সারা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না খেলে শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হবে। তার রেশ মারাত্মক। কিন্তু অনেকেই জানেন না, জল বেশি খেলেও কিন্তু শরীরের চরম ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত জল কিডনি ছেঁকে বার করতে পারবে না, ফলে কোষে কোষে সেই জল জমে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করবে।
বেশি জল খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। এমনকি, প্রয়োজনের অধিক জল খেলে কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকিও থেকে যায়। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলে ‘ওয়াটার ইনটক্সিকেশন’।
বেশি জল খাওয়া ক্ষতিকর কেন?
গুরুগ্রামের সিকে বিড়লা হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক তুষার তয়াল অতিরিক্ত জল খাওয়ার ক্ষতিকর দিক নিয়ে সতর্ক করেছেন। তাঁর বক্তব্য, তেষ্টা না পেলেও অল্প সময়ের মধ্যে যদি অতিরিক্ত জল খেতে শুরু করে দেন কেউ, তা হলে তাঁর রক্তে সোডিয়ামের ঘনত্ব দ্রুত কমতে থাকবে।
এক-আধ দিনের অভ্যাসে ক্ষতি নেই। তবে প্রতি দিনই যদি ঘণ্টায় ঘণ্টায় লিটার লিটার জল বা তরল খাবার কেউ খেতে শুরু করেন, তা হলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।
তেমন কোনও রোগব্যাধি না থাকলে, এক জন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারা দিনে ৩ থেকে ৪ লিটার জল খাওয়া জরুরি। তবে তা-ও নির্ভর করে তিনি কতটা পরিশ্রম করছেন তার উপরে।
এ বার যদি তিনি দিনে ৬ থেকে ৭ লিটার জল পান শুরু করেন এবং কায়িক পরিশ্রমও কম হয়, তখন তা শরীরের ক্ষতি করবে। রক্তে সোডিয়াম ও অন্য খনিজ লবণের মাত্রা কমে যাবে। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘হাইপোন্যাট্রেমিয়া’। এই অবস্থা তৈরি হলে শরীরের নানা অঙ্গের কার্যক্ষমতা কমতে থাকবে।
এই বিষয়ে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মত, শরীরের প্রতি কোষেরই নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা থাকে। কিন্তু তার বেশি হয়ে গেলে তখন শরীরে প্রদাহ শুরু হবে। অতিরিক্ত জল শরীরে জমতে থাকলে হাত-পা, গোড়ালি ফুলতে শুরু করবে। পেটে জল জমতে থাকবে, যা চাপ দেবে যকৃৎ ও পাকস্থলীকে। এর জেরে শরীরে জল ও লবণের ভারসাম্য বিগড়ে যাবে, তখন হরমোনের সমস্যাও দেখা দেয়।
কে, কতটা পরিমাণ জল খাবেন, তা নির্ভর করে সেই ব্যক্তির ওজন, শারীরিক সক্রিয়তা এবং সামগ্রিক কাজকর্মের উপর। তেমন কোনও শারীরিক জটিলতা না থাকলে সারা দিনে ২ থেকে ৩ লিটার পর্যন্ত জল খাওয়া যায়। তবে, ঘণ্টায় ১ লিটারের বেশি জল না খাওয়াই ভাল।
চিকিৎসকের কথায়,মানুষের শরীরে ৫০-৬০ ভাগ জল থাকে। জল,খনিজ লবণ ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় থাকলেই শরীর সুস্থ ও তরতাজা থাকে। এই ভারসাম্য যদি নষ্ট হয়ে যায়,তখন বিভিন্ন অসুখবিসুখ দেখা দিতে থাকে।বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্টও হতে পারে।
এমন অবস্থা তৈরি হলে চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে। পাশাপাশি,ঘন ঘন চা বা কফি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। অ্যালকোহল ছোঁবেনই না। বেশি করে খেতে হবে সবুজ শাকসব্জি,ফল।কম তেলে রান্না করা খাবার খেতে হবে ও প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে শরীরচর্চা করতে হবে।
মন্তব্য করুন