কড়া পোশাকবিধির প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজের পরনের পোশাক খুলে ফেলেছিলেন তরুণী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে হেঁটেছিলেন শুধু অন্তর্বাস পরে। সেই তরুণীকে গ্রেফতার করেছে ইরানের পুলিশ। যার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে প্রতিবাদ শুরু হয়ে গিয়েছে দেশে। তরুণীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি উঠছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে রাষ্ট্রপুঞ্জও।
ইরানে আন্তর্জাতিক অসরকারি সংস্থা অ্যামনেস্টি ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়ে তরুণীর মুক্তির দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন তরুণীর ওপর যেন কোনও রকম অত্যাচার না হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
তারা লিখেছে, ‘‘হেফাজতে তরুণীর উপর অত্যাচার এবং দুর্ব্যবহার যাতে না হয়, কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি যাতে নিজের পরিবার এবং আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে এবং সর্বোপরি, তরুণীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’’ তরুণীকে গ্রেফতারের সময়ে মারধর এবং তাঁর উপর যৌন হেনস্থার কিছু অভিযোগ উঠে এসেছে। সেই অভিযোগগুলিরও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে অ্যামনেস্টি।
ইরানের ওই তরুণী গ্রেফতার হওয়ার পর পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে, জানিয়েছেন সে দেশে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধি মাই সাটো। তরুণীর অন্তর্বাস পরে হাঁটার ভিডিয়োটি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘‘এই ঘটনাটির দিকে আমরা নজর রেখেছি। বিশেষত, ইরান সরকারের তরফে কী পদক্ষেপ করা হয়, কী বিবৃতি আসে, তার দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’’
শনিবার ইরানের একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যে শুধু অন্তর্বাস পরে হাঁটছেন তরুণী। হিজাব তো বটেই, পরনের পোশাকের অধিকাংশই তিনি খুলে ফেলেছেন। ওই ভিডিয়োটিতে অন্য যে মহিলাদের দেখা গিয়েছিল, তাঁরা সকলেই আপাদমস্তক হিজাব পরে ছিলেন।
ইরানের শরিয়ত আইন অনুযায়ী, মহিলাদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। এ নিয়ে কড়াকড়ি রয়েছে গোটা দেশে। কড়া পোশাকবিধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তরুণী পোশাক খুলেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও প্রাথমিক ভাবে পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলেন, ওই তরুণী মানসিক ভারসাম্যহীন।
তাঁকে নিরাপত্তারক্ষীরা আটক করে নিয়ে গিয়েছিল। বলা হয়েছিল, তরুণীকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হতে পারে। কিন্তু পরে জানা যায় তাঁকে গ্রেফতার করেছেন ইরান কর্তৃপক্ষ। তরুণীর হদিস মিলছে না বলেও খবর ছড়ায়। যার জেরে দেশ এমনকি সারা বিশ্বে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।
২০২২ সালে অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল ইরানে। ১৯ বছরের মাহশা আমিনির মৃত্যু ইরানে আগুন জ্বালিয়েছিল। পোশাকবিধি না মানায় তাঁকে আটক করেছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তার পর হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়। মাহশার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি হিজাব দিয়ে মাথার চুল পুরোপুরি ঢাকেননি।
তাই তাঁকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে আটক করে পুলিশ। অভিযোগ, হেফাজতে থাকাকালীন অত্যাচার করে মাহশাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর প্রতিবাদ বিক্ষোভে সরব হয় গোটা দেশ। প্রকাশ্যে হিজাব পুড়িয়ে, মাথার চুল কেটে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ইরানের মেয়েরা। কঠোর ভাবে সেই বিক্ষোভ দমন করেছিল ইরান সরকার। শনিবারের ঘটনাও তেমন কোনও দিকে এগোতে পারে, আশঙ্কা পর্যবেক্ষকদের।
মন্তব্য করুন