বাকস্বাধীনতা ও তথ্যের অবাধ অভিগম্যতা নিশ্চিতের মাধ্যমে স্বপ্নের 'নতুন বাংলাদেশ' বিনির্মাণে অপরিহার্য হিসেবে তথ্য কমিশনকে দলীয়করণের সংস্কৃতি থেকে রক্ষা করে আমূল সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস ২০২৪ উপলক্ষে গণমাধ্যমে প্রেরিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, অতীতের তথ্য গোপনীয়তার সংস্কৃতি যেন কোনোভাবেই আর চর্চায় ফিরে না আসে, তথ্য অধিকারের সুফল জনগণ যেন বাস্তবিক অর্থেই পায়। সার্বজনীন তথ্য অধিকার, প্রবেশগম্যতা ও জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তথ্য অধিকার আইনের যুগোপযোগী সংশোধনসহ ১৩ দফা সুপারিশও করা হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নজিরবিহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে এদেশের অজেয় ছাত্র-তরুণ প্রজন্ম আপামর জনগণের মাঝে ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের অভূতপূর্ব প্রত্যয় সঞ্চারিত করেছে। ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর বহুমাত্রিক অভীষ্টের অন্যতম বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতের অধিকার, যার অপরিহার্য উপাদান অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও তথ্যে অভিগম্যতা। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ—সেই প্রত্যয়েরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অপচেষ্টার অন্যতম হাতিয়ার ছিলো একদিকে বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমত দমন ও অন্যদিকে নিরেট মিথ্যাচার এবং তথ্যব্যবস্থাপনা ও প্রবাহকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করা। টিআইবি বিশ্বাস করে, বাকস্বাধীনতা ও তথ্যের অবাধ অভিগম্যতা নিশ্চিতের মাধ্যমে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে উদ্যোগী হবে ।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘আইনগত প্রক্রিয়ায় তথ্য চাওয়ার কারণে হামলা-মামলা ও বিভিন্ন হয়রানি এমনকি জীবনের নিরাপত্তার ঝুঁকির শিকার হওয়াকে স্বাভাবিকতায় পরিণত করা হয়েছে। গোপনীয়তার সংস্কৃতি বর্জন করে স্বচ্ছতার চর্চা নিশ্চিতের অন্যতম উপায় হিসেবে তথ্য অধিকার আইনের যুগোপযোগী সংস্কার ও দলীয় প্রভাবমুক্ত তথ্য কমিশন গঠন করতে অনতিবিলম্বে অগ্রসর হতে হবে।’
সার্বজনীন তথ্য অধিকার, প্রবেশগম্যতা ও জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে টিআইবির ১৩ দফা সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে— বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতের অধিকার নিশ্চিতের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন, সকল আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের মত কালো আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট জনগণের ওপর ডিজিটাল নজরদারি কাঠামো নিশ্চিহ্ন করা; তথ্য কমিশনকে অধিকতর কার্যকর করার স্বার্থে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যোগ্য ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিদের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ প্রদানসহ এই সংস্থাটিকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজানো, তথ্যপ্রকাশ ও তথ্যে অভিগম্যতার সুবিধার্থে ডিজিটাল টুলসের ব্যবহার সহজলভ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর পরিপন্থি’ বিদ্যমান আইনসমূহ সংস্কার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাতিল করা; নতুন কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকারের মূল চেতনার পরিপন্থি বা আইনটির কার্যকর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো ধারা যাতে সংযোজিত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা; তথ্য অধিকার আইনে তথ্য প্রাপ্তির জন্যে প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
মন্তব্য করুন