শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যরাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াফিচারশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর: আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনা ও কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা

মোহাম্মদ ছাইয়েদুল ইসলাম
  ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৩:১২

আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাই চীনে দ্বিপাক্ষিক সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফর সহযোগিতার নতুন পথ তৈরি এবং উভয় দেশের পারস্পরিক সুবিধার জন্য বিশাল সম্ভাবনা উন্মোচনের প্রতিশ্রুতি বহন করে। এই সফর শুধু একটি কূটনৈতিক সৌজন্য নয় বরং একটি কৌশলগত সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গঠন এবং বাংলাদেশ ও চীন উভয় দেশের জনগণের গভীরভাবে গৃহীত প্রত্যাশা পূরণের চাবিকাঠি।

এই সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতায় প্রাণবন্ত গতির সঞ্চার করবে এবং চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে নতুন অর্জনকে উন্নীত করবে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রতিবেশী দেশ হিসেবে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় আছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও চীন ইতিহাসের গভীরে নিহিত একটি সু-আকৃতির সম্পর্ক উপভোগ করেছে। ১৯৭৫ সালে এই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনার পর থেকে উভয় দেশের নিরন্তর প্রচেষ্টা বাংলাদেশ ও চীনকে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।

ফলস্বরূপ, চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু, উভয় দেশ একটি প্রগতিশীল এবং সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভাগ করে নেয়। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যৌথ উদ্যোগ, রেল ও সড়ক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়কে অতীতের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে উভয় দেশই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে স্থির হয়েছে। আর একুশ শতকের শুরুতে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, একে অপরের আরো বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে উঠেছে এবং উভয় দেশ একটি পারস্পরিক অংশিদ্বারিত্ব ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং বিদেশি বিনিয়োগের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস। দুই রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ৪৯ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ফলে অগণিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ হয়েছে, মূল বিষয়ে একে অপরকে সমর্থন করেছে এবং আধুনিকীকরণকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছে, যা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। বাংলাদেশের সাথে চীনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা কোন রাজনৈতিক সুবিধা বা বিশেষ কোন সুযোগ-সুবিধা দাবি করে না।

গত এক দশকে বাংলাদেশের অবকাঠামো, ডিজিটাল অর্থনীতি, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি এবং জনগণের মধ্যে আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে আরও বাস্তব ফলাফল অর্জন করেছে। বাংলাদেশ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এ যোগদানের পর গত আট বছরে উল্লেখযোগ্য ফলাফল অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ চীনের সাথে দ্বিপাক্ষিক ঐক্যের ব্যাপক প্রশংসা করে ভবিষ্যতের জন্য অনুরূপ পদক্ষেপের পরিকল্পনা থেকে কখনো পিছপা হয়নি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক জীবনে চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছিলেন। তিনি একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ১৯৫২ সালে চীনে যান। এই সফরের সময় তিনি চীনা বিপ্লবের সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মাও সেতুং এবং ঝোউ এনলাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধু চীনের আধুনিকায়ন ও অগ্রগতি দেখে গভীরভাবে বিস্মিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সফলভাবে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার অনুসরণ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির নেতৃত্ব দিয়ে তার ব্যতিক্রমী নেতৃত্বের দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে একটি বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে চীনের পাশে থেকে উন্নয়ন, সমৃদ্ধির, অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্ক অভূতপূর্ব পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সহযোগী হয়ে উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে এর প্রভাব গভীর। চীন-বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং উৎপাদন শক্তি হিসাবে, চীনের উন্নত প্রযুক্তি, সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা এবং একটি বিশাল বাজার রয়েছে। বাংলাদেশ তার সহজলভ্য শ্রম সম্পদ এবং অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কারণে আরও বেশি চীনের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, সাথে সাথে আরো বিপুল অব্যবহৃত সম্ভাবনাও রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ চীনের বিশাল বাজারে আরও বেশি বস্ত্র, কৃষি পণ্য এবং হস্তশিল্প রপ্তানি করতে পারে। একই সময়ে, বাংলাদেশের উৎপাদন খাতে চীনা বিনিয়োগে উন্নত প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনার দক্ষতা আনতে পারে, যা স্থানীয় শিল্পকে উন্নত করবে এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াতে সহায়তা করবে।

অবকাঠামো নির্মাণ সবসময়ই বাংলাদেশের উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু এবং চীনের সহযোগিতা বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণ। পরিবহন, জ্বালানি এবং যোগাযোগের মতো অবকাঠামো ক্ষেত্রে চীনের সাফল্য বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং এর শক্তিশালী প্রযুক্তিগত শক্তি এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন ক্ষমতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময়, উভয় পক্ষ অবকাঠামো প্রকল্পে নতুন সহযোগিতার অভিপ্রায়ে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এতে নতুন সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ, বন্দর সম্প্রসারণ এবং জ্বালানি সরবরাহ ক্ষমতার উন্নতি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন বাংলাদেশের অবকাঠামোগত অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন করবে।

এই সফর শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার গুরুত্বের ওপরও জোর দেয়। উচ্চ শিক্ষার মানের ক্রমাগত উন্নতি এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির সাথে চীন শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। বাংলাদেশের উচ্চ মানের শিক্ষা সম্পদ এবং উন্নত প্রযুক্তির জরুরী প্রয়োজন রয়েছে।

শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কলারশিপ এবং যৌথ গবেষণা প্রকল্প বাড়ানোসহ জ্ঞান ও ধারণার আদান-প্রদানের প্রচার করা যেতে পারে। শিক্ষাগত আদান-প্রদানকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে, বাংলাদেশ ও চীন ছাত্র বিনিময়ের সংখ্যা বাড়াতে পারে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা সহযোগিতা প্রকল্পগুলি চালাতে পারে। এটি বাংলাদেশে পেশাদার প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করবে এবং দুই দেশের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন প্রতিভা সহযোগিতার জন্য সহায়তা প্রদান করবে।

সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হলো মানুষের মধ্যে-মানুষের আদান-প্রদানের জন্য একটি সেতু হিসাবে কাজ করে। চীন ও বাংলাদেশ উভয়েরই একটি দীর্ঘ ইতিহাস এবং চমৎকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর সাংস্কৃতিক বিনিময়ের নতুন সুযোগ দেবে। দুই পক্ষ আরও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যেমন শিল্প প্রদর্শনী, পারফরম্যান্স, সাংস্কৃতিক উৎসব ইত্যাদি আয়োজন করতে পারে, যাতে দুই দেশের মানুষ একে অপরের সাংস্কৃতিক আকর্ষণকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে।

একই সঙ্গে পর্যটন সহযোগিতাও আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীনা পর্যটকরা বাংলাদেশে এসে এর অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপ, এবং বাংলাদেশি পর্যটকরাও চীনে এসে গভীর চীনা সংস্কৃতির উপভোগ করতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর আশা ও সুযোগে ভরপুর। আমরা বিশ্বাস করি যে, এই সফরের মাধ্যমে, চীন ও বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরও ফলপ্রসূ ফলাফল অর্জন করবে, দুই দেশের জনগণের জন্য আরও সুবিধা বয়ে আনবে, যৌথভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার একটি নতুন অধ্যায় লিখবে, একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য উন্মুখ হবে এবং মিলিত হবে। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য উভয় পক্ষের আগ্রহের প্রত্যাশা পূরণ হবে।

লেখক: চীনের চিয়াংশি ইউনিভার্সিটি অফ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইকোনমিক্স এর স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক্স এর একজন ডক্টরাল প্রার্থী।

মন্তব্য করুন