সুস্বাদু ‘রান্না মানসিক এবং শারীরিক কাজের সমন্বয়’ (মেরি বেরি)। ভাল রান্না করতে চাইলে রাঁধুনির মানসিক সুস্থতা (পজেটিভ চিন্তা চেতনা) অপরিহার্য। রান্নার জন্য রসুঁইঘরে যতই উন্নত মানের উপকরণ ও মশলা দেন না কেন রাঁধুনির যদি ভালোমানের রান্নার মানসিকতা না থাকে তাহলে রান্না সুস্বাদু হবে না। ফলে সুস্বাদু রান্নার জন্য উপকরণ যেমন প্রয়োজন তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন রাঁধুনির মানসিকতা। প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে অংশ নেয়ায় অধিবেশনটি কার্যত ইউনূসময় হয়ে উঠেছিল।
তিনি বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে সচল করতে ড. ইউনূসের পাশে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল করতে দু’হাত ভরে অর্থ দিচ্ছে। সে অর্থ (রান্নার উপকরণ) যতই মানসম্পন্ন হোক রাঁধুনি (প্রশাসনের আমলা-কর্মকর্তা) অনুগত না হলে রান্না (কাজকর্ম) সুস্বাদু (সুচারু, গতিশীল) হবে না। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রশাসনযন্ত্রের অবস্থা হয়েছে অনেকটা সে রকম।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যতই ড. ইউনূসের পাশে থাকুক, সংস্কারের লক্ষ্যে বিদেশ থেকে যতই প্রয়োজনীয় অর্থ আনা হোক রাঁধুনির (শেখ হাসিনার অনুগত আমলা-পুলিশ-সেনাকর্মকর্তা) কারণে রান্না সুস্বাদু (প্রশাসনের কর্মতৎপরতা) হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর নানামুখি উদ্যোগ নিলেও প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণপদে কর্মরত দিল্লির অনুগত কিছু আমলা-কর্মকর্তা ও কিছু উপদেষ্টার অতি প্রগতিশীল চেতনায় কাজে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা একের পর এক বিশৃঙ্খলার কার্ড ছুঁড়ছেন আর প্রশাসনে বসে আমলারা সেখানে ঘি ঢালছেন।
সচিবালয় থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনে একই চিত্র। অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে বাংলাদেশের প্রশাসন যন্ত্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন দিল্লির তাবেদার ও হাসিনার অনুগত কর্মকর্তারা। ছাত্রলীগের কোটায় চাকরি পাওয়া আমলা ও প্রশাসনের অন্যান্য সেক্টরে কর্মরত কর্মকর্তাদের দিয়ে ড. ইউনূসের সংস্কার কার্যক্রমে সুফল মিলবে না। সফল হতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে হাসিনা অনুগতদের বিতারিত করে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বাংলাদেশপন্থী কর্মকর্তাদের বসাতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের খোলনলচে পাল্টাতে হবে। ২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমান বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টার শপথ নেয়ার পর ১৯ জন সচিবকে সরিয়ে নতুন মুখ এনেছিলেন। তিনি দৃঢ়তা দেখানোয় ২০০১ সালে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়েছেন। কিন্তু এখনো প্রশাসনের পরতে পরতে রয়ে গেছে তার অনুগত আমলা, পুলিশ, সেনাকর্মকর্তারা; যাদের বেশির ভাগই দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ ও প্রমোশন দেয়া হয়। দিল্লিতে বসে এখন শেখ হাসিনা কলকাঠি নাড়ছেন আর প্রশাসনে কর্মরত সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, সিনিয়র সচিবরা কাজ করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস অথচ প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আওয়ামী লীগের অনুগত কর্মকর্তা।
শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে নতুন করে নিয়োগ করা উপদেষ্টা, বিশেষ উপদেষ্টাদের মধ্যেও রয়েছে হাসিনা ও ভারত অনুগত ব্যক্তি। তারা দল নিরপেক্ষ ব্যক্তির বদলে নিজেদের অনুসারীদের প্রমোশন দিচ্ছেন আর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিতে নিয়োগ দিচ্ছেন। দিল্লির চেতনাধারীরা অন্তর্বর্তী সরকারের গতিশীল প্রচেষ্টাকে টেনে ধরে রেখেছেন। ডলার, অর্থনীতি, ব্যাংকিং সেক্টরে ড. ইউনূস গতি এনেছেন অথচ অন্যান্য সেক্টর রয়ে গেছে সেই আগের মতোই। বিভিন্ন পদে পছন্দের ব্যক্তিদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ রোড ট্যান্সপোট অথরিটির (বিআরটিএ) বর্তমান চেয়ারম্যানের নাম গৌতম চন্দ্র মণ্ডল। তিনি বিগত ৭ বছর ছিলেন ওবায়দুল কাদেরের পিএস। ওবায়দুল কাদেরের সব কুকর্ম, লুটতরাজ, দুর্নীতি সবকিছু করেছেন এই গৌতমের হাত দিয়ে। ওবায়দুল কাদের পালালেও সেই গৌতম অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে এখন বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব পালনে গৌমত কি ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বার্থে কাজ করবেন না ওবায়দুল কাদের তথা আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করবেন? হাজার বিলিয়ন ডলারের এই প্রশ্নের জবাব কি? শুধু এই গৌতম নয়, সিনিয়র সচিব, সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবসহ বিভিন্ন বিভাগ, কমিশন, অধিদপ্তর করপোরেশনে এখনো শেখ হাসিনার অনুসারি যাদের বেশির ভাগ ছাত্রলীগ কোটায় চাকরি পেয়েছেন এবং পতিত আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রশাসনে নিজেদের মুজিবপ্রেমী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রতিযোগিতা করেছেন; তাদের হাতেই এখনো প্রশাসনের নাটাই।
পুলিশ প্রশাসনে একই অবস্থা। সরকারের দুই দফায় বেঁধে দেয়া সময়ে যারা কাজে যোগদান করেননি; তাদের এখনো চাকরিচ্যুত করা হয়নি। পুলিশের যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও নানা অপরাধের অভিযোগ উঠেছে সে বিতর্কিতদের গ্রেফতার করা হয়নি। শুধু তাই নয় এদের অনেকে প্রশাসনের কর্মরতদের সহায়তায় ভারতে পালিয়ে যেতে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ গত দেড় মাসে ভারতে পালিয়ে যাওয়া এমন আওয়ামী লীগের নেতা-সাবেক মন্ত্রী-সাবেক এমপি, বিতর্কিত কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জনের ভিসা নবায়ন করা হয়েছে এমন খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে টানা কয়েক দফায় ক্ষমতায় গেলেও শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ দিয়ে দেশ পরিচালনা করেননি। তিনি আমলা, পুলিশ, র্যাব, অনুগত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রশাসন পরিচালনা করেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও আমলাদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। ফলে দুর্নীতি, লুটপাট করলেও আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো। তারা মন্ত্রীত্ব করেছেন কিন্তু মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানতেন না; দলের পদে ছিলেন তবে দলের কার্যক্রম সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। অবশ্য নিন্দুকেরা বলে থাকেন, শেখ হাসিনা যে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন তা দিল্লি থেকে আসতো। শেখ হাসিনা শুধু কার্যকর করতেন। শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সিনিয়র সচিব, সচিব, ডিসি, ইউএনওদের প্রতিটি ‘পাতানো নির্বাচন’ এ ব্যবহার করেছেন। পুলিশ ও র্যাব দিয়ে বিরোধী দলকে দমন করে রেখেছেন।
বিচারকদের দিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের কারগারে পাঠিয়েছেন, সাজা দিয়েছেন। সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তাকে বেসামরিক প্রশাসনে কাজে লাগিয়েছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন বাহিনীর অফিসারদের ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার পুরস্কার হিসেবে ওই সব আমলা-কর্মকর্তাদের নানাভাবে পুরস্কৃত করেছেন। সচিব পদে ৬৫টি থাকলে ওই পদে নিয়োগ দেন ৭৪ জন। ২১২টি অতিরিক্ত সচিব পদের বিপরীতে নিয়োগ দেন ৪১৫ জন, যুগ্মসচিবের পদ ৫০২টি অথচ এ পদে কর্মকর্তার সংখ্যা ১ হাজার ১৬৭ জন। এই যে পদের চেয়ে অতিরিক্ত আমলা নিয়োগ দেয়া হয় কার্যত তাদের খুশি রেখে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে। শেখ হাসিনা পালালেও ওই কর্মকর্তারা এখনো প্রশাসনে বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন।
বেশির ভাগই গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে প্রশাসনে যাদের পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি, বদলি, পদের রদবদল করছেন তাদের প্রায় সবাই ওই আওয়ামী লীগ ও দিল্লির অনুগত কর্মকর্তা। বর্তমানে উপদেষ্টা পদে এবং বিশেষ বিশেষ পদে যাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা হয় আওয়ামী লীগের অনুগত ছিলেন, নয়তো অতীতে ভারতের এজেন্ট ছিলেন। ফলে বর্তমানে জনপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দু’চার জন দলনিরপেক্ষ কর্মকর্তা থাকলেও তারা কার্যত মেরুদণ্ডহীন। উপরের পদে বসে থাকা দিল্লি অনুগত উপদেষ্টা-কর্মকর্তাদের আদেশ নির্দেশ পালন করা ছাড়া স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ এবং বিচারবুদ্ধি করে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বক্ষমতা তাদের নেই।
প্রশাসনের কর্মতৎপরতায় দেখা যাচ্ছে ‘পুরনো বোতলে নতুন মদ’ প্রবাদের মতোই হাসিনার সাজানো প্রশাসনে ড. ইউনূস বসেছেন। তিনি যাদের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দিয়েছেন তাদের বেশির ভাগই হয় এনজিও নয়তো দিল্লি অনুগত হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া দেশের কিছু মিডিয়া এখনো দিল্লির তাবেদার হিসেবে পলাতক শেখ হাসিনার প্রতি অনুগত রয়ে গেছে। ওই গণমাধ্যমগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্যের চেয়ে পতিত হাসিনার সুবিধা হয় এমন খবর বেশি প্রচারে ব্যস্ত। অনেকেই বলছেন, প্রায় অর্ধশত দিনের অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনীতি, ব্যাংকিং সেক্টর, গ্রার্মেন্টসসহ কিছু সাফল্য দেখালেও প্রশাসনে কার্যত গতি ফিরেনি। শুধু তাই নয় কিছু উপদেষ্টার কথাবার্তা ও কর্মতৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রখ্যাত ইউটিউবার ডা. পিনাকি ভট্টাচার্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ড. ইউনূসের সাফল্যে দেশ উপকৃত হবে। তার ব্যর্থতা দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে।’ তিনি ড. ইউনূসকে সতর্ক করে দিয়ে আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত ও ‘র’ এখনো তৎপর। তারা ধীরস্থির ভাবে শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসনে কাজ করছে। কাজেই অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কাজ করতে হবে। মু্িক্তযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণ ছিল না। ফলে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নেয়ায় শেখ মুজিব বিপ্লবকে ধারণ করেননি। সে কারণে মুজিবকে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। ড. ইউনূস দ্বিতীয় স্বাধীনতার বিপ্লবের মহানায়ক নন।
ফলে আপনাকে (ড. ইউনূস) দ্বিতীয় বিপ্লবের মর্মকথা বুঝতে হবে, হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। নাহলে আপনাকেও স্বৈরশাসকের পরিণতি ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, জিয়াকে হত্যার পর ঠাণ্ডা মাথায় এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন। সে সময় বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে এরশাদের ক্ষমতা দখল মানুষ ভালভাবে নেয়নি। কিন্তু ভারতের ‘র’ বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ডা. এম এ মতিনকে হাত করে নেন। ফলে বিএনপির দুর্বল হয়ে গেলে ঠাণ্ডা মাথায় ছক কষে এরশাদকে ক্ষমতায় বসানো হয়। ২০০৯ সাল থেকে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে সবগুলো ভারতের ছক অনুযায়ী হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন দিল্লির ছক অনুযায়ী হয়েছে এবং তারাই নিজেদের অনুগত একদলকে (আওয়ামী লীগ) সরকারে অন্য দলকে (জাতীয় পার্টি) বিরোধী দলে বসিয়েছেন। অতপর আপনার (ড. ইউনূস) উপদেষ্টাদের অনেকেই দিল্লির তাবেদার এবং দেশের দিল্লির অনুগত গণমাধ্যমের অনুসারী।
তারা ওয়ান ইলেভেনের পট পরিবর্তনে দিল্লির পুতুল হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমান প্রশাসনে যা কিছু হচ্ছে, সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে তার বেশির ভাগই ভাল লক্ষণ নয়, জনগণের পক্ষে নয়। উপদেষ্টা পরিষদে কার্যত কালোছায়া পড়ে গেছে। দিল্লির অনুগতদের দিয়ে প্রশাসন চালিয়ে আপনি নিরাপদ থাকতে চান! আন্তর্জাতিক মহল যতই আপনার পাশে থাকুক দিল্লির অনুগতদের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে সফল হতে পারবেন না। প্রেসিডেন্ট পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে রেখে আপনি নিরাপদে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করবেন? প্রেসিডেন্ট পদে থাকা ওই ব্যক্তি আপনার জন্য নিরাপদ নয়---।’
তবে পিনাকি ভট্টাচার্য স্মরণ করিয়ে দেন যে, ১৯৯৬ সালের আন্দোলনের সময় মে মাসে ঢাকায় সৈন্য এনে বঙ্গভবন ঘেরাও করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলেন সে সময়কার সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) আবু সালেহ মো. নাসিম। প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ্বাস নবম পদাতিক ডিভিশনের তৎকালীন প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান চৌধুরী বীর বিক্রমকে দিয়ে সে অপচেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন’। আবদুর রহমান বিশ্বাসের মতোই দৃঢ়তা নিয়ে ড. ইউনূসকে সরকার পরিচালনার পরামর্শ দেন।
মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী বলেছেন, ‘পিন্ডির গোলামীর জিঞ্জির ছিন্ন করেছি দিল্লির দাসত্ব মানি না মানবো না’। দিল্লির নাচের পুতুল শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত করলেও দিল্লির তাবেদারগণ এখনো প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়ে গেছে। দিল্লিতে বৃষ্টি হলেই এরা ঢাকায় বসে মাথায় ছাতা ধরেন। হাসিনা দিল্লিতে পালিয়ে থেকে প্রশাসনে কর্মরত অনুগত আমলাদের ব্যবহার করেই জুডিশিয়াল ক্যু, ১৫ আগস্ট ঢাকায় ১০ লাখ লোকের সমাবেশ করার ঘোষণা, আনসারদের দিয়ে সবিচালয় ঘেড়াও, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুয়া প্রচারণা, গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা এমনকি পার্বত্য জেলাগুলোতে অশান্তির চেষ্টা করেন।
অতএব বিশিষ্টজনেরা বলছেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ড. ইউনূসকে সততা, মানবিকতা, নীতিনিষ্ঠতা দিয়েই সরকার পরিচালনা করলেই হবে না তাকে আরো কঠোর হতে হবে।
মন্তব্য করুন