশি মানব উন্নয়ন সূচকের প্রায় প্রতিটি ধাপে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় এখন সামনের দিকে।
এসব অভাবনীয় সাফল্য সম্ভব হয়েছে মূলত বাংলাদশের দূরদর্শী চিন্তাভাবনা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে তা এই দেশকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অভাবনীয় সফলতা এসেছে। আর এই ডিজিটাইজেশনের ওপর ভর করে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ই-গভর্ন্যান্স পদ্ধতি চালু করা থেকে শুরু করে, শিক্ষা, শিল্পকারখানাসহ প্রতিটি খাতে বাংলাদেশ ভালো করেছে এবং আগামী দিনেও ভালো করবে। এমনকি করোনা মহামারী সত্ত্বেও দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এ মুহূর্তে গোটা বিশ্ব এক ধরনের ডিজিটাল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো বৈশ্বিক করোনা মহামারি। এ দুর্যোগে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, যেসব দেশ আইসিটি ক্ষেত্রে যতটা শক্তিশালী অবস্থায় ছিল, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার তাদের জন্য ততটা সহজ হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে যেসব দেশ দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাবে সেসব দেশের উন্নতির ধারা আরও বেশি স্থিতিশীল হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের জীবনকে সহজ করার জন্য প্রতিদিন নতুন এবং আকর্ষণীয় ডিজিটাল সেবা আসছে। এ পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় মানুষ এবং বিভিন্ন দেশ ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশেও ব্যবসার ধরন ও প্রবণতা ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে ইন্ডাস্ট্রিগুলো তাদের কর্ম-পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে। এ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিজিটাল দক্ষতা এবং সেই দক্ষতার ওপর ভর করে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সক্ষমতা।
প্রশ্ন : ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে যদি তার প্রবৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হয় তাহলে কী করতে হবে?
উত্তর : বাংলাদেশ যদি তার প্রবৃদ্ধি এবং সামনের দিকে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হয় সেই প্রচেষ্টার সফলতা নির্ভর করবে তিনটি বিষয়ের ওপর। প্রথমত এ দেশের বিপুলসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল জ্ঞান ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। দ্বিতীয়ত দেশে আইসিটির আরও বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে; যাতে তারা বাংলাদেশের জন্য নতুন নতুন কাস্টমাইজড এপ্লিকেশনের তৈরি করতে পারে। তৃতীয়ত, বিশ্বের সঙ্গে তাল রেখে আইসিটি শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে; যাতে বিশ্বের চাকরির বাজারে তরুণরা পিছিয়ে না পড়ে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : যদি আমরা তরুণ প্রজন্মকে আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত করতে চাই, তাহলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে শিক্ষার ওপর। তরুণরা যখন ডিজিটাল জ্ঞান, দক্ষতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারে তখন দক্ষ এবং কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি হবে। এরাই পরবর্তীতে দেশের উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করবে। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি কর্ম-পরিকল্পনা জরুরি।
প্রশ্ন : বৈশ্বিক করোনা মহামারি পরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ কী, এটা মোকাবেলায় হুয়াওয়ের করণীয় কী?
উত্তর : বৈশ্বিক মহামারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। পর্যাপ্ত ডিজিটাল সরঞ্জাম না থাকার কারণে অনেক তরুণ শিক্ষার্থী বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা পিছিয়ে পড়ছে। এতে ডিজিটাল বৈষম্য বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে হুয়াওয়ের জায়গা থেকে আমরা কিছুটা কাজ করার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশে করোনার শুরু থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় হুয়াওয়ে পিছিয়ে পড়া স্কুল শিক্ষার্থীদের অনলাইনে শিক্ষা চালিয়ে যেতে ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করেছে।
অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের জন্য এ চ্যলেঞ্জিং সময়েও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশ আইসিটি স্কিল কম্পিটিশন আয়োজন করেছে। যেখানে অংশগ্রহণকারীরা হুয়াওয়ে আইসিটি একাডেমির অসংখ্য অ্যাডভান্সড কোর্স সম্পন্ন করেছে। তারা এখানে থিওরিটিক্যাল এবং প্র্যাকটিক্যাল দুইভাবেই একটা লার্নিং প্রসেস দিয়ে এগিয়েছে। এখানে তাদের ইনোভেশন টেকনোলজি অ্যাপ্লিকেশন ও প্রোগ্রাম ডিজাইনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কোর্সগুলো ডিজাইন করা হয়েছে। পাশাপাশি, নেটওয়ার্ক সুইচিং, রাউটিং, বিগ ডাটা, এআই ও ক্লাউডের (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) মতো বিষয়গুলো সম্পর্কেও অংশগ্রহণকারীদের ধারণা দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন : হুয়াওয়ের জনপ্রিয় সিডস ফর দ্য ফিউচার প্রোগ্রাম সম্পর্কে কিছু বলেন?
উত্তর : গত সাত বছর থেকে বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য হুয়াওয়ে সিডস ফর দ্য ফিউচার নামে একটা প্রোগ্রাম চালু রেখেছে। এই প্রোগ্রামে আমাদের ছেলেমেয়েরা আরও ১২৯টা দেশের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একটি কমন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবার সুযোগ পাচ্ছে। চীনে হুয়াওয়ের ল্যাবে নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ারদের কাছ থেকে সরাসরি অনেক কিছু জানতে পারছে। এ প্রোগ্রামে তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাকে উস্কে দেওয়া হয়।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য হুয়াওয়ের নতুন কোন চিন্তা-ভাবনা আছে কি?
উত্তর : বাংলাদেশে তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিটি একাডেমি নামে আরও একটি গ্রোগ্রাম চালু করতে যাচ্ছে হুয়াওয়ে। বুয়েটের সঙ্গে আমাদের এরমধ্যেই চুক্তি হয়েছে। খুব শীঘ্রই এটি চালু হয়ে যাবে।
আসলে তরুণদের আইসিটি ক্ষেত্রে বিকশিত করতে বৃহত্তর পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। হুয়াওয়ে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এ লক্ষ্যে বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের বিস্তারে ১০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। অন্যদিকে ২০২৬ সালের মধ্যে এক লাখ তরুণকে ডিজিটাল ও আইসিটি খাতের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হুয়াওয়ে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫-২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। জনমিতিক লভ্যাংশকে পুঁজি করে বাংলাদেশকে বর্তমান উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য উপযুক্তভাবে তৈরি করতে হবে। আর হুয়াওয়ে বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশের জন্য কাজ করে যাবে।
মন্তব্য করুন