হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শাকিল-রুপা দম্পত্তি নাকি হাজার কোটি টাকার মালিক!!! একুশে টেলিভিশনে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। কীভাবে সম্ভব এটা?
বিগত ১৫ বছরে মধ্যম সারির সাংবাদিক হিসেবে এরাই যদি এতো টাকা কামিয়ে থাকে, তাহলে যেসব রাঘব বোয়াল সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতা আছেন, তারা কত কামিয়েছেন???? আমি আর ভাবতে পারছি না।
ঢাকা শহরে আমার সাংবাদিকতা শুরু ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৯ সালে দৈনিক মাতৃভূমি পত্রিকার জন্মলগ্নে আমি সাব এডিটর হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কে যোগ দেই। ফারজানা রুপা জুনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ শুরু করে। তখন তাকে খুব হম্বিতম্বি করতে দেখতাম।
কিছু বলতাম না। সাত মাস পরে মাতৃভূমি ছেড়ে দিয়ে বাংলার বাণীতে ফিচার বিভাগে যোগ দিলাম। কিন্তু মন চাইছিল প্রথম আলোতে কাজ করতে। যোগাযোগ করলাম আমার পূর্ব পরিচিতি প্রয়াত দীপু হাসান ভাইয়ের সাথে। তিনি তখন প্রথম আলোর মফস্বল বিভাগে কাজ করতেন। একদিন তিনি বললেন, ‘এখানে শাকিল আহমেদ নামে একটা ছেলে কাজ করে। সে একুশে টিভিতে জয়েন করবে আগামী মাসেই। ও চলে গেলে একটা পোস্ট খালি হবে। আমি তোমাকে নেওয়ার জন্য মতি ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। ৬ হাজার টাকা বেতন। মতি ভাই বলেছেন, এক মাস ট্রায়ালে থাকতে। আমি রাজি হলাম।’
প্রথম আলোয় আমার ট্রায়াল লাইফ শুরু হলো। শাকিল তখনো আছে। একই বিভাগে কাজ করি। সে কথা খুব কম বলে। মাঝে মাঝে ওর সাথে খুনসুটি হতো। ফুরুৎ করে এক মাস চলে গেলো। শাকিলও চলে গেলো ইটিভিতে। আমার আর চাকরিটা হলো না। এক মাস পরে দেখলাম আমার জায়গায় নেওয়া হলো এক ছড়াকারকে। সে আরেক গল্প। না বলাই ভালো। নিয়তির পরিহাস, সেই প্রথম আলোতেই আমি অনেক বেশি বেতনে সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে জয়েন করি ২০১০ এর ফেব্রুয়ারিতে। ২০১৮ এর সেপ্টেম্বরে ছেড়ে দেই।
শাকিল-রুপাকে নিয়ে এ কথাগুলো বলে ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার অনেক কারণ আছে। সাংবাদিকতা ও গান নিয়ে মিডিয়ায় আমার বিচরণ ২৮ বছর ধরে। এই দীর্ঘ সময় ধরে সাংবাদিকতা, গান, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টসহ নানা বিষয় নিয়ে কাজ করছি ঢাকা শহরে শুধু পরিবার নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য।
রাত-দিন এক করে রীতিমতো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি এখনো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হয়েছে সাতটি। তবে একটিতেও কোনো টাকা জমা নেই। সেভিংসের যত ক্ষেত্র আছে, তার কোনোটিতেই একটি টাকাও সঞ্চয় করার সুযোগ পাইনি। এক কাঠা জমিও নেই কোথাও। চলতি হিসাবে বেতনের টাকাটা ঢোকামাত্র ১৫/২০ দিনের মধ্যেই শেষ। তারপর থেকে শুরু হয় হাহাকার। অন্য কোনো খাত থেকে কিছু টাকা হাতে এলে মাসের বাকি দিনগুলো চলে যায়।
আমি সৎ, আমি অমুক, তমুক- ইত্যাদি বোঝানোর জন্য এসব কথা বলছি না। এত কথা বলার একটাই কারণ- ব্যবসায়ী বাদে অন্য যে পেশারই মানুষ হোক না কেন, তিনি সৎ জীবন যাপন করলে ঢাকা শহরে তাকে কাঙালের মতোই জীবন যাপন করতে হবে। আর একজন সাংবাদিক? তিনি তো বউ বাচ্চা নিয়ে ঠিকমতো চলতে পারারই কথা নয়।
তাহলে এবার শাকিল-রুপার কথা ভাবুন তো! শুধু শাকিল-রুপা কেন? বাংলাদেশে গত ১৫-১৬ বছরে যে সাংবাদিকেরা মাফিয়া হয়ে উঠেছেন, তাদের সবাইকেই আমি চিনি। আমি নিশ্চিত, তারাও আমাকে চেনেন। শাকিল-রুপারই যদি পাহাড়সম বিত্ত-বৈভব হয়, তাহলে বাকিদের কি অবস্থা??
সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ, যেসব টেলিভিশন চ্যানেল বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্রমাগত দালালি করেছে, সেসব চ্যানেলের নেতৃত্বস্থানীয় সাংবাদিকদেরও ধন-সম্পদের হিসাব নেওয়ার আয়োজন করুন প্লিজ।
লেখক, সাংবাদিক ও শিল্পী
মন্তব্য করুন