শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যরাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াফিচারশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১৮ মে ২০২৪, ০৫:৩৪

আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া বাংলাদেশিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য৷ বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে হওয়া ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন ডিল বা দ্রুত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় এসব বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাবে ব্রিটিশ সরকার৷ খবর ইনফোমাইগ্রেন্টস।

গত ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে ভিসা নিয়ে আসা প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি স্থায়ী হতে যুক্তরাজ্যে  আসে। এসব বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্য ছিল ১২ মাসের মধ্যে আশ্রয় চেয়ে আবদেন করা৷

তবে দুই দেশের দ্রুত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় তাদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। যুক্তরাজ্যের হিসেব অনুসারে  ভিসার নিয়মকানুন অপব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। 

ইনফোমাইগ্রেন্ট তাদের প্রতিবেদনে জানায়, শিক্ষার্থী, কর্মী বা ভিজিট ভিসা নিয়ে এসব বাংলাদেশিরা ২০২৩ সালের মার্চ থেকে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন৷ ব্রিটেনে স্থায়ী হতে ‘ব্যাক ডোর’ বা ‘অসাধু পন্থা’ কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য৷ কিন্তু দেখা গেছে, মাত্র পাঁচ শতাংশ বাংলাদেশির আশ্রয় আবেদন সফল হয়েছে৷

যুক্তরাজ্যের অনিয়মিত অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল টমলিনসন বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তি সই করেছে৷ এই চুক্তির অধীনে যাদের আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে শুধুই তারাই নয়, বরং যারা অপরাধী হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছেন এবং যাদের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে তাদের সবাইকে ডিপোর্ট করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

১৬ মে লন্ডনে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র বিষয়ক প্রথম যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপে এই চুক্তিটি সই হয়েছে৷ চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশ তাদের অংশীদারত্ব জোরদার করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে৷

যুক্তরাজ্য সরকার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ানের মধ্যে সাম্প্রতিক এক বৈঠকের ভিত্তিতে ওয়ার্কিং গ্রুপটি তৈরি হয়েছে৷ 

উক্ত বৈঠকে আলোচনার সময় বাংলাদেশের প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, অনিয়মিত অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি রয়েছে৷ ওই সময় ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তিতেও সম্মতি দেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান৷। আর এ জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানায় অ্যান-মেরি ট্রেভিলিয়ান৷

যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের পর টমলিনসন বলেন, ‘‘অনিয়মিতভাবে আসা বা থাকা বন্ধ করার জন্য ডিপোর্ট বা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে গতিশীল করা আমাদের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ বাংলাদেশ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং এটি একটি দারুণ বিষয় যে আমরা তাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসনকে গতিশীল করাসহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সম্পর্ক জোরদার করছি৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যে প্রমাণ পেয়েছি, এ ধরনের চুক্তিগুলো অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে৷ বৈশ্বিক সমস্যা নিরসনে বৈশ্বিক সমাধান প্রয়োজন এবং সবার জন্য একটি ন্যায্য ব্যবস্থা তৈরি করতে বাংলাদেশ ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা প্রস্তুত৷’’।

সাধারণত ভিসার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি পাওয়া যায়৷ সেটা কয়েক মাস পর্যন্তও হতে পারে৷ 

কিন্তু যারা আশ্রয় আবেদন করেন তারা দীর্ঘদিন বা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে থাকার সুযোগ পান৷ কারণ, মানবাধিকার আইন কিংবা আদালতের কারণে তাদের ডিপোর্ট করার ক্ষেত্রে বেগ পেতে হয় হোম অফিস বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে৷

গত মাসে ফাঁস হওয়া একটি সরকারি নথিতে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা ২১ হাজার ৫২৫ জন ব্যক্তি আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন৷ যা আগের তুলনায় ১৫৪ শতাংশ বেড়েছে৷

এর অর্থ দাঁড়ালো, ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা প্রতি ১৪০ জনে একজন আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন৷ গত এক দশকের পরিসংখ্যান বলছে, এক লাখ দুই হাজার মানুষ অল্পদিনের ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে এসে স্থায়ী হতে আশ্রয় আবেদনের পথ বেছে নিয়েছেন৷

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নাগরিকদের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি৷ যুক্তরাজ্যে ভিসা নিয়ে এসে আশ্রয় আবেদনের হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ শীর্ষ পাঁচে রয়েছে৷

সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে এসে আশ্রয় চাওয়া মানুষের মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছেন পাকিস্তানের নাগরিকেরা৷ দেশটির ১৭ হাজার চারশ নাগরিক ভিসা নিয়ে এসে আশ্রয় আবেদন করেছেন যুক্তরাজ্যে৷ 

এরপরেই আছে বাংলাদেশের নাম৷ আশ্রয় চেয়ে আবেদন করা বাংলাদেশির সংখ্যা ১১ হাজার৷ এছাড়া ৭ হাজার ৪ শত আবেদন নিয়ে তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে ভারত৷ ৬ হাজার ৬ শ আবেদন নিয়ে চতুর্থ নাইজেরিয়া এবং ৬ হাজার আবেদন নিয়ে পঞ্চম স্থানে আফগানিস্তান৷

ভিসা নিয়ে এসে যারা আশ্রয় আবেদন করেন তাদের তথ্য যুক্তরাজ্যের হোম অফিসে ভিসা-অ্যসাইলাম স্যুইচিং টেবিল নামে সংরক্ষণ করা হয়৷

নিয়মিত অভিবাসন সহজ করা, ভিসার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকানো এবং তথ্য আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ৷

২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার নেই বিভিন্ন দেশের এমন ২৬ হাজার মানুষকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ সংখ্যাটি তার আগের বছরের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেশি৷

সূত্র (দ্য টেলিগ্রাফ, ইউকে ডট জিওভি)

মন্তব্য করুন