ডিজিটাল যুগে বেশির ভাগ কাজই হচ্ছে অনলাইনে। সে ব্যাঙ্কে টাকাপয়সা লেনদেন হোক বা পোশাক, খাবারদাবার অর্ডার করা— আর্থিক লেনদেনের অন্যতম ক্ষেত্রই হয়ে উঠেছে ডিজিটাল মাধ্যম। আর তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনলাইন প্রতারণার ঝুঁকিও।
কখনও অনলাইনে বিপুল ছাড়ের লোভ দেখিয়ে, আবার কখনও বিজ্ঞাপনী চমকে ভুলিয়ে গ্রাহকদের আকর্ষণ করে এনে সর্বস্বান্ত করছে প্রতারকেরা। এখন তো হোটেল বুকিং থেকে টিকিট কাটা— এ সবও হচ্ছে অনলাইনে। সেখানেও জালিয়াতি করার নিত্যনতুন ফন্দিফিকির খুঁজে নিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। কাজেই সতর্ক না হলেই বিপদ। কী ভাবে অনলাইনে যে কোনও কাজ নিরাপদে করবেন, তার ৫ উপায় বলে দিয়েছে গুগ্ল।
ডিপফেক থেকে সাবধান
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে নকল ছবি বা ভুয়ো ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ছে সমাজমাধ্যমে। সম্প্রতি ডিপফেক ছবি ও ভিডিয়ো নিয়ে বেশ হইচই হয়েছে। নামী ব্যক্তিত্ব, টিভি তারকা, খেলোয়াড় থেকে সাধারণ মানুষ— ডিপফেকে আসল ছবিকে বিকৃত করে তা সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অজস্র ঘটনা ঘটেছে।
গুগ্ল জানাচ্ছে, কোনও ছবি বা ভিডিয়োয় যদি দেখেন, কোনও ব্যক্তির নাক ও ঠোঁটের গঠনে অসামঞ্জস্য আছে, হাত ও পায়ের গঠনেও তাই, চোখের মণি দেখলে মনে হচ্ছে আঁকা— তখন বুঝতে হবে সেটি আসল নয়। ছবিটির সূত্র যাচাই করতে গুগ্ল লেন্স ব্যবহার করা যেতে পারে। ‘রিভার্স ইমেজ সার্চ’ অপশনও রয়েছে।
ক্রিপ্টো স্কিম
ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রায় লেনদেনের প্রলোভন দেখালে সেই ফাঁদে পা দেবেন না। স্বল্প বিনিয়োগে বিপুল লাভের অঙ্ক দেখিয়ে প্রতারণার নতুন কৌশল রপ্ত করেছে হ্যাকারেরা। অনলাইনে ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কিত কোনও রকম স্কিমে বিনিয়োগ করতে বারণ করছে গুগ্ল।
ভুয়ো অ্যাপ
ইন্টারনেট, গুগ্ল প্লে স্টোর, অ্যাপল প্লে স্টোরে এখন ভুয়ো অ্যাপের ছড়াছড়ি। ভুল করেও যদি এমন ভুয়ো অ্যাপ ফোনে বা কোনও ডিভাইসে ইনস্টল করে ফেলেন, তা হলেই সর্বনাশ। গুগ্ল জানাচ্ছে, সবচেয়ে আগে দেখতে হবে অ্যাপটির উৎস কী। অর্থাৎ ডেভেলপারের নাম, তৈরির সময়, আর কী কী ফিচার রয়েছে।
অনেক সময়ে একই নামে একাধিক অ্যাপ থাকে প্লে স্টোরে। সে ক্ষেত্রে দেখে নিতে হবে গ্রাহকেরা কী মতামত দিচ্ছেন, কত বার অ্যাপটি ইনস্টল করা হয়েছে। কখনওই কোনও রকম অ্যাপ ইনস্টল করার সময়ে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাঙ্ক বা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড সংক্রান্ত তথ্য দেবেন না।
নকল ওয়েবসাইট
কোনও ওয়েবসাইটে যাওয়ার পর যদি যোগাযোগের ঠিকানা বা ফোন নম্বর, কাস্টমার কেয়ার নম্বর না দেখতে পান তা হলে বুঝবেন সেই ওয়েবসাইটটি ভুয়ো। ‘ডোমেন নেম’ খুঁটিয়ে দেখুন। যখন একজন ব্যক্তি বা কোম্পানি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে, তখন তাকে একটি ডোমেন নাম কিনতে হয়।
প্রতিটি ওয়েবসাইটের একটি আলাদা ‘ডোমেন নেম’ রয়েছে। সেখানে যদি কোনও গলদ থাকে, তা হলে বুঝতে হবে ওয়েবসাইটটি ভুয়ো। তা ছাড়া ইউআরএল লক্ষ্য করবেন। সেখানে যদি দেখেন বানান ভুল রয়েছে বা অসংখ্য ইমোজি ব্যবহার করা হয়েছে, তখন বুঝতে হবে সেই সাইটটি ভুয়ো।
‘মাইক্রো ওয়েবপেজ’ থেকে সাবধান
ছোট ছোট ওয়েবপেজ খুলে সেখানে নানা রকম বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়। হয়তো বলা হবে, সেই ওয়েবপেজে গেলে খেলার টিকিট সস্তায় পাওয়া যাবে, অথবা হোটেল বুকিং-এ বিস্তর ছাড় রয়েছে। কেনাকাটাতেও বিপুল ছাড়ের প্রলোভন দেখিয়ে এমন ছোটখাটো ওয়েবপেজ খোলা হয়। সেখানে ভুলেও যাবেন না। সেই সব ওয়েবপেজে কিউআর কোড স্ক্যান করতে বললেও তা করবেন না।
একবার নিজের মোবাইল বা ডিভাইস থেকে কোড স্ক্যান করলে নিমেষে আপনার অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দিতে পারে জালিয়াতেরা। গুগ্ল জানাচ্ছে, ছোটখাটো ওই সব মাইক্রো পেজের বেশির ভাগই প্রতারণার ফাঁদ। তাই সাবধানেই চলতে হবে।
মন্তব্য করুন