বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত ৬ মাসে শেষ করার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:১৭
ছবি-সংগৃহীত

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (১৬ অক্টোবর) প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ আদেশে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশনা দেন।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত থেকে র‌্যাবকে সরানোরও আদেশ দেন আদালত।

আদেশে হাইকোর্ট বলেছেন, আদেশ পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা। একই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মহানগর উত্তরের পরিদর্শক রবিউল আলমের ওপর।

দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব)। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।

এদিকে এ মামলার বাদীপক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর আইনজীবী শিশির মনিরকে নিযুক্ত করা হয়।

২০১২ সালে হত্যাকাণ্ডের পর তদন্ত ও আসামি গ্রেফতার নিয়ে জনস্বার্থে রিট করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। সেই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জারি করা রুলে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।

সম্প্রতি সেই রিটের ওপর একটি আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম থেকে র‌্যাবকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে উচ্চ পর‌্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।

আদেশের পর মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির জানান, এটি র‌্যাব তদন্ত করছিল। রাষ্ট্রপক্ষ একটি আবেদন করে। আদালত শুনানি শেষে র‌্যাবের কাছ থেকে তদন্ত প্রক্রিয়া সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে উচ্চপর‌্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করে, অভিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে আগামী বছরের ৬ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এখন আর র‌্যাব তদন্ত করতে পারবে না। আশা করা যায়, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর হত্যা রহস্য উন্মোচিত হবে।

শিশির মনির আরও বলেন, কোর্ট বলেছেন, এটি শুধু পরিবারের জন্যই দুঃখজনক নয়, ১২ বছর ধরে একটি মামলার তদন্ত শেষ করা যায় না। এটি জাতির জন্য দুঃখজনক। বিচার ব্যবস্থার জন্য এটি শকিং।

মামলার বাদী নওশের আলী রোমান বলেন, র‌্যাবকে বাদ দেওয়ায় আমরা খুশি। আসলে র‌্যাব শুরু থেকেই তদন্তের কিছুই করেননি। প্রথমদিকে আমাদের প্রেশারাইজ করে। পরে কোনো কাজই করেনি। স্পেসিফিক কোনো বাহিনীকে না নিয়ে যারা দক্ষ, তাদের দিয়ে যে ট্রাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে, তাতে আমরা আশার আলো দেখছি। মনে করছি এবার কিছু একটা হবে। সরকার আন্তরিক।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত সঠিকভাবে করা এবং আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য ২০১২ সালে আমরা একটি রিট দায়ের করেছিলাম। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন। রুলে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

তিনি বলেন, এরপর আমাদের পৃথক একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত র‌্যাবের কাছে চলে যায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এ মামলার চূড়ান্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষের একটি আবেদনের ওপর শুনানি হয়।

মন্তব্য করুন