আগামী ৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে—এমন সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। এ আশঙ্কা প্রকাশ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক হিসেবে খ্যাত অধ্যাপক জেফরি হিন্টন বলেছেন, ‘এআই মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যাবে এবং তার প্রভাবে মানবজাতির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে—এটা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক।’
অসমতা এমনিতেই অনেক বেড়েছে, এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে মানুষ চাকরি হারালে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সে কারণে জেফরি হিন্টন মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে অসমতা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব মোকাবিলায় দেশে দেশে সরকারকে সর্বজনীন মৌলিক আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিবিসি নিউজনাইটের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক বলেন, এআই অনেক মামুলি বা গতানুগতিক ধরনের কাজ কেড়ে নেবে বলে তাঁর আশঙ্কা। তাই সব নাগরিককে নির্দিষ্ট অঙ্কের নগদ অর্থ দিতে হবে সরকারকে। তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে তিনি বলেছেন, এআইয়ের প্রভাব মোকাবিলায় সর্বজনীন মৌলিক আয় ভালো পন্থা হতে পারে।
জেফরি হিন্টন ধারণা করছেন, এআইয়ের কল্যাণে মানুষের উৎপাদনশীলতা ও আয় উভয়ই বাড়বে। কিন্তু তাঁর মনে আশঙ্কা, এই সম্পদ ধনীদের ঘরে যাবে। যাঁরা চাকরি হারাবেন, তাঁদের ঘরে যাবে না এই অর্থ এবং সমাজের জন্য তা ভালো হবে না বলেই তিনি মনে করেন।
অধ্যাপক জেফরি হিন্টন নিউরাল নেটওয়ার্কের পুরোধা; এখন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার চলছে, তার পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এই নিউরাল নেটওয়ার্ক। গত বছর পর্যন্ত তিনি গুগলে কাজ করেছেন। কিন্তু বাজারে অনিয়ন্ত্রিত এআইয়ের কী প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে আরও স্বাধীনভাবে কথা বলতে গত বছর তিনি গুগল ছেড়ে যান।
সর্বজনীন মৌলিক আয় একধরনের সরকারি প্রণোদনা। রাষ্ট্রের নাগরিকের আয় যা-ই হোক না কেন, এ পরিকল্পের আওতায় সব মানুষকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়। যদিও সমালোচকেরা বলেন, এটা ব্যয়বহুল; সরকারি তহবিল ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে এবং এতে যে দারিদ্র্য বিমোচন হবেই, তার নিশ্চয়তা নেই।
যুক্তরাজ্য সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সর্বজনীন মৌলিক আয়ের মতো প্রণোদনা দেওয়ার মতো পরিকল্পনা তাঁদের নেই।
বিবিসির অনুষ্ঠানে জেফরি হিন্টন বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে মানবজাতির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকি আছে। গত কয়েক বছরের পথপরিক্রমায় দেখা গেছে, সামরিক কাজে এআই ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার মতো সদিচ্ছা সরকারের নেই। সেই সঙ্গে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে যে তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট অর্থ বিনিয়োগ করবে না—এমন ঝুঁকি আছে।
এআই মডেলগুলোর বিকশিত হওয়া বা নিজেদের উন্নত করার প্রেরণা আছে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক জেফরি হিন্টন। এমনকি এসব মডেল নিজে থেকে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে, যেমন নিয়ন্ত্রণ আরোপ। এআই মডেলগুলো প্রবঞ্চনা করেছে—এমন নজিরও আছে। বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর কাজে এআই ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এমনও হতে পারে, একসময় এই মডেলগুলো নিজে থেকে মানুষকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেবে।
এ বাস্তবতায় জেফরি হিন্টন মনে করেন, এমনও হতে পারে যে সামরিক কাজে এআই ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে জেনেভা কনভেনশনের মতো কিছু একটা তৈরি করতে হবে। কিন্তু বড় কোনো অঘটন হওয়ার আগে তা হবে না বলেই মনে করেন তিনি।
এআইয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে রুশ ও চীনাদের প্রতিযোগিতা চলছে। এ বাস্তবতায় জেফরি হিন্টন মনে করেন, সামরিক কাজে এআই ব্যবহার নিষিদ্ধ করাই হতে পারে সবচেয়ে ভালো সমাধান।
মন্তব্য করুন