গতকাল কিছুটা হট্টগোলের মধ্যে প্রকাশ্যে আসলো বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক পদ থেকে একদিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সংগঠক শ্যামলী সুলতানা জেদনী।
তিনি ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির "সংগঠক" পদ থেকে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে পদত্যাগ করলাম। গত ৭/৮ মাস ছিলো আমার জীবনের অন্যতম অভিজ্ঞতার সময়কাল। পুরো সময়জুড়ে অনেক কিছু বুঝেছি, জেনেছি , শিখেছি। নানা রকম চিন্তাভাবনার মানুষের সাথে মিশতে পারা এবং তাদের সাথে গল্প করতে পারা নিঃসন্দেহে আমার জীবনের অন্যতম অধ্যায়।
জুলাই/আগস্টের পর আর সবার মতো আমার মনেও নানা আশা-আকাঙ্ক্ষার উদয় হয়েছে যার পুরোটা জুড়ে ছিলো দেশের মানুষের জন্য কিছু করা এবং গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারার পরিবর্তন। কাজেই গণঅভ্যূত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে এর ভীতকে মজবুত করার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছি।
যখন মনে হয়েছে , হাতে সময় কম তবে কাজ অনেক; ঠিক তখনই সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে এই জায়গাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। চলমান সেমিস্টারেও বেশিরভাগ ক্লাস করার সুযোগ হয়ে ওঠে নি। তবে বিশেষ কারণে সবকিছু থেকে আজ ইস্তফা দিতে হচ্ছে।’
বিশেষ সেই কারণ কি তা অনেকে আঁচ করতে পেরেছেন আবার অনেকে প্রশ্ন তুলছেন কি এমন হলো…. যা- ই হোক, জেদনী জেদের বসে পদত্যাগ যদি করে থাকেন তবে তার সেই জেদ নিয়ে আগামীর রাজনীতিতে কম বেশী প্রশ্ন উঠবেই।
আমি শুধু বলবো,
জেদনির মতো শিক্ষার্থীদের বড় অংশ যারা এখন রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে যুক্ত তাদের কারোই যে পড়াশোনাটা বা ক্লাস করাটা একদমই হচ্ছে না সেটা কিন্তু সত্য।
জেদনির মতো অনেকে সক্রিয় সংগঠন না করলেও সেমিস্টার ড্রপ দেয়ার সংখ্যাটা দেশে এখন বেশ বড়।
এটা একটা উছিলা ও বটে।
পড়াশুনা বা ক্লাস কেনো করিস না ? পরীক্ষা কেনো দিসসিস না প্রশ্নের সবারই উত্তরে সবার উত্তরই একটা তাহলোঃ সময় কই!
কারো সময় নেই!
সবাই ব্যস্ত সমন্বয় করে, নতুন দেশ গড়তে!
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের একাংশও বেশ ফুরফুরে মেজাজে দুধের শিশুর ক্ষমতার স্বাদ গ্রহন করে বাজার ঘাটে চলাচলা ফেরা করছেন গায়ে ফু দিয়ে। তাদের চাপাতি মাস্তানের চাপাতির কোপের ভয় নাই।
ওটা শুধু সাধারন মানুষের ভয়। যারা নিয়মিত ফজরের নামাজ পড়ে উদ্যানে হাঁটতে যান তারা হাঁটতে যাবেন কিনা তা নিয়ে দশবার ভাবেন। গেলে দল পাকিয়ে দশবিশজন একসাথে জড়ো হয়ে পথ চলেন।
এমন অবস্থায় ঐ সব শিক্ষার্থী নেতাদের বাবা হওয়াটা বেশ গর্ব এবং গৌরবের। পড়াশুনা কি হচ্ছে? তা ভাববার দরকার নেই। এই পড়াশুনা দিয়ে কি আর হবে! কি এমন চাকুরি করবে? কি করলে দশজনে এমন করে ছালাম দিতো! তার চেয়ে বর্তমান স্টাটাসের মূল্যতো অনেক অনেক বেশী।
কিন্তু বাবা মাকে এমন গৌরবের জায়গায় এতিম করে জেদনী কেনো পদত্যাগের জেত ধরে ভাঙ্গা শাখায় চুপে বসলো সেটাইতো অনেকে বুঁঝে উঠতে পারছেন না।
যা হোক সবার জন্য না হলেও শতকরা ৯০ জনের জন্যই আজ অথবা কাল এই জেদনীর বলা কথাটাই প্রযোজ্য হবে কারণ শিক্ষার্থী মানে শিক্ষার্থী তালেবেআলম।
শিক্ষার্থী মানে শিক্ষা গ্রহন করে সুনিশ্চিত ভাবে সুনির্দিষ্ট পেশা বেছে নেয়া। সেই শিক্ষার জন্য দরকার শিক্ষক এবং ক্লাস রুম। যেমন রাজনীতি ও একটা পেশা, যেটা শিক্ষা গ্রহন করেই নিতে হয়।
যারা এই দুটো বিষয় কোন কারণে অবহেলা করে তাদের জন্য শিক্ষা আর অপেক্ষা করে না। শিক্ষা শিক্ষার রাস্তায় হাঁটে আর বাইরে ছিটকে পরে উনারা আর তাহারা।
পেশা এমন একটি জিনিস যা কি না দক্ষতার বাইরে কাউকে প্রেম দেয় না, প্রশান্তি দেয় না। আজকেরই একটা খবর। ৬০ লাখ দুস্থ্য পরিবার পাবে ১৫ টাকা মুল্যে ১০ কেজি চাল।
দশ কেজি চাল ৬০ লাখ মানুষকে দিতেই সরকারের লালসুতা বের হয়ে যাচ্ছে। অথচ ৬০ লাগ মানুষ যদি ৬০ হাজার মরিচ গাছ আর বেগুন গাছ লাগানোর সুযোগ পেত বা লাগাতো তবে ঐ চালের দামের চেয়ে বেশী উৎপাদনের মালিক তারা হতে পারতো। এমন সাহায্যর দরকার পড়তো না।
১০ কেজি চাল তো ৫ বেলার খাবার তারপর? তারপরের দিন? পরের মাস? পরের বছর? দরকার কর্মসংস্থান।
দরকার পেশাদারিত্ব দিয়ে করে কর্মসংস্থান তৈরি করা। এটা নির্ভর করে শিক্ষাব্যবস্থার উপর। দেশে যারা আন্দোলনের শিক্ষার্থী নেতা তাদের কি আক্ষরিক ক্ষেত্রে কোন দক্ষপেশার শিক্ষা আছে?
সেলাই মেশিন চালানোর দক্ষতা তাদের কারো নেই। তারা যে শিক্ষা গ্রহন করেছেন বা করছেন তা দিয়ে তাদেরকে অফিসার বানানো হবে বা সে রকম কিছু হবার জন্য তারা খোয়াব দেখেন কিন্তু উৎপাদক হবার জন্য তারা তৈরি নন।
নতুন দেশের জন্য দরকার উৎপাদন। দরকার খাদ্য, ঔষধ, বাসস্থান। ওটা শিক্ষার্থী নেতাদের এবং শিক্ষার্থীদের সবারই আছে।নাই শুধু দেশের চার কোটি মানুষে। ওদের সন্তানদের সাথে এই জেদনীদের ও মিল নেই। অনেক অনেক বড় বৈষম্য।
রাজনীতি এখানে শুধুই ফাঁকা বুলি। দরকার শিক্ষা। শিক্ষা শেষে যা শিখছি তা দিয়ে কাজ করে দক্ষ পেশাজীবি হওয়া।
জেদনীকে বলছি, তাই হবার চেষ্ঠা করুন। রাজনীতি যদি পেশা হিসাবে নিতে চান তবে ওটাও শিক্ষা গ্রহন করেই নিন।
ছাত্র হয়ে-ছাত্রী হয়ে, শিখাবেন কাকে? শিখবেন না শিখাবেন? রাজনীতিতে জনগন যে শিক্ষকের ও বাবা সেটা কি জানা আছে?
সোশ্যাল মিডিয়া, বাকী উল্লাহ খান, সুইজারল্যান্ড
মন্তব্য করুন