শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যরাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াফিচারশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

মাইনাস টু ফর্মুলার দিকে চলে যেতে পারে দেশ

ড. আজিজুল আম্বিয়া
  ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১৩:২৪

এরই মধ্যে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে অন্তর্বর্তী ড. ইউনূস সরকার। অনেক দেরিতে হলেও দেশ ছাড়ার পর প্রথম আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গ্রেফতার হয়েছেন। যদিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে তবুও এই সরকার ১৫ আগস্টের সরকারি ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে  ছুটি বাতিল করেছেন।

পুলিশ ও সিআইডির অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন নিয়োগ, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাউকে অবসর প্রদান এবং কেউ কেউ আবার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন। একজন সম্পাদককেও দেশের বাইরে যেতে চাইলে যেতে দেওয়া হয়নি। তাকে জানানো হয়, দেশের বাহিরে যাওয়ায় নিষেধ আছে। এই কারণে দেশ চালানোর ক্ষমতা চলে আসছে সব নতুন কর্মকর্তাদের হাতে।

দেশের অনেক থানার কাগজপত্র আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সব পুলিশরা এখনো থানায় কাজ করতে এখনো আসেন নাই। অনেকের আবার মৃত্যুও হয়েছে। তাই বলা যায় দেশ এখন অশান্ত। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপেক্ষিতে সৃষ্ট অসহযোগ আন্দোলনের ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নতুন সংগঠিত হয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী সরকার ব্যবস্থা। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক এবং সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার উজ জামান দ্বারা এই সম্পর্কে  নিশ্চিত করা হয় এবং ৮ আগস্ট শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। 

রাষ্ট্রপতি ৬ আগস্ট সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র কোন দিকে হাঁটছে বলা মুশকিল হয়ে পড়েছে কারণ ড. ইউনূস এখনো পরিষ্কার করেননি তিনি কি করতে চান। সেনাবাহিনী বলছে যতক্ষণ না তারা ভাবছেন ড. ইউনূস সরকার নিরাপদ। ততক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের সাবেক জায়গাতে ফিরে যাবেন না। তাহলে কি দেশের জনগণ ভেবে নিতে পারে না ড. ইউনূসকে সামনে রেখে সেনাবাহিনী নিজেরাই দেশ চালাচ্ছেন? 

এছাড়া আমরা দেখলাম ছাত্র আন্দোলন পর যখন দেশে একটা অস্বস্তির পরিবেশ বিরাজমান ছিল। তখন অনেকে ভেবেছিলেন যেহেতু তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাই তিনি দেশের এই ক্রান্তিকালে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবেন। কিন্তু ড. ইউনূস সেই সময়  সাথে সাথে আসেননি। হয়তো তাই জনগণকে বলতে শোনা যাচ্ছে আমেরিকার পরামর্শেই তিনি ফ্রান্স হয়ে পরে বাংলাদেশে আসেন। আর শেখ হাসিনাও ভারত থেকে বলছেন, তিনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পেছনে আমারিকার হাত রয়েছে। 

এসব কারণে আমার গবেষণাও তাই বলে বর্তমানে বাংলাদেশে ড. ইউনূসকে সামনে রেখে পেছন থেকে সেনাবাহিনী দেশ চালাচ্ছে।  আর শেখ  হাসিনা তার বক্তব্যে অভিযোগ এনেছেন, আমেরিকাকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ব্যবহার করার প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে  তাকে তারা ক্ষমতাচ্যুত করেছে। এজন্য উনাকে ভারতে যেতে হয়েছে। ড. ইউনূসের দেশে ফেরার পর কথিত এক ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূসের বাংলাদেশ নিয়ে কেউ মাথা ঘামালে ভারতের সেভেন সিস্টার এর শান্তি বিনষ্টের  হুমকি অনেকটা স্পষ্ট করে দিয়েছে এই বিষয়কে। ড.ইউনূস এত শক্তি নিয়ে কীভাবে এরকম বলে দিতে পারলেন এটা আমেরিকার শক্তি ছাড়া বলা সম্ভব নয় একথা অনেকে মনে করছেন।

আর গবেষণাও তাই বলে। যদি এ কথা সঠিক হয় তবে ভবিষ্যতে হয়তো আমাদের তাই দেখতে হবে। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, এই সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আজকে বিএনপির সমালোচনা করতে গিয়ে  বলেন, লন্ডন থেকে ফোন আসলেই  কি আপনি নেতা হয়ে গেলেন নাকি? কিংবা আগামীতে মন্ত্রী হয়ে যাবেন ভাবছেন? এদিকে শেখ হাসিনাও ভারতে আছেন এবং তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। 

এদিকে বেগম খালেদা জিয়াও অসুস্থ। তাকে হয়তো আগামী নির্বাচনে অসুস্থতা দেখিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা হতে পারে। তাই এখন জনগণের প্রশ্ন তবে কি সেই পূর্বের সেনা সরকারের মতো মাইনাস টু ফর্মুলার দিকে দেশ এগুচ্ছে? সঙ্গত কারণে বলা যায়,  এই প্রশ্নও এখন অবান্তর নয়। বিদেশের ঋণ ও সহযোগিতা নিয়ে নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টাওয়ারসহ অনেক উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছেন বিগত দিনে। 

 এসব কারণে সবাদপত্রের মাধ্যমে জানা যায়, দেশের ভেতরের ও বাহিরের রাষ্ট্রের মোট ঋণ রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ কোটি টাকা। তাই এই বিশাল ঋণ শোধ করার মতো আমানত বাংলাদেশের নেই। দেশের সকল জনগণের টাকা একসাথে সরকারকে দিয়ে দিলেও এই ঋণ শেষ করা যাবে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন আওয়ামী লীগ এর সমর্থক ব্যবসায়ী ও নেতাকর্মীর টাকা ফ্রিজ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এছাড়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ীদের যে বিনিয়োগ রয়েছে তাতে অনেক জায়গায় আগুন জ্বলেছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অনেক ভাঙচুর করা হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে ব্যবসায়ী নেতা সালমান এফ রহমান গ্রেফতার হয়েছেন এবং তার ১০ দিনের রিমান্ড ও মঞ্জুর হয়েছে। তাহলে এখন বোঝা কঠিন এই রকম ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ কতটা নিরাপদ থাকবে দেশের ভেতর।একটা সময় তারা পলাতক হলেও তাদের কাছে ব্যাংক যে  ঋণ পায় তা কে পরিশোধ করবে?  

এজন্য বলছি  প্রতিশোধ পরায়ণ না হয়ে আমাদের ভাবতে হবে দেশের জন্য। যদি দেশপ্রেম নিয়ে আমরা না চলতে পারি। তবে দেশ অনেক পিছিয়ে যেতে পারে। ড. ইউনূস অর্থনীতি ভালো বোঝেন তাই হয়তো তিনি কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারেন। এছাড়া  বিশ্বব্যাংক থেকেও কিছু টাকা ঋণ আনতে পারবেন এটা বিশ্বাস  করা যায়। আর তা কি যথেষ্ট হবে? কিন্তু সেই টাকাও তো আমাদের একদিন শোধ করতে হবে।

এছাড়া এই সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টা ছাড়া বাকি সব উপদেষ্টাদের কি দেশ চালানোর মতো খুব  অভিজ্ঞতা আছে এরকম অনেক প্রশ্ন এখন মানুষের মনের ভিতরে ঘুরপাক খাচ্ছে। এছাড়া ছাত্ররা হলো জাতির ভবিষ্যৎ কিন্তু তারা যদি ক্ষমতা আর টাকাপয়সা এই দুইটাই খুব সহজে পেয়ে যায় তবে কি তাদের স্বাভাবিক পড়ালেখা ব্যাহত হবে না? এর নিশ্চয়তা কে দেবে? 

তাছাড়া তারা আন্দোলন করে একটা সরকারের পতন করেছেন ভালো কথা। এখন তো তারা ঘরে ফিরে গিয়ে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করার কথা কিন্তু তারা এখনো রাস্তায় ট্রাফিকের কাজ করছেন, রাজপথে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। যুক্তি আছে আবার যদি তারা মনে করতেন এই সরকার কোনো অনিয়ম করছে তখন হয়তো তারা আবার ভূমিকা রাখার দরকার হতো। দেশে সব কাজ এখন চলতে শুরু করেছে। তাদেরই মনোনীত একটা সরকার আছে।  

অথচ তারা এখনো তাদের পড়ালেখা নিয়ে ভাবছেন না। তাহলে কি এই সময় যে যাচ্ছে তাতে কি তাদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে না?  তাই অনেক সচেতন অভিভাবক ও সুশীলরা চিন্তায় আছেন, আমাদের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা কি কোন ব্যক্তি কিংবা কোন অশুভ শক্তির দ্বারা ব্যবহার হচ্ছে বা হতে পারে? বোধ জাগ্রত হোক দেশের সকল অভিভাবকদের। 

সময় থাকতে যাতে আমরা এ বিষয়ে নিজেদের সচেতন করে তুলতে পারি। পরিশেষে বলব এই সরকারকে কাজ করে প্রমাণ করতে হবে তারা কারো মনের আশা পূরণ করার জন্য ক্ষমতায় আসেন নাই। তবেই হয়তো জনগণ তাদের সম্মানের জায়গাতে স্থান দিতে কৃপণতা করবে না।

ড. আজিজুল আম্বিয়া, লেখক ও কলামিস্ট। email:azizul.ambya2yahoo.co.uk. 

মন্তব্য করুন