শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যরাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াফিচারশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

একদিনে দুই সাফল্য

স্পেনের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা

রহমান মৃধা|
  ১৭ জুলাই ২০২৪, ০১:০৩ | GMT +6
ছবি- সংগৃহীত

আজকের দিনটি ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে, কারণ স্পেন একই দিনে টেনিস এবং ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশকে বিরল গৌরবে আচ্ছাদিত করেছে। একদিকে যখন টেনিস কোর্টে স্পেনের লাল-হলুদ পতাকা উড়ছিল, অন্যদিকে ফুটবল মাঠেও একই পতাকা উচ্চে তোলা হচ্ছিল। এই দৃষ্টান্তমূলক অর্জন স্পেনের জনগণের জন্য এক বিশাল আনন্দের উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সেই সঙ্গে আমি নিজেই যুক্ত হয়ে মুক্ত মনে উপভোগ করছি কার্লোস আলকারাসের মতো একজন চ্যাম্পিয়নকে নোভাকের মতো এক অসাধারণ টেনিস খেলোয়াড়কে পরাজিত করতে দেখা এবং তারপর স্প্যানিশদের সঙ্গে বসে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের স্বর্ণপদক জয় উদযাপন করা, কী অসাধারণ একটি রবিবার। চারদিকে সুগন্ধি, এত কম সময়ের মধ্যে এত পুরুষ ও নারীকে কখনো আলিঙ্গন ও গালে চুমু এর আগে কখনও খাইনি।

টেনিস কোর্টে কার্লোস আলকারাসের বিজয় স্পেনের জন্য এক বিশাল সাফল্য। তরুণ বয়সেই আলকারাস নিজেকে বিশ্বমানের খেলোয়াড় হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তার দৃঢ়তা, কঠোর পরিশ্রম, এবং অবিশ্বাস্য প্রতিভা স্পেনকে এনে দিয়েছে টেনিসের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। তার এই অর্জন কেবল স্পেনের জন্য নয় বরং সারা বিশ্বের টেনিস প্রেমীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস।

ফুটবলে স্পেন ইউরোপের সেরা হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। কঠোর পরিশ্রম, দলগত প্রচেষ্টা এবং দেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসা তাদের এই সাফল্যের মূলমন্ত্র। ফুটবল মাঠে তাদের প্রতিটি খেলার ধরণ, কৌশল এবং মনোবল দেখিয়েছে যে কীভাবে একটি দেশ ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে।

এবারের আয়োজনে যে বেশি চমক লাগিয়েছে গোটা বিশ্বে সে এক নতুন নাম লামিনে ইয়ামাল, বয়স মাত্র ১৭। ছেলেটির জন্ম স্পেনে, কিন্তু ওর মা ইকোটোরিয়াল গিনির আর বাবা মরোক্কোর। বসবাস স্পেনে। অনেকে ইয়ামালকে জানতে খুঁজতে শুরু করেছে তার রুট। অনেকে জীবনে এর আগে ইকোটোরিয়াল গিনি দেশটার নামই শুনেনি, এখন সেটাও মুখস্ত হয়ে যাবে। আমি রীতিমত ম্যাপ খুলে দেখলাম সেন্ট্রাল আফ্রিকার ওয়েস্ট কোস্টে ছোট্ট একটি দেশ। হঠাৎ কেন এই দেশটি খুঁজলাম? কেননা কয়েকদিন আগে ফ্রান্সকে হারিয়ে স্পেন যে ফাইনালে গেল, তার পেছনে স্পেনের এই সতেরো বছরের বালকও জড়িত এবং সে ফুটবল ওয়ার্ল্ডে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে।

সে তার প্রতিভার গুণে মাত্র ১৬+ বয়সে স্পেনের জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছে এবং আবির্ভাবেই ইউরো কাপ মাতিয়ে দিয়েছে।
আমাদের ইউরোপের নানা খবরে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে, যেমন প্যারিসের সাঁ-জা ক্লাব নাকি তাকে পেতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং তার জন্য ২২৫ মিলিয়ন ইউরো দিতে রাজিও হয়েছে- এত টাকা তারা নেইমারকেও দেয়নি!

যাই হোক, স্পেনের এই সাফল্য আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়: দৃঢ়তা, কঠোর পরিশ্রম এবং জাতিগত ঐক্য কীভাবে একটি দেশকে শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে। যখন স্পেন তাদের অর্জন নিয়ে উল্লাস করছে, তখন আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ দুর্নীতির গভীরে নিমজ্জিত। এটি আমার হৃদয়কে কষ্ট দেয়, কারণ আমি জানি আমাদেরও সেই সক্ষমতা আছে যা স্পেন দেখিয়েছে। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে আছে অসম্ভব মেধা, কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা এবং প্রতিভার অভাব নেই।

আমরা কি পারি না সেই দুর্নীতির বেড়াজাল ভেঙে নতুন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে? পারি, অবশ্যই পারি। স্পেনের উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমাদেরও সেই পথ অনুসরণ করতে হবে। প্রথমে আমাদের নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। প্রত্যেকটি স্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে এবং সৎ ও ন্যায়পরায়ণতার পথে চলতে হবে।

আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে, আমরা কেন পেছনে পড়ে আছি? কারণ আমাদের মধ্যে ঐক্যের অভাব, সঠিক নেতৃত্বের অভাব, এবং দুর্নীতির বিষবাষ্প আমাদের সমাজকে গ্রাস করেছে। কিন্তু এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, শিক্ষা এবং নৈতিকতার পথে চলা।

আমাদের দেশের যুব সমাজের কাছে আমার আহ্বান: এসো আমরা একসঙ্গে হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করি। আমরা আমাদের প্রতিভা ও মেধা দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারি।

আজ স্পেন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, যদি ইচ্ছা থাকে, সংকল্প থাকে, তবে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আমরা যদি একতাবদ্ধ হতে পারি, সততা ও ন্যায়ের পথে চলতে পারি, তবে আমরাও একদিন স্পেনের মতো বিজয়ের পতাকা উড়াতে পারব।

স্পেনের একই দিনে টেনিস ও ফুটবলে জয়ী হওয়ার গৌরবময় সাফল্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে। বিশেষ করে কার্লোস আলকারাসের টেনিস কোর্টে অসাধারণ সাফল্য এবং স্পেনের ইউরোপ সেরা ফুটবল দল আমাদের দেখিয়েছে দৃঢ় সংকল্প, কঠোর পরিশ্রম এবং একতা কীভাবে একটি দেশকে শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে। আমাদের বাংলাদেশেও আছে সেই সম্ভাবনা, শুধু প্রয়োজন দৃঢ় সংকল্প, একতাবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের। ফুটবলের মাঠে যখন সবাই এক সঙ্গে গাইতে শুরু করল ‘উই আর দি চ্যাম্পিয়ন মাই ফ্রেন্ড’ তখন মনে পড়ে গেলো হৃদয়ে বাংলাদেশের কথা।

আসুন, আমরা একতাবদ্ধ হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করি এবং একটি উন্নত, গর্বিত বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]

মন্তব্য করুন