শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩২

পাখির কারণে আফ্রিকার প্রথম মসজিদের স্থান নির্বাচন করেছিলেন ইবনুল আস

আফছার হোসাইন, মিশর থেকে
  ১১ মার্চ ২০২৫, ১৮:২৭
ছবি-সংগৃহীত

মিশরে প্রাচীন রাজধানী ফুসতাত বর্তমানে ইসলামিক কায়রোর ডেড সিটিতে অবস্থিত  আফ্রিকায় স্থাপিত প্রথম মসজিদ 'অমর ইবনুল আস’। 

ইতিহাস অনুযায়ী, মসজিদটির নির্মাণস্থল একটি ঘুঘু পাখির কারণে নির্বাচিত হয়। খলিফা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাবের আদেশে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত অমর ইবনুল আস (রা.) মিশর জয় করেন। তৎকালীন মিশরের রাজধানী আলেক্সান্ডারিয়া আক্রমণের পূর্বে অমর ইবনুল আস নীল নদের পূর্ব পাশে শিবির স্থাপন করেন। একটি ঘুঘু পাখি এ সময় তার তাঁবুতে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। 

তাই তিনি সেই তাঁবুটি গুটিয়ে নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। বিজয়ী হওয়ার পর নতুন রাজধানী গড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলে তিনি সেই তাঁবুর স্থানকেই রাজধানীর কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাই নতুন শহর ফুসতাত বা মাদিনাত আল ফুসতাত (তাঁবুর শহর) নামে পরিচিতি পায়। পরে মসজিদও একই স্থানে নির্মিত হয়। এই মসজিদটির নাম দেওয়া হয় মিশরবাসীর মুক্তিদাতা হিসেবে পরিচিত হযরত অমর ইবনুল আস (রা.) এর নামে। 

 ৬৪১-৬৪২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত মসজিদটির মূল কাঠামোর  দৈর্ঘ্য ছিল যথাক্রমে ২৯ মিটার ও প্রস্থ ছিল ১৭ মিটার।  মসজিদটি নির্মাণে পাম গাছের খুঁটি, পাথর ও মাটির ইট ব্যবহার করে নিচু ছাদ আচ্ছাদিত ছিল পাম পাতায়। মেঝেতে বিছানো থাকত পাথর। মসজিদটিতে আমর ইবনুল আসের সেনাবাহিনীর নামাজ পড়ার মতো বড় ছিল। এ সময় তাতে কোনও মিনার ছিল না।

৬৭৩ সালে গভর্নর মাসলামা ইবনে মুখাল্লাদ আল আনসারি মসজিদটি পুননির্মাণ করেন। এ সময় মসজিদের চারকোণে চারটি মিনার যুক্ত করা হয়। ফলে মসজিদের আকার দ্বিগুণ হয়ে যায়। ৬৯৮ সালে গভর্নর আবদুল আজিজ ইবনে মারওয়ান পুনরায় মসজিদ সংস্কার করেন। ৭১১ সালে এতে মেহরাব যুক্ত করা হয়। ৮২৭ সালে গভর্নর আবদুল্লাহ ইবনে তাহির মসজিদের আরও সংস্কার করান।

নবম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফা আল মামুন মসজিদটি সংস্কার করেন। তিনি দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে কিছু অংশ যোগ করেন। এ সময় মসজিদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১২০ মিটার ও ১১২ মিটারে পৌঁছায়।

ফাতেমীয় যুগে মসজিদের পাঁচটি মিনার ছিল। চার কোণের চারটি ছাড়াও বাকি একটি মিনার ছিল মসজিদের প্রবেশ পথে। তবে বর্তমানে এসব মিনার নেই। এখনকার মিনার গুলো ১৮০০ সালে মুরাদ বে নির্মাণ করেন।

এছাড়াও ফাতেমীয় খলিফা আল মুসতানসির বিল্লাহ মেহরাবে রূপার বেল্ট যুক্ত করেন। ফুসতাতে অগ্নিকাণ্ডের পর পূর্ণনির্মাণের সময় সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী তা মেহরাব থেকে বাদ দিয়েছিলেন। ১১৬৯ সালে অগ্নিকাণ্ডে ফুসতাত শহর ও মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

মিশরের উজির শাওয়ার ক্রুসেডারদের হাতে শহরের পতন ঠেকাতে আগুন দিয়েছিলেন। ক্রুসেডারদের প্রতিহত করার পর নুরউদ্দিন জঙ্গির সেনাবাহিনী এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে মসজিদটি আবারো পুননির্মাণ করেন।

১৪শ শতাব্দীতে বুরহানউদ্দিন ইব্রাহিম আল মাহালি মসজিদের সংস্কারের জন্য অর্থ দান করেন। একটি ভূমিকম্পের পর ১৩০৩ সালে আমির সালার মসজিদ সংস্কার করেন।

১৮শ শতাব্দীতে অন্যতম মামলুক নেতা মুরাদ-বে কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে মসজিদ পুননির্মাণ করেন। ১৮৭৫ সালে পুনরায় মসজিদ সংস্কার করা হয়। দ্বিতীয় আব্বাস হিলমির শাসনামলেও মসজিদটি সংস্কার করা হয়। বিগত বছরের করোনা মহামারীর সময় মিশরে অন্যান্য মসজিদে সাথে অমর ইবনুল আস মসজিদটি বন্ধ করে এর ব্যাপক সংস্কার করে পুনরায় খুলে দেওয়া হয়।

মন্তব্য করুন