বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ভালো মানুষের সন্ধানে

ড. কামরুল হাসান মামুন
  ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:১৮

‘আওয়ামী লীগের সব সংগঠন ধসে গেছে। কেউ যদি মনে করে যে আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসবে, সেটা একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগ যেভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিল, এখন আওয়ামী লীগও সেভাবে শেষ হয়ে গেছে।

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান ছিল বায়ান্ন সাল থেকে এখন পর্যন্ত সংঘটিত অভ্যুত্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক, গভীর ও আক্রমণাত্মক! এর কারণ ১৫ বছরে জনগণের ওপর এমন অত্যাচার, নির্যাতন করেছে, যার কোনো পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই। নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল, কিন্তু বিক্ষোভের সুযোগ ছিল না।’

১৯ অক্টোবর ২০২৪, প্রেসক্লাবে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান: জনগণের হাতে ক্ষমতা চাই, জনগণের সরকার–সংবিধান–রাষ্ট্র চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বদরুদ্দীন উমর তার বক্তব্যে এইসব কথা বলেন।

আমি আমার মডেল দিয়ে অনেকবার লিখেছিলাম যে, আওয়ামী লীগ যেই পরিমাণ গুম, খুন, অত্যাচার, পাচার, দুঃশাসন করছে এতে দেশের মানুষের মনে ক্ষোভ শক্ত হচ্ছে এবং এক সময় এর ক্ষরণ হবে। এই ক্ষরণ ভারত, চীন ও রাশিয়া দেরি করিয়েছে কিন্তু এটা অবশ্যম্ভাবী ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ৩টি দেশের আসকারা পেয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করেছিল।

আবার দেরি হওয়াতে ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ বিস্তৃত হচ্ছিল এবং এর সাথে এই ৩ দেশের প্রতিও দেশের মানুষের ক্ষোভ জন্মেচ্ছিল। আর একই সাথে ধর্মান্ধতাও বাড়ছিল প্রবল আকারে। এই সবকিছুর পেছনে আমি আওয়াম লীগ ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের দায়ী করব। তারা সরকারকে সুপরামর্শ দেওয়ার বদলে উল্টো কুপরামর্শ দিয়েছে বিনিময়ে অনেকেই হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে।

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এতটাই বেপরোয়া ছিল যে যারাই তাকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সাহায্য করেছে তাকেই দুই হাত খুলে দুর্নীতি করার সুযোগ দিয়েছে। একই সাথে টিকে থাকার অনৈতিক সাহায্য মানে দেশে অনৈতিকতার চাষাবাদ হয়েছে। ফলে দেশ আসলে অসৎ মানুষের চাষাবাদ হয়েছে। দেশের রিজার্ভ চুরি, ব্যাংক ডাকাতি, পাচার কী না হয়েছে?

অথচ সরকার পারতো শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়িয়ে, বিশ্বমানের ইনস্টিটিউট গড়ে দেশে ভালোমানুষ তৈরির কারখানা গড়তে। সেটা এক সময় না এক সময় বড় লভ্যাংশ দিতোই দিতো। কথায় আছে অতি চালাকির গলায় দড়ি। বোকারা অতি চালাক হয় এবং শেষ বিচারে তার ফল কখনোই ভালো হয় না।

এর উদাহরণ কেবল এই আওয়ামী লীগ না। এর আগের বিএনপিও সেই ফল ভোগ করেছে। এই সরকার এবং ভবিষ্যতে যে ক্ষমতায় আসবে তাদেরও এটা মনে রাখতে হবে। ইতিহাস থেকেই শিক্ষা নিতে হবে।

আমাদের দেশের অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদ বেঁচে থাকাকালীন দেশের জন্য কিছু না করে বরং দেশের ক্ষতি করে নিজের পরিবার আর সন্তানদের জন্য শত থেকে হাজার কোটি টাকার সম্পদ বানিয়ে রেখে গেছে। দুর্নীতি করে এরা না হতে পেরেছে নিজের পরিবারের কাছে সম্মানের, না হতে পেরেছে দেশের মানুষের কাছে সম্মানের।

অথচ অনেক ভালো কাজ করার সুযোগ ছিল তাদের। জীবন খুব ছোট। এই ছোট জীবনটা অতীত এবং বর্তমান অনেক মানুষের কাছে আমরা ঋণী হই। এই সামান্য বিষয়টা বুঝলে জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায় নচেৎ জীবনটা যে ষোল আনাই মিছে হয়ে যায় এটা কি কেউ বোঝে না?

ছোটবেলায় এই কবিতাটা পড়েছিলাম। কেন জানি সুকুমার রায়-এর ‘ষোল আনাই মিছে’ কবিতাটির কথা খুব করে মনে পড়ছে। নিচে তা উল্লেখ করা হলো—

“বিদ্যে বোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে,
মাঝিরে কন, ‘বলতে পারিস সূর্যি কেন ওঠে?
চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?’
বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যালফ্যালিয়ে হাসে।
বাবু বলেন, ‘সারা জীবন মরলিরে তুই খাটি,
জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি।’

খানিক বাদে কহেন বাবু, ‘বলতো দেখি ভেবে
নদীর ধারা কেমনে আসে পাহাড় থেকে নেবে?
বলতো কেন লবণ পোরা সাগর ভরা পানি?’
মাঝি সে কয়, ‘আরে মশাই অত কি আর জানি?’
বাবু বলেন, ‘এই বয়সে জানিসনেও তা কি
জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি!’

আবার ভেবে কহেন বাবু, ‘বলতো ওরে বুড়ো,
কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চুড়ো?
বলতো দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন?’
বৃদ্ধ বলে, ‘আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন?’
বাবু বলেন, ‘বলব কি আর বলব তোরে কি তা,-
দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।’

খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে,
বাবু দেখেন, নৌকাখানি ডুবলো বুঝি দুলে!
মাঝিরে কন, ‘একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি,
ডুবলো নাকি নৌকা এবার? মরব নাকি আজি?’
মাঝি শুধায়, ‘সাঁতার জানো?’- মাথা নাড়েন বাবু,
মূর্খ মাঝি বলে, ‘মশাই, এখন কেন কাবু?
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে,
তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে!”

ড. কামরুল হাসান মামুন ।। অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন