দুর্নীতি মামলায় কারাগারে থাকা পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মিজানুর রহমানের (অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডিএমপি; সাময়িক বরখাস্ত এবং বর্তমানে পুলিশ অধিদফতরে সংযুক্ত) বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে ৬ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার তদন্ত শেষে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনসহ একাধিক অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এরপর অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। সেহেতু সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৪২(১) ধারা অনুযায়ী মো. মিজানুর রহমানকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো।
৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের একই কর্মকর্তা।
২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান। ডিআইজি মিজানও এ বিষয়ে নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে দাবি করেন ডিআইজি মিজান।
এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।
এরপর ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ মানি লন্ডারিং আইনে সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। একই বছর ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেফতার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে। অপরদিকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার ডিআইজি মিজানকে এ মামলায়ও গ্রেফতার করা হয়।
মো. মিজানুর রহমান ১৭তম বিসিএস (পুলিশ ক্যাডার) পরীক্ষায় ১ম স্থানসহ সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৪র্থ স্থান অধিকার করে ১৯৯৮ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন। ২০০৩ সালে অ্যাডিশনাল এসপি ও ২০০৬ সালে এসপি হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। সর্বশেষ হাইকোর্টের রায়ে ২০১৮ সালের ৩ জুলাই ডিআইজি হিসেবে র্যাংক ব্যাজ পরেন তিনি।
মন্তব্য করুন