আন্তর্জাতিক নিরীক্ষার স্বার্থে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে দেশের সংকটাপন্ন ছয়টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি)।
এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসব ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, নিরীক্ষা ও অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউতে তারা যাতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকগুলো হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের (এফএসআইবি), আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।
এরইমধ্যে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের (এফএসআইবি) এমডি সৈয়দ ওয়াসেক আলীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ ছাড়ের ঘটনায় তার দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এক জরুরি বৈঠকে ওয়াসেক আলীকে আগামী তিন মাসের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এফএসআইবির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মান্নান এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা ইয়াহিয়াকে।
বাকি পাঁচ ব্যাংকের এমডিকে ছুটিতে পাঠানোর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, গেল বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) এসব ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে একটি জরুরি বৈঠক করেছে। অধিকতর তদন্ত ও আরও পদক্ষেপ নেওয়ার স্বার্থে এই পাঁচ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) এস আলমঘনিষ্ঠ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পাওয়ার পরে শনিবার একটি জরুরি সভা করে এফএসআইবি। সেখানে এমডিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া রোববার (৫ জানুয়ারি) সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের একটি জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। এতে ব্যাংকটির শীর্ষ পদগুলোতে পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাইফুল আলম মাসুদ। তিনি এস আলম গ্রুপেরও প্রধান। সরকার পরিবর্তনের পর গেল ১ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির পরিচালনা বোর্ড ভেঙে দিয়ে নতুন করে গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আবদুল মান্নানকে। ২০১৭ সালে এস আলম যখন ব্যাংকটির দায়িত্ব নেয়, তখন তাকে বলপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
অন্য একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, যেসব ব্যাংকে দুর্নীতি হয়েছে। ওই সময়ে যিনি সেটির এমডির দায়িত্ব পালন করেছেন, তাকে কিছুদিনের জন্য ছুটিতে পাঠানো হবে, যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা সংগঠনগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
ব্যাংক সংস্কারের জন্য গঠিত ব্যাংকিং টাস্ক ফোর্সের পরামর্শেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা ইউএনবিকে বলেন, ৬ ব্যাংকের এমডি ছুটিতে থাকবেন। এটি সকল ব্যাংকিং পর্ষদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ এই ছয় ব্যাংকে অডিট পরিচালনা এবং অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ করবে।
‘এসময়ে এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা যেন অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আপাতত এমডিদের এই ছুটি সাময়িক। অডিট শেষে যদি তারা নির্দোষ প্রমাণিত হন, তাহলে তাদের কাজে যোগদানে কোনো বাধা থাকবে না। আর তাদের ত্রুটি পাওয়া গেলে নিয়মনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী নেয়া হয়েছে।’
মন্তব্য করুন