বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইতালির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করুন, ইলন মাস্ককে প্রসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:৪৮
ছবি-সংগৃহীত

ইটালির জোট সরকারের অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপে আইনি বাধা দেয়ায় দেশটির বিচারকদের তাদের পদ থেকে সরে যেতে হবে বলে মন্তব্য করে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন বিলিয়নিয়ার ও টেক টাইটান ইলন মাস্ক৷

বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্বয়ং ইটালির প্রেসিডেন্ট সের্গিও মাত্তারেলা৷ ইলন মাস্ককে ইটালির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করতে বলেছেন দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান৷

ইটালির ক্ষমতাসীন জোট সরকার এবং বিচার বিভাগের চলমান উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির মিত্র হিসাবে পরিচিত ইলন মাস্কের মন্তব্যের জের ধরে বুধবার এমন বিবৃতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট৷ তার এমন বিবৃতিকে একটি ‘বিরল ঘটনা’ হিসাবে দেখছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো৷

ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধারের পর ৮ নভেম্বর আট আশ্রয়প্রার্থীকে তাদের আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে আলবেনিয়ায় নির্মাণ করা আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছে ইটালি৷ এই আট জনের মধ্যে পাঁচ জন বাংলাদেশি এবং তিন জন মিশরীয়৷ ১১ নভেম্বর রোমের একটি আদালত বাংলাদেশি ও মিশরীয় আশ্রয়প্রার্থীদের আলবেনিয়ায় রেখে আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ এ প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত দিতে ইউরোপীয় বিচার আদালতের কাছেও আবেদন জানিয়েছেন ইটালির বিচারকেরা৷

এর আগে গত মাসে আশ্রয়প্রার্থীদের আরেকটি দলকে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধারের পর প্রথমবারের মতো আলবেনিয়ায় নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল রোম৷ সেবারও আদালতের রায়ে আশ্রয়প্রার্থীদের ইটালিতে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয় সরকার৷

আদালতের যুক্তি, বাংলাদেশ ও মিশর পুরোপুরি নিরাপদ দেশ নয়৷ তাই এই দুইটি দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আলবেনিয়ার আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ইটালিতে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত৷ ওইবার ইটালির আদালত বলেছিল, ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস বা ইউরোপীয় বিচার আদালতের একটি রায়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ ওই রায় অনুযায়ী, কোনো দেশকে নিরাপদ ঘোষণা দিতে হলে সেই দেশের প্রতিটি অঞ্চল সব ধর্মের, বর্ণের, গোত্রের, ভিন্নমতের মানুষের জন্য নিরাপদ থাকতে হবে৷

আদালতের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ইটালির অতি ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি এবং তার অনুসারীরা৷ আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন তিনি এবং তার মন্ত্রিসভা৷

ইটালি-আলবেনিয়া চুক্তিকে সফল করে ইউরোপজুড়ে মডেল হিসেবে দাঁড় করাতে চান জর্জা মেলোনি৷ এর মাধ্যমে এ বছরের জুনে সরকার ঘোষিত ১৯টি নিরাপদ দেশের তালিকাকে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেন আদালত কোনো বাধা দিতে না পারে৷ এর অর্থ হলো, এই ১৯টি দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় আবেদনগুলো দ্রুততম সময়ে আলবেনিয়ায় প্রক্রিয়াকরণ করে সেখান থেকেই ডিপোর্ট বা নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে পারবে ইটালি৷

ট্রাম্পের জয়ের পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখা ব্যক্তি ইলন মাস্ক৷

১১ নভেম্বর নিজের মালিকানাধীন মাইক্রো ব্লগিং সাইট ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে তিনি লিখেছেন, ‘‘এই বিচারকদের পদ ছাড়তে হবে৷’’

১৩ নভেম্বর ইটালির সংবাদপত্রগুলো প্রথম পাতায় গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে বিচার বিভাগ নিয়ে ইলন মাস্কের মন্তব্যের সংবাদটি৷ যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থাকে আরো দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য ইলন মাস্ককে দায়িত্ব দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এই দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ইটালির বিচার বিভাগ নিয়ে মন্তব্য করেন এই ধনকুবের৷

ইটালির মানুষের কাছে সবচেয়ে সম্মানিত নেতা হিসাবে জনমত জরিপে শীর্ষে থাকা দেশটির প্রেসিডেন্ট সের্গিও মাত্তারেলা বলেন, ‘‘ইটালি একটি মহান গণতান্ত্রিক দেশ এবং ...জানে কীভাবে নিজের বিষয়গুলো দেখা-শোনা করতে হয়৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘যে কোনো কেউ, বিশেষ করে, যদি ঘোষণা আসে, তিনি একটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং মিত্র দেশের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, তাকে অবশ্যই অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানাতে হবে এবং কোনো নির্দেশনা দেয়ার দায়িত্ব তিনি নিতে পারেন না৷’’

নিজের মত প্রকাশ করে যাবেন ইলন
প্রেসিডেন্টের এমন বিবৃতির পর ইটালীয় প্রতিনিধি আন্দ্রেয়া স্ট্রোপার মাধ্যমে নিজের বিবৃতিও তুলে ধরেছেন ইলন মাস্ক৷ এতে ইটালির প্রেসিডেন্ট এবং সংবিধানের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন তিনি৷ একইসঙ্গে বলেছেন, ‘‘অবাধে নিজের মতামত প্রকাশ’’ করার চর্চা অব্যাহত রাখবেন৷

ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির সঙ্গে সৌজন্য ফোনালাপেও একই ধরনের বার্তা দিয়েছিলেন ইলন মাস্ক৷ ইটালি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে বলে আশা করেন তিনি৷ একইসঙ্গে ইটালির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি উন্মুখ হয়ে আছেন বলেও জানিয়েছেন৷

ইলন মাস্কের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এখনও মুখ খোলেননি জর্জা মেলোনি৷ তবে তার মন্ত্রিসভার উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং অতি ডানপন্থি লীগ পার্টির নেতা মাত্তেও সালভিনি বলেছেন, ইলন মাস্ক সঠিক কথা বলেছেন৷

ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
ইলন মাস্ককে ‘নিউ অলিগার্কস’ বা ‘নব্য অভিজাত’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন ইটালির হাই কাউন্সিল অব জুডিশিয়ারি-এর আইনজীবী আর্নেস্তো কারবোন৷ তিনি বলেন, ইলন মাস্ক তাদেরই একজন ‘‘যারা বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান এবং গণতন্ত্রণের জন্য বিপজ্জনক৷’’

ইটালির ন্যাশনাল ম্যাজিস্ট্রেটস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, টেক টাইটান ইলন মাস্ক এমন মন্তব্য করে নিজের ‘‘মূর্খতা’’ প্রকাশ করেছেন৷ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলেসান্দ্রা মাদালেনা বলেন, ‘‘এর মধ্য দিয়ে শুধু বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকেই নয়, বরং প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে ইটালি নামের রাষ্ট্রটির সার্বভৌমত্ব নিয়ে৷’’

ইটালি-আলবেনিয়া অভিবাসন চুক্তি
উত্তর আফ্রিকার উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ২০২২ সালে ইটালির ক্ষমতায় আসেন জর্জা মেলোনি৷ তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের সালের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী এডি রামার নেতৃত্বাধীন আলবেনিয়া সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে ইটালির ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির সরকার৷ ‘বিতর্কিত’ এই চুক্তির অধীনেই আলবেনিয়াতে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে৷

চুক্তি অনুযায়ী, এই প্রকল্প আগামী পাঁচ বছরের জন্য কার্যকর থাকবে৷ ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় আনার পর দেশটির শেনজিন বন্দরের কেন্দ্রটিতে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করা হবে৷

পরে তাদের নেয়া হবে গজদারের তিনটি ভিন্ন অবকাঠামোতে৷ তিনটি অবকাঠামোর একটিতে রাখা হবে ‘ডিপোর্ট’ এর সিদ্ধান্ত পাওয়া অভিবাসীদের, দ্বিতীয়টিতে রাখা হবে আশ্রয়প্রার্থীদের এবং তৃতীয়টিতে রাখা হবে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা অভিযুক্ত অভিবাসীদের৷

যাদের আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর করা হবে তাদের আলবেনিয়া থেকে সরাসরি ইটালি নিয়ে যাওয়া হবে৷ আর যাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে তাদের আলবেনিয়া থেকেই ডিপোর্ট করা হবে বা নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে৷

মন্তব্য করুন