শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১

শিশু জন্মের পরেই মারা গেলে নাম রাখতে হবে?

প্রবাহ বাংলা নিউজ
  ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে অসংখ্য অগনিত নেয়ামত দিয়েছেন। মানুষের পক্ষে আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত গুণে শেষ করা সম্ভব নয়। আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম ও শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলো সন্তান। পবিত্র কোরআনে সন্তানকে জীবনের ঐশ্বর্য বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে নিজের ইচ্ছেমতো ছেলে সন্তান অথবা মেয়ে দান করেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—

لِلهِ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ   يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ اِنَاثًا وَّ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ الذُّكُوْرَ،اَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَّ اِنَاثًا  وَ يَجْعَلُ مَنْ يَّشَآءُ عَقِيْمًا  اِنَّهٗ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদের দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই। আর যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। তিনি নিশ্চয়ই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (সূরা শূরা, আয়াত : ৪৯-৫০)

সন্তানকে সুশিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলা মা-বাবার দায়িত্ব। সুসন্তান জন্ম দিলে তারা মা-বাবার  মৃত্যু ও পরকালে উপকারে আসবেন। রাসূল সা. বলেছেন, ‘যখন কোনো মানুষ মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন ধরনের আমল জারি থাকে। এক. সদকায়ে জারিয়া (চলমান পুণ্য। দুই. ওই জ্ঞান, যার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হয়। তিন. সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩৬৫১)

অর্থাৎ নেক সন্তান মা-বাবার শ্রেষ্ঠ অর্জনগুলোর একটি। তবে সন্তানকে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে মা-বাবাকে প্রথম থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

পৃথিবীর সবকিছু আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাতে পরিচালিত হয়। অনেক সময় সন্তান জন্মের পরই মারা যায়। মা-বাবার জন্য সন্তান পেয়েই হারিয়ে ফেলাটা কষ্টের। তবে যারা এমন মুহূর্তেও ধৈর্যধারণ করতে পারেন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখেন তাদের জন্য জান্নাতে রয়েছে বায়তুল হামদ নামক বিশেষ এক পুরস্কার।

এক হাদিসে এসেছে, হজরত আবু মুসা আশআরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যখন কারও সন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করে ফেলেছ?’ তারা বলেন, ‘হ্যাঁ’।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তার কলিজার টুকরার জান কবজ করে ফেলেছ?’ তারা বলেন, ‘হ্যাঁ’। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমার বান্দা কি বলেছে?’ তারা বলেন, ‘আপনার বান্দা এই বিপদেও ধৈর্য ধারণ করে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়েছে।’

তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমার এই বান্দার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ কর এবং তার নামকরণ কর ‘বাইতুল হামদ’, অর্থাৎ, প্রশংসার ঘর।’ (তিরমিজি সূত্রে রিয়াজুস সালেহিন : ১৩৯৫)

তাই কারো সন্তান মারা গেলে এতে হা-হুতাশ না করে ধৈর্যধারণ করা সবার জন্য জরুরি। আর কারো শিশু জন্ম নিয়েই মারা গেলে হাদিসে তার নাম রাখার কথা বলা হয়েছে। রাসূল সা. ইরশাদ করেন,

إِذَا ‌اسْتَهَلَّ ‌الصَّبِيُّ، ‌صُلِّيَ ‌عَلَيْهِ ‌وَوُرِثَ

‘শিশু (ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর) চিৎকার করলে (অতঃপর মারা গেলে) তার জানাযা পড়তে হবে এবং তার উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৫০৮)

এই মৃত শিশুকে সাধারণ মৃতের মতোই গোসল ও কাফন দিতে হবে এবং জানাযার নামাজ পড়ে দাফন করতে হবে।

আর যদি বাচ্চা মৃত ভূমিষ্ঠ হয় তাহলে তার জানাজা পড়তে হবে না। তবে তাকে গোসল দিয়ে একটি পরিষ্কার কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করে দিতে হবে। অবশ্য এধরনের বাচ্চাকে চাইলে তিন কাপড়েও কাফন দিতে পারবে। আর এ শিশুরও একটি নাম রেখে দিতে হবে।

(ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৯; জামিউ আহকামিস সিগার ১/৪২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২০৪, ২২,২২৮)

মন্তব্য করুন