সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে নাটকীয়ভাবে উৎখাতের এক সপ্তাহ পরই শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে গেছে। সিরিয়ার নতুন শাসকগোষ্ঠী স্কুল খোলার নির্দেশ দেওয়ার পর তা কার্যকর হয়। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি ও সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়া পুনর্গঠনের জন্য দেশটির নতুন ‘ডি ফ্যাক্টো’ নেতা আহমাদ আল-শারা বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। বোমার আঘাতে দেশটির বহু শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত হয়েছে অর্থনীতি। এখনও লাখ লাখ শরণার্থী সিরিয়ার বাইরে বিভিন্ন শিবিরে বসবাস করছেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরব দেশগুলোর সাপ্তাহিক প্রথম কর্মদিবস রোববার দেশজুড়ে বেশিরভাগ স্কুল খুলেছে। তবে পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার কারণে কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানদের ক্লাসে পাঠাচ্ছেন না।
রোববার সকালে দামেস্কের একটি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে অপেক্ষা করতে থাকে। স্কুল সেক্রেটারি রায়েদ নাসের নতুন সরকারের পতাকা ঝুলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে তারা করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানায়।
স্কুলের কোনও প্রকার ক্ষয়ক্ষতি হয়নি জানিয়ে নাসের বলেন বলেন, “সবকিছুই ভালো। শিক্ষার্থীদের নিরাপদে স্কুলে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় সেবাগুলো নিশ্চিত করতে আমরা দুই-তিন দিন ধরে কাজ করেছি।”
শিক্ষার্থী সালাহ আল-দিন দিয়াব শ্রেণিকক্ষে পতাকা টাঙ্গিয়ে দেয়। সে বলে, “আমি ভীষণ খুশি এবং আশাবাদী। আগে ভয় পেতাম যে, আমাকে সামরিক বাহিনীতেই যোগ দিতে হবে। চেকপোস্টের কাছে গেলে আশঙ্কা থাকত মনে।”
ইরান ও রাশিয়া সমর্থিত আসাদ সরকারের পতনের এক সপ্তাহ পর সিরিয়া যখন পুনর্গঠনের চেষ্টা শুরু করেছে, তখন তার প্রতিবেশী ও অন্যান্য বিদেশী শক্তিগুলো দেশটি নিয়ে তাদের নতুন অবস্থান কি হবে তা নিয়ে কাজ করছে।
জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক দূত গেইর পেডারসেন রোববার বলেছেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তার জন্য তিনি দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার দ্রুত অবসানের আশা করছেন।
এদিকে দামেস্ক থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, গত ৮ ডিসেম্বর ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) দখলের পর সিরিয়ার রাজধানীতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। দৈনন্দিন জীবনেও মৃদু গতির সঞ্চার করেছে।
৫৬ বছর বয়সী তিন সন্তানের মা রাঘিদা ঘোসন বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরত পাঠাতে বলেছে। তিনি এএফপিকে বলেন, আগামী দু’দিনের মধ্যে ছোটরাও ফিরে যাবে।
একজন স্কুল কর্মচারী বলেন, ৩০ শতাংশের বেশি স্কুল ছাত্র-ছাত্রী রোববার ক্লাসে ফেরত আসেনি, তবে ধীরে ধীরে তাদের উপস্থিতি বাড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আবার কর্মচঞ্চল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। তবে রোববার প্রশাসনিক কর্মীদের কাজে উপস্থিতি ছিল কম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশ্ববিদ্যালয় কর্মী বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক হতে এখনও সময় লাগবে।
মূলত সিরিয়ায় কর্ম সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার অনেক লোকই স্বাভাবিকভাবে কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন। ব্যবসায়িক জীবনও নতুনভাবে শুরু হয়েছে।
মন্তব্য করুন