অবশেষে দুই ব্রিটিশ বাঙালি নতুন এক ইতিহাস গড়লেন। বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ সরকারের নগর মন্ত্রী ও সিলেটের মেয়ে রুশনারা আলী হাউজিং, কমিউনিটিজ এন্ড লোকাল গভর্মেন্ট মিনিস্টার এর দায়িত্ব পেয়েছেন।
তাদের এ অর্জনে ব্রিটিশ বাঙালিরা গর্বিত। আর এ কারণে মন্ত্রিত্ব না পাওয়ার যে হতাশা ছিল ব্রিটিশ বাঙালিদের মাঝে সেটি গতকাল থেকে আনন্দ উৎসবে পরিণত হয়েছে। ডাক পড়ছে বিভিন্ন সভা ও আড্ডার। সবখানেই চলছে মিষ্টি বিতরণ।
শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায় আছেন বাঙালিরা। বিগত দিনে টিউলিপ সিদ্দিক এই পদে ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত নির্বাচনে লেবারের জন্য এক সময়ের অনিরাপদ লন্ডনের হ্যামস্টেড ও হাইগেট আসন থেকে ২৩ হাজার ৪৩২ ভোট পেয়ে টানা চতুর্থবারের মতো তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামস পান মাত্র ৮ হাজার ৪৬২ ভোট। উল্লেখ্য হ্যামস্টেড ও কিলবার্ন আসনে টানা তিন বার এমপি হয়েছিলেন তিনি।৪১ বছর বয়সী টিউলিপ
সিদ্দিক লেবার পার্টির একজন সম্ভাবনাময় রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। টিউলিপ সিদ্দিক পূর্বের কনজারভেটিভ সরকারের অধীনে এইচএসবিসির সাবেক ব্যাংকার বিম আফোলামির স্থলাভিষিক্ত হবেন। ১৯৮২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন টিউলিপ।
তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে ক্যামডেন কাউন্সিলের কাউন্সিলার নির্বাচিত হন। ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. শফিক সিদ্দিক ও শেখ রেহানা দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে টিউলিপ দ্বিতীয়। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ রেহানার কন্যা হিসেবে তিনি বাংলাদেশি কমিউনিটিতে সমধিক পরিচিত।
এদিকে যুক্তরাজ্যে প্রথম বাংলাদেশি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) হলেন রুশনারা আলী। তিনি ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো- থেকে লেবার এমপি নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস রচনা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিশ্বনাথে জন্মগ্রহণকারী মিসেস আলী সাত বছর বয়সে তার পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন।
তিনি পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস-এ বড় হন। পূর্বে তিনি ছায়া মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তার এক নির্বাচনের ক্যামপেইন চলাকালে বলেন, আমার সংসদীয় কর্মজীবনে আমি যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধন জোরদার করার জন্য কাজ করেছি। আমি বাংলাদেশ সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের সভাপতিত্ব করেছি এবং বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত হিসেবে কাজ করেছি। ফলে আমাদের দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে।
উল্লেখ্য, রুশনারা আলী ২০১৬ সাল থেকে ব্রিটিশ সরকারের বাংলাদেশ বিষয়ক বাণিজ্য দূত হিসাবে দায়িত্বরত। ডিপার্টমেন্ট অব বিজনেস এন্ড ট্রেড’ এবং ‘ফরেন অফিস ও অন্যান্যদের নিয়ে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য বাড়ানো, শ্রমিকদের জীবনমান উন্নতকরণে কাজ করেছেন। এভিয়েশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে একটি চুক্তি নিশ্চিত করেছেন যার মূল্যমান হবে এক বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি। এতে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এভিয়েশন সেক্টরে নতুন কাজের সুযোগ করে দেবে। এই সেক্টরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানার মেয়ে তাই আশা করা যাচ্ছে এই দুই সূর্যসন্তান এক সাথে দুই দেশের বাঙালিদের জন্য কাজ করবেন।
মন্তব্য করুন