বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কুলুপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করা সুন্নত!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১১
ছবি-সংগৃহীত

প্রশ্ন: পুরুষ মানুষের প্রস্রাব করার পর টিস্যু না নিয়ে শুধু পানি নিলে নামাজ পড়লে নামাজ হবে কিনা? আমি প্রস্রাব করার পর টিস্যু নিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পর পানি নিতে বসলে আবারো প্রস্রাব হয়, তখন আমি শুধু পানি ব্যবহার করি। এক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হবে কি না? হলে করণীয় কি?

উত্তর: আসলে এ ক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো পবিত্রতা। হোক সেটা শুধু টিস্যু বা পানি ব্যবাহারের মাধ্যমে, অথবা উভয়টি ব্যবহারের মাধ্যমে। প্রস্রাব থেকে দ্রুত পাক হওয়া অনেক ক্ষেত্রেই নির্ভর করে মানুষের শারীরিক গঠন, আবহাওয়া এবং প্রকৃতির ওপর। কাজেই যেভাবে পরিস্কার করলে প্রস্রাব থেকে পাক হওয়া যাবে সেভাবেই করতে হবে। তবে টিস্যু বা ঢিলা কুলুপ এবং পানি উভয়টি ব্যবহার করা অধিক পবিত্রতা হিসেবে গণ্য হবে।

কুলুপ নিয়ে হাঁটা হাঁটি করাকে অনেকে সুন্নত মনে করেন। আসলে সেটা বিধিবদ্ধ কোনো সুন্নত নয়। বরং এই পদ্ধতি পবিত্রতা অর্জনে সহায়কের ভূমিকা রাখে বিধায় এটি উল্লেখ করা হয়।

কুলুপ এবং পানি ব্যবহারের পরও যদি বাস্তবেই কিছুটা প্রস্রাব বের হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি প্রস্রাব এবং অজু করার মাঝে অন্তত ৪/৫ মিনিট সময় বিলম্ব করতে পারেন। নামাজের ঠিক পূর্ব মূহুর্তে ইস্তিঞ্জা করা থেকে বিরত থাকুন। বাসায় ইস্তিঞ্জা করে মসজিদে গিয়ে ওজু করুন। যদি কিছুটা প্রস্রাব বের হওয়ার থাকে তাহলে এই সময়ের মধ্যে বের হয়ে যাবে। আর সেটা যদি বের হয়ে প্রস্রাবের রাস্তার বাইরে না আসে এবং কাপড়ে না লাগে তাহলে সেটা নামাজ আদায়ে কোনো সমস্য সৃষ্টি করবে না।

সম্ভব হলে শুধু নামাজের জন্য আলাদা লুঙ্গি বা সেলোয়ার ব্যবহার করতে পারেন। নামাজ শেষে সেটা পরিবর্তন করে ফেলবেন। এতে মনের সংশয় অনেকাংশে কেটে যাবে।

অনেক মানুষকে বলতে শোনা যায়, ঢিলা-কুলুখ নিয়ে চল্লিশ কদম হাঁটতে হয়। এমনকি অনেককে এভাবে গুণে গুণে চল্লিশ কদম হাঁটতেও দেখা যায়। এটি একটি ভুল ধারণা। প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষে শালীনতা বজায় রেখে একটু হাঁটাহাঁটির বিষয় থাকলেও ৪০ সংখ্যার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

হাদিস শরীফে প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জনের বিষয়ে জোর তাকিদ এসেছে।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা অথবা মক্কার এক বাগানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তখন দুই ব্যক্তির আওয়াজ শুনতে পেলেন, যাদেরকে কবরে আজাব দেওয়া হচ্ছে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তাদের আজাব হচ্ছে। (এমন) বড় কোনো কারণে আজাব হচ্ছে না, (যা থেকে বাঁচা খুব কঠিন)।

এরপর বললেন, হাঁ, (তবে তাদের বড় গুনাহ)- তাদের একজন প্রস্রাব থেকে ‘ইস্তিবরা’ করত না, আরেকজন পরনিন্দা করত। (সুনানে নাসায়ী, হাদিস ২০৬৮, ২০৬৯)

হাদিস শরীফে প্রস্রাব থেকে ইস্তিবরা তথা পবিত্র থাকা এবং পবিত্রতা অর্জন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার একটি স্তর এটাও, যাকে ফিকহের কিতাবে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে-

ইস্তিবরা হল প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য প্রত্যেকের অভ্যাস অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেমন, এতটুকু হাঁটা-হাঁটি, গলা খাকারি ইত্যাদি করা যে, পরে আবার প্রস্রাবের ফোঁটা আসার সম্ভাবনা না থাকে। (আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যা আলকুওয়ায়তিয়্যা, খ. ৪, পৃ. ১১৩;  রদ্দুল মুহতার, খ. ১, পৃ. ৫৫৮)

সুতরাং প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য যার যে পদ্ধতি অবলম্বন করার করবে; যার হাঁটা প্রয়োজন শালীনতা বজায় রেখে সেভাবে পবিত্র হবে; কিন্তু ৪০ কদম পরিমাণ হতে হবে- এমন কোনো কথা নেই।

মন্তব্য করুন