মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সাংবাদিক রাহানুমার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা, অপেক্ষা ময়নাতদন্তের

প্রবাহ বাংলা নিউজ
  ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১১:২৫

রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল গাজী টিভির সাংবাদিক সারাহ রাহানুমার (৩২) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা— এ নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো মেলেনি। তবে তার মৃত্যু রহস্য নিয়ে বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে এসেছে। গতকাল রাতে মৃত্যুর আগে তিনি ফেসবুকে দুটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের কষ্টের কথা ভাগ করেন। সেই পোস্ট নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে আলোচনা। তার মৃত্যুর পেছনে এই স্ট্যাটাসে ক্লু খুঁজে বেড়াচ্ছেন অনেকে। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দিবাগত মধ্যরাতে হাতিরঝিল থেকে এক পথচারী তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মৃত্যুর আগে ফেসবুক পোস্টে কী লিখেছিলেন সাংবাদিক রাহানুমা  

মৃত্যুর আগে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের লোকেশন দিয়ে ফাহিম ফয়সাল নামে তার এক বন্ধুর সঙ্গে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন রাহানুমা। এতে তিনি লিখেন- ‘আপনার মতো একজন বন্ধু পেয়ে ভালো লাগলো, ঈশ্বর আপনাকে সর্বদা আশীর্বাদ করুন। আশা করি আপনি শিগগিরই আপনার সমস্ত স্বপ্ন পূরণ করবেন, আমি জানি আমরা একসঙ্গে অনেক পরিকল্পনা করেছি। দুঃখিত আমাদের পরিকল্পনা পূরণ করতে পারিনি, ঈশ্বর আশীর্বাদ করুন।’

যার ছবি দিয়ে সারা রাহানুমা আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সেই স্ট্যাটাসের কমেন্টস বক্সে ফাহিম ফয়সাল লিখেন, আপনি আমার দেখা সেরা বন্ধু, এই বন্ধুত্ব নষ্ট করবেন না!নিজের কোনো ক্ষতি করবেন না।

এর কয়েক ঘণ্টা পর সারা রাহানুমার সেই বন্ধু ফাহিম ফয়সাল তাকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেন, আমার বন্ধুটা আর নেই, কাল রাতে শেষ কথা আমার সাথেই হয়েছিল। যদি বুঝতে পারতাম এটাই আমাদের শেষ কথা, তাহলে কখনোই যেতে দিতাম না! এর আগে অন্য আরেকটি স্ট্যাটাসে সারা লিখেন, জীবন্মৃত হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে তার কয়েকজন সহকর্মীর সাথে কথা হয়। তারা বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি অত্যন্ত একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন। কারো সাথে কখনোই খারাপ ব্যবহার বা জোরে কথা বলেননি। তবে কেন, কী কারণে এই ঘটনাটি ঘটেছে এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি। রাহনুমার জিটিভির আরেক সহকর্মী বলেন, রাতে তিনি হাতিরঝিলে গাছের নিচে বসে ছিলেন এবং একজন গার্ড তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এত রাতে এখানে বসে আছেন কেন। তিনি বলেন, আমার গাড়ি আসবে, এলে চলে যাব। এর কিছুক্ষণ পরই কেউ একজন পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে বলে শুনতে পান তিনি। তিনি তো গ্রামের মেয়ে ছিলেন, তার তো সাঁতার জানার কথা ছিল।

লাইট অব হোপস ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের এক সহকর্মী বলেন, আপুর সাথে আমার পরিচয় সাত আট বছর আগে থেকে। আমরা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে একসাথে কাজ করি। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ দেওয়ার বিষয়ে দুদিন আগে আমার সাথে কথা হয়। আমি বলেছিলাম কতজনকে দিতে হবে। পরে তিনি আমাকে ১২২ জনের কথা বলেন। তার পরিকল্পনা ছিল পানি সরে গেলে অসহায় মানুষদের পুনর্বাসন করা হবে। রাহানুমা বিয়ে করেছিলেন, এমন খবরের ব্যাপারে তিনি বলেন, এতোদিন একসাথে আছি, কখনো এই বিষয়টি জানতে পারিনি। আমরা আজ সকালে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার বিয়ের খবরটি জানতে পারি।

নিহতের বড় বোন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর রাবিতা সাবা বলেন, আমরা ভোর রাতে আমার বোন অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে আছে এমন সংবাদ পাই। পরে ঢাকা মেডিকেলে এসে দেখি আমার বোন আর নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার বোন হলিক্রস কলেজ এবং ঢাকা সিটি কলেজে লেখাপড়া করেছে। সে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে জড়িত ছিল। গত দুদিন আগে নোয়াখালীতে কয়েকজন বিপদে পড়া মানুষকে নিয়ে সাহায্যের জন্য বিভিন্ন গ্রুপে আমি জানাই এবং আমার বোনকেও ব্যক্তিগতভাবে জানাই। পরে সে আমাকে বলে, তুমি আগে দেখো, কেউ সাহায্য করতে পারছে কি না। কেউ না পারলে আমাকে বিষয়টি জানাও। পরে বলল, আমি জামা কাপড় ভিজিয়েছি পরে কথা বলি। এরপর তার সাথে আর আমার কথা হয়নি।

রাবিতা সাবা আরও বলেন, আমার বাবা নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি। আমার বোনও একজন সাংবাদিক ছিল। কী কারণে এমন ঘটনাটি ঘটেছে এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি। আপনার বোন সাঁতার জানতো কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রাবিতা সাবা বলেন, নোয়াখালীতে বড় হয়েছে সে। আমার বোন হলিক্রস কলেজে লেখাপড়া করতো আমি। আমার ছোট বোন আর আমি কেউই সাঁতার জানি না।

শাহেদ শুভ্র নামে এক ব্যক্তিকে আপনার ছোটবোন বিয়ে করেছে এবং তাকে নিয়ে তিনি ওই বাসাতেই থাকতেন, এমন খবর সামনে এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বোন তো বিয়েই করেনি। তার হাজবেন্ড আসবে কোথা থেকে। কয়েকটি গণমাধ্যমে আমরা এটি দেখতে পেলাম। আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমরা জানি সে একা কল্যাণপুরে ওই বাসাতেই থাকতো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ বলেন, আমরা তার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছি। বর্তমানে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, তিনি হাতিরঝিল লেকে পানিতে ডুবে মারা গেছেন। পরিবারের কাছ থেকে আমরা তেমন কোনো তথ্য পাইনি। জানতে পারলাম, তার স্বামীকে নিয়ে তিনি কল্যানপুরের ওই বাসাতেই থাকতেন। কিন্তু তার পরিবার সে বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, সে যে বিয়ে করেছে সে বিষয়টিও আমরা জানি না। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন