দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া ঝালকাঠি-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীরউত্তমকে বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তার বাড়ি ও গাড়িতে হামলার ঘটনায় রাজাপুর থানায় মামলা দিতে গিয়ে উলটো বিএনপি অফিসে হামলা-ভাঙচুরের মামলায় গ্রেফতার হন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শাহজাহান ওমর ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে এমপি নির্বাচিত হন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বুধবার সকালে তিনি প্রথম বরিশালে আসেন। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সকালে রাজাপুরে তার গ্রামের বাড়ি সাংগরের উদ্দেশে রওয়ানা হন।
এ সময় রাজাপুর উপজেলার উত্তর পিংড়ি এলাকায় দুর্বৃত্তরা তার গাড়িতে হামলা চালায়। এতে তিনিসহ তার গাড়ির চালক ও হাইকোর্টের এক ক্লার্ক আহত হন। এ ঘটনায় তিনি রাজাপুর থানায় এজাহার দিতে গেলে পুলিশ তাকে একটি মামলায় গ্রেফতার করে।
এদিকে রাজাপুর উপজেলা সদরের গোডাউন ঘাট এলাকায় শাহজাহান ওমরের বাড়ি মাহজাবিনে বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে দুই দফায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
রাজাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, কাঁঠালিয়া বাসস্ট্যান্ডে উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বুধবার রাতে কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম বাদী হয়ে শাহজাহান ওমরসহ ৯ জনকে আসামি করে এ মামলা করেন।
শাহজাহান ওমর রাজাপুরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পেয়ে গাড়িতে করে বৃহস্পতিবার সকালে বরিশাল থেকে রাজাপুরে যাওয়ার পথে পিংড়ি এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। হামলাকারীরা তার ব্যবহৃত গাড়িটি ভাঙচুর করে। পরে ভাঙা গাড়ি নিয়ে তিনি রাজাপুর থানায় অভিযোগ করতে গেলে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
ঝালকাঠি কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক পুলক চন্দ্র রায় বলেন, শাহজাহান ওমরকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা বিনতে শহীদের আদালতে তোলা হলে তার পক্ষে কোনো জামিন আবেদন এবং পুলিশের পক্ষে কোনো রিমান্ড প্রার্থনা না থাকায় খুব দ্রুত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
আদালতে নেওয়ার পথে শাহজাহান ওমর অভিযোগ করেন, রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের নেতৃত্বে আমার বাড়ি ও গাড়িতে হামলা হয়েছে। আমি এসব মামলায় ভয় পাই না। আমি আবারও এই দেশে এমপি-মন্ত্রী হবো লিখে রাখেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন বলেন, কারা তার (শাহজাহান ওমর) বাসভবনে ও গাড়িতে ইট নিক্ষেপ করেছে, তা আমার জানা নেই।
বিগত ১/১১ সরকারের সময় আত্মগোপনে থাকাকালে দুর্নীতির মামলায় স্ত্রীসহ শাহজাহান ওমরের ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দীর্ঘদিন সরাসরি রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন।
দুর্নীতির মামলার রায় স্থগিত রাখাসহ নতুন করে মামলা-মোকদ্দমা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখতে গোপনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ভোটারবিহীন নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন।
মন্তব্য করুন