বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আইফোন ১৬ সিরিজ উদ্বোধন: নতুন ফিচার ও মূল্য তালিকা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:০৯
ছবি- সংগৃহীত

প্রযুক্তি উৎসাহীদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর অ্যাপল সাম্রাজ্যে শুরু হলো আইফোন ১৬-এর যুগ। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বেসিকের পাশাপাশি এবারও উন্মোচিত হয়েছে প্লাস, প্রো ও প্রো ম্যাক্স ব্র্যান্ড বিভাজনগুলো। তন্মধ্যে প্রো ও প্রো ম্যাক্সের সজ্জায় দেখা গেছে কালো, সাদা, গোলাপি ও আল্ট্রামেরিন রঙ। বাকি দুটোতে ফুটে রয়েছে কালো, ন্যাচারাল, সাদা ও ডেজার্ট টাইটেনিয়াম। নতুন কি কি ফিচার থাকছে, আর কেমনই বা দাম হতে চলেছে অ্যাপলের আইফোন ১৬ সিরিজের এই নতুন ফোন গুলোর, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

আইফোন ১৬ সিরিজের ফিচারগুলো
ডিসপ্লে
নতুন আইফোনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি হলো এর অতিকায় লম্বা স্ক্রিন। এর প্রো ম্যাক্সের স্ক্রিনটি ৬ দশমিক ৯ ইঞ্চির, যা পূর্ববর্তী ১৫ সিরিজের সবচেয়ে বড় স্ক্রিনের (৬ দশমিক ৭-ইঞ্চি) মডেল প্রো ম্যাক্স থেকেও বড়। অবশ্য উভয় সিরিজের স্ক্রিনেই রয়েছে সুপার রেটিনা এক্সডিআর প্যানেল, যা ১২০ হার্ট্জ রিফ্রেশ রেট এবং ২ হাজার নিট্‌সের সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতা দিতে সক্ষম। অর্থাৎ সামগ্রিক অর্থে ডিসপ্লে প্রযুক্তি মূলত একই, নতুনটাতে শুধু আকারটা বেড়েছে।

ক্যামেরা
এবারের প্রো ম্যাক্স ভ্যারিয়েন্টের আল্ট্রা-ওয়াইড ক্যামেরা আগের সিরিজগুলো থেকে অনেকটা এগিয়ে। ল্যান্ডস্কেপ ও ম্যাক্রো শট নেওয়ার ক্ষেত্রে এখানে ক্যামেরার গুণগত মানকে দ্বিগুণ করা হয়েছে। বিগত প্রো ম্যাক্সের ১২ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রা-ওয়াইড লেন্সের জায়গায় এবার যুক্ত হয়েছে ৪৮ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা-ওয়াইড লেন্স। অ্যাপলের ইমেজ প্রসেসিং প্রযুক্তির কারণে এর নতুন সেন্সরটি অল্প আলোয় ফটোগ্রাফির জন্য যথেষ্ট উপযোগী।

আরো পড়ুন: কীভাবে বুঝবেন ছবিটি এআই দিয়ে বানানো কিনা

আগের বছরের প্রো ম্যাক্স-এ ফোর কে রেজুলেশনের ভিডিও নেওয়া যেত সর্বোচ্চ ৬০ এফপিএস (ফ্রেম-পার-সেকেন্ড)-এ। সেখানে এ বছরে উন্মোচিত একই ভ্যারিয়েন্টটি স্ট্যান্ডার্ড ও স্লো-মোশন দুই মোডে ১২০ এফপিএস-এ ফোর কে ভিডিও করতে সক্ষম। এছাড়া অতিরিক্ত যুক্ত হয়েছে ফুটেজ ক্যাপচার করার পর প্লেব্যাকের গতি সামঞ্জস্য করার অপশন।

প্রসেসর
১৫ সিরিজের মতো এবারের ফোনগুলোতেও মূল শক্তি হিসেবে থাকছে ২য় প্রজন্মের ৩ ন্যানোমিটার প্রযুক্তি। তবে অ্যাপল চিপসেট এ১৭ থেকে উন্নীত করা হয়েছে এ১৮-এ। স্পষ্টত বেসিক মডেলে এ১৮ বেসিক, প্লাস-এ এ১৮ বায়োনিক এবং প্রো ও প্রো ম্যাক্সে দেওয়া হয়েছে এ১৮ প্রো। এগুলোর মধ্যে এ১৮ প্রো ফোনের সিপিইউর (সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট)-এর কার্যক্ষমতাকে ১৫ শতাংশ এবং জিপিইউকে (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট) ২০ শতাংশ দ্রুততর করতে পারে।

নতুন চিপসেটে একটি ১৬-কোর নিউরাল ইঞ্জিনও রয়েছে, যেটি ফোনের বুদ্ধিমত্তাকেন্দ্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে আগের তুলনায় আরও দক্ষ করে তোলে।

অবশ্য স্মার্টফোনের দৈনন্দিন সাধারণ কাজকর্মে এ১৭ এবং এ১৮-এর সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো তেমন দৃষ্টিগোচর হবে না।

গেমিং
প্রসেসরের দুই প্রজন্মের মধ্যকার সুক্ষ্ম তারতম্যগুলো খুব ভালোভাবে বোঝা যাবে এএএ তথা হাই প্রোফাইল গেমগুলো খেলার সময়। ‘ডেথ স্ট্র্যান্ডিং’ ও ‘অনার অফ কিংস: ওয়ার্ল্ড’ গেমগুলোর ব্যাপারে নিরবচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে নতুন প্রো ম্যাক্সে। কেননা পারফরমেন্স বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন এ১৮ চিপের আরও একটি বিশেষত্ব হচ্ছে অতিরিক্ত ব্যাটারি লাইফ।

তাছাড়া হার্ডওয়্যারভিত্তিক রে ট্রেসিংয়ের দৌলতে গতানুগতিক সফ্টওয়্যারভিত্তিক রে ট্রেসিংয়ের তুলনায় ৫ গুণ পর্যন্ত ফ্রেম রেট পাওয়া যাবে। এর ফলে গেমের ভিজুয়ালে আলোর কারসাজিগুলো আরও নিখুঁতভাবে বোঝা যাবে।

ব্যাটারি
প্লাস ভ্যারিয়েন্ট বাদে বাকি সবগুলোর ব্যাটারি ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাড়ানো (প্রায় ৬ শতাংশ) হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ব্যাটারিতে। যেখানে আগে ছিলো ৩ হাজার ৩৪৯ এমএএইচ (মিলি অ্যাম্পিয়ার পার আওয়ার), সেখানে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৫৬১ এমএএইচের ব্যাটারি। সবচেয়ে কম (২ দশমিক ৫ শতাংশ) প্রো-তে; ৩ হাজার ২৭৪ থেকে ৩ হাজার ৩৫৫ এমএএইচ। আর প্রো ম্যাক্সে ৪ হাজার ৪২২ এমএএইচ থেকে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে যুক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৬৭৬ এমএএইচের ব্যাটারি।

১৫ সিরিজের ফোনগুলো যেখানে সারাদিন ব্যবহারে ২০ ঘণ্টা চলতো, সেখানে ১৬ সিরিজের ভ্যারিয়েন্টগুলো প্রায় ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। ব্যাটারিগুলো কেবল দীর্ঘায়ুর দিক থেকে নয়, দ্রুত চার্জিংয়ের ক্ষেত্রেও বিগত বছরের থেকে অনেকটা এগিয়ে। ঐতিহ্যবাহী ইউএসবি-সি টাইপসমৃদ্ধ নতুন সেটগুলোতে তারযুক্ত চার্জিং ক্ষমতা ২৭ ওয়াট এবং তারবিহীন ১৫ ওয়াট।

সফটওয়্যার ও এআই
আইফোন ১৬-এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হলো অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স। এর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা চ্যাটজিপিটির সাহায্যে জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করতে সক্ষম। অবশ্য এই সুবিধা শুধুমাত্র প্রো এবং প্রো ম্যাক্সের জন্য সংরক্ষিত।

আইওএস (আইফোন অপারেটিং সিস্টেম)-১৮-এর আপডেটসহ এখানে বিভিন্ন ধরনের এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ফিচার রয়েছে। যেমন গুরুত্বপূর্ণ নোটিফিকেশনগুলো ফিডের শীর্ষে রাখা বা বড় নোটিফিকেশনগুলোর সারাংশ দেখানো এবং ছোট নোট বা ই-মেইল লেখা। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে এআই ছবি তৈরি এবং অডিও থেকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে টেক্সট লেখা। এছাড়া অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারকারীদের জন্য থাকবে নিজস্ব প্রাইভেট ক্লাউড কম্পিউট, যা তাদের যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্যাবলি সুরক্ষিত রাখবে।

আইফোন ১৬ সিরিজের কিছু সীমাবদ্ধতা
অ্যাপল এআই
আইফোনের নিয়মিত গ্রাহকদের জন্য এআই এবারই নতুন নয়। ১৫ সিরিজের প্রো ম্যাক্সের ব্যবহারকারীরা এই সুবিধার সঙ্গে অভ্যস্ত। অবশ্য এবারে আগের তুলনায় অনেকটা পরিশীলিত হয়ে নতুন আপগ্রেড নিয়ে আসছে অ্যাপল এআই। তবে সমস্যা হলো উন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গেই এই সফটওয়্যার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং এর প্রাথমিক ফিচারগুলোই জনসম্মুখে আসতে আরও এক মাস লাগবে। চ্যাটজিপিটির কার্যকারিতা ডিসেম্বর নাগাদ সক্রিয় হতে পারে। সব মিলিয়ে সম্পূর্ণ কার্যক্রম পুরোদমে চালু হতে হতে ২০২৫-এর মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

অর্থাৎ এআই ইউনিক সেলিং পয়েন্ট হলেও বর্তমানে নতুন আইফোন কেনাটাকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। এই বিনিয়োগের লাভ নির্ভর করছে ভবিষ্যতে সফ্টওয়্যার আপডেটের উপর। তাই সময়ের সঙ্গে টাকার মূল্যমান হিসাবে তাৎক্ষণিক পণ্য ক্রয়ের কতটুকু লাভ হবে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে।

অপর্যাপ্ত স্টোরেজ
গত বছরের তুলনায় এবারের অ্যাপলের প্রতিটি স্মার্টফোনের স্টোরেজ ক্ষমতা ৮ জিবি-তে উন্নীত করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টে সাধারণ অগ্রগতি হলেও এআইয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এটি যথেষ্ট নয়। এআইয়ের নির্দেশনা প্রক্রিয়াকরণ করে তা যথাযথভাবে সম্পাদন করতে সাধারণ স্মার্টফোনের তুলনায় অনেক বেশি স্টোরেজের প্রয়োজন। তাই কয়েক মাস পর যখন এআই সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় হবে, তখন বর্তমান ডাটা ধারণ ক্ষমতা নিমেষেই ফুরিয়ে আসবে।

ক্যাপচার বাটনে অসুবিধা
প্রসেসরের সাথে ক্যামেরার সন্নিবেশকে বিবেচনা করলে পুরো প্যাকেজটা নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত। তবে ক্যামেরা কন্ট্রোল বাটনের স্ক্রিনশট নিতে না পারাটা নিখুঁত সেবা পাওয়া গ্রাহকদের জন্য এক বিরাট অসুবিধা। তাছাড়া বর্তমানে অধিকাংশ ব্র্যান্ডগুলোতে খুব সহজেই স্ক্রিনশটের সুবিধা থাকে।

কিন্তু অ্যাপলের নতুন ফোনে স্ক্রিনশটের জন্য কয়েকটি বোতাম কাজে লাগাতে হবে, যা স্বাভাবিকভাবেই বিরক্তির উদ্রেক করতে পারে।

আইফোন ১৬ সিরিজের মূল্য
ভারতে নতুন আইফোনের ভ্যারিয়েন্টগুলোর সর্বনিম্ন দাম
বেসিক: ৭৯ হাজার ৯০০ রুপি বা ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৫ টাকা (১ রুপি = ১ দশমিক ৪৩ বাংলাদেশি টাকা)

প্লাস: ৮৯ হাজার ৯০০ রুপি (১ লাখ ২৮ হাজার ১৩৮ টাকা)

প্রো: ১ লাখ ১৯ হাজার ৯০০ রুপি (১ লাখ ৭০ হাজার ৮৯৯ টাকা)

প্রো ম্যাক্স: ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯০০ রুপি (২ লাখ ৬ হাজার ৫৩২ টাকা)

চীনে আইফোন ১৬-এর মডেলগুলোর সর্বনিম্ন দাম
বেসিক: ৫ হাজার ৯৯৯ ইউয়ান বা ১ লাখ ৯৫৮ টাকা (১ ইউয়ান = ১৬ দশমিক ৮৩ টাকা)

প্লাস: ৬ হাজার ৯৯৯ ইউয়ান (১ লাখ ১৭ হাজার ৭৮৭ টাকা)

প্রো: ৭ হাজার ৯৯৯ ইউয়ান (১ লাখ ৩৪ হাজার ৬১৬ টাকা)

প্রো ম্যাক্স: ৯ হাজার ৯৯৯ ইউয়ান (১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭৫ টাকা)

বাংলাদেশে আইফোন ১৬ সিরিজের সর্বনিম্ন দাম
বেসিক: ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা

প্লাস: ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা

প্রো: ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা

প্রো ম্যাক্স: ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা

পরিশেষে
এ১৮ চিপসেটের বিবেচনায় আইফোন ১৬ সিরিজকে বছরের সেরা স্মার্টফোনের জায়গাটি দেয়া যেতে পারে। কিন্তু যারা জেনারেটিভ এআইকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন তাদের এই সুবিধা পুরোদমে পেতে আরও কিছু মাস অপেক্ষা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ১৬ সিরিজের ফোনগুলো কেনার তাৎক্ষণিক মূল্যমান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ১৫ সিরিজের প্রো ও প্রো ম্যাক্সেই যখন একই এআই সুবিধা বিদ্যমান, আপগ্রেডের প্রয়োজনীয়তা তখন গুরুত্বহীন। আইফোনের একনিষ্ঠ গ্রাহকদের জন্য এই দুটোই সর্বোত্তম বিকল্প।

অন্যদিকে, এআইয়ের পাশাপাশি ক্যামেরা ও মেমোরিসহ সার্বিক দিক বিচার করা হলে, সেরা অ্যান্ড্রয়েড বিকল্প হতে পারে স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৬। দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের সঙ্গে স্বল্প বাজেটকে যুক্ত করা হলে আইফোনকে টেক্কা দিতে পারে একই ব্র্যান্ডের এস২৪ প্লাস মডেলটি।

মন্তব্য করুন