চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে শপথগ্রহণ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
এ সময় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া শাহাদাত হোসেনের শপথগ্রহণ উপলক্ষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশাজীবী নেতাসহ মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকায় গেছেন।
ডা. শাহাদাত হোসেনের একান্ত সচিব মারুফুল হক চৌধুরী জানান, শপথগ্রহণ শেষে ডা. শাহাদাত হোসেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঢাকাস্থ মাজারে যাবেন। সেখানে জেয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর মঙ্গলবার সকালে তিনি ট্রেনযোগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
চট্টগ্রামে পৌঁছানোর পর রেলস্টেশনে তিনি দলের নেতাকর্মী ও সুধীজনের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে হযরত আমানত শাহ (রা.) ও হযরত বদর শাহ (রা.) মাজারে গিয়ে জিয়ারত করবেন। এরপর তিনি লালদীঘির পাড় সংলগ্ন চসিকের সম্মেলন কক্ষে যাবেন এবং চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
মতবিনিময় শেষে চসিক ভবনে যাবেন শাহাদাত হোসেন। সেখানে দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এরপর ঐদিন বিকেলে তিনি পশ্চিম বাকলিয়া ডিসি রোডস্থ ফালাহ গাজী জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে বাবার কবর জেয়ারত করে বাসায় পৌঁছাবেন।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দিনভর গোলাগুলি, সংঘর্ষ, হামলার ঘটনার মধ্যে ভোটগ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। ঐ সময় নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করে তা বাতিল ও পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানান বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। পরে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে একই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১ অক্টোবর ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিন। এছাড়া আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরীর মেয়র নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেন। পাশাপাশি ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে নির্দেশ দেন। আদালতের রায়ের আট দিন পর ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন সচিব এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৯ আগস্ট দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের মধ্যে ছিলেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শাহাদাত হোসেন শপথ নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
অবশ্য ১৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ১৯ আগস্ট মেয়রদের অপসারণের প্রজ্ঞাপনের সংশোধন করে একটি সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে তিন নম্বর ক্রমিক বিলুপ্ত করা হয়। তিন নম্বরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন।
মন্তব্য করুন