সোমবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

সোমবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১

আটকে রয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লেনের কাজ, ভোগান্তি চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৫২

দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ছয় লেনে উন্নীতকরণের শেষ পর্যায়ের কাজ। আরও প্রায় এক বছর আগে সড়কটির সাইনবোর্ড থেকে চাঁদমারী পর্যন্ত অংশের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু চাঁদমারী থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়কের কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের।

নারায়ণগঞ্জ শহরের সারাদিন যানজট লেগে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ পরিণত হয়েছে এ সড়কটি। প্রায় প্রতিদিন সাইনবোর্ড থেকে চাঁদমারী পর্যন্ত কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া যানবাহন আসা যাওয়া করতে পারলেও প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। 

এছাড়াও চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ডে যেতে হলেও শুরুতেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। রাস্তাজুড়ে বড় বড় খানাখন্দের কারণেও যানবাহনগুলোকে হেলে দুলে চলাচল করতে হচ্ছে। অনেক সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনারও মুখোমুখি হতে হয় এই সড়কের যানগুলোকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, যেন এসব বিষয়ে দেখার কেউ নেই।

জেলার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা যায়, চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এটি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক (লিংক রোড) নামেও পরিচিত। সড়কটি নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। 

এ সড়কের পাশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জন অফিস, জেলা নির্বাচন অফিস, জেলা পরিষদ, এলজিইডি, জেলা কারাগার, গণপূর্ত অধিদপ্তর, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, বিজিবি-৬২, পিবিআই অফিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম।

ঢাকার পাশের এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্পকারখানা ও নতুন বসতি। ফলে বিদ্যমান সড়কে যানবাহন সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। গত কয়েক বছরে নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরে বেসরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানসহ বড় আকারের বেসরকারি আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে।

এছাড়া লিংক রোডের উভয় পাশে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টসসহ নানা শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। যে কারণে লিংক রোডটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। এসব দিক বিবেচনা করে জনগুরুত্বপূর্ণ লিংক রোডটি যথাযথ মানে উন্নীত করার জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে ডিপিপি প্রণয়ন করে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। সে সঙ্গে প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ৮ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়। পরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হলে সেটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্যাকেজ কাজের ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন পায়।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক (আর-১১১) ছয় লেনে উন্নীতকরণে অনুমোদিত প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৬৪ কোটি ২৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৭ টাকা। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ৮ কিলোমিটার ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চুক্তি সই করে। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়। পরে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ৪৮৯ কোটি ধরা হয়।

তবে নির্ধারিত সময়েও প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়েছিল। এভাবে একের পর এক বর্ধিত সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পর এ কাজটি একেবারেই থেমে রয়েছে। 

কবে নাগাদ শুরু হতে পারে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর এই কাজ শেষ না হওয়ার চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ শহরবাসীকে বছরের পর বছর ধরে।

যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরই আশার বাণী শুনিয়ে আসছেন। সবশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এ প্রকল্পটিসহ সারা দেশে আটকে থাকা বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের কাজ আটকে থাকার কারণ নিয়ে কথা হয়। সেই সঙ্গে এখনও সড়কে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা সড়কে কাজ সম্পূর্ণ করার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, চাঁদমারী এলাকায় কিছু স্থাপনা রয়েছে সেটি সরিয়ে নিতে না পারায় এবং শহরের প্রবেশমুখে নারায়ণগঞ্জ রাইফেলস ক্লাবের কারণে কাজে বিলম্ব ঘটছে। তবে এ সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। আগামী বছরের জুনের আগে পুরো প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন