ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব সম্বলিত চিঠি পেয়েছে। তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি বলেছেন, সর্বোচ্চ চাপের মধ্যে থেকে সরাসরি আলোচনা করার নীতিতে বিশ্বাস করে না তেহরান।
আমেরিকার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা না করার এই নিবন্ধে বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরানের সরাসরি আলোচনা না হওয়ার কারণগুলো আলোচনা করা হয়েছে।
অবিশ্বাস
ইরানে মার্কিন হস্তক্ষেপের ইতিহাস (যেমন ১৯৫৩ সালের অভ্যুত্থান ও পাহলভি শাসনের প্রতি সমর্থন) এবং ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর শত্রুতাপূর্ণ কর্মকাণ্ডের ফলে ইরানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বড় ধরণের অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।
ইরান মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ইরানের শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো মার্কিন কর্মকর্তাদের বক্তব্যের পর এই মনোভাব আরও তীব্র হয়েছে।
আমেরিকার সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের কৌশল
ট্রাম্পের প্রথম আমলে মার্কিন নীতি এবং পরবর্তীতে জো বাইডেনের নীতির ভিত্তি ছিল- ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ। এর মাধ্যমে তারা ইরানকে মার্কিন নীতি মেনে নিতে বাধ্য করতে চেয়েছে। ইরান এই পদ্ধতিকে "গুণ্ডামি" বলে মনে করে এবং বিশ্বাস করে, চাপের মধ্যে আলোচনা করলে একতরফা ছাড় আদায়ের চেষ্টা করবে ওয়াশিংটন, এর বাইরে কোনো লাভ হবে না।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের সংসদ স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কলিবফ জোর দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্পের চিঠিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তার মতে, "আমেরিকার গুণ্ডামি করছে"।
পরমাণু সমঝোতা থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা
আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা বা জেসিপিওএ থেকে সরে যায় ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে। ট্রাম্পের এই আচরণ ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরোক্ষ আলোচনার পথ বেছে নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কারণ পরমাণু সমঝোতা বা জেসিপিওএ ছিল ইরানের পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি শক্তি ও জার্মানির কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফসল এবং নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর ইশতেহারের মাধ্যমে অনুমোদিত একটি চুক্তি যা ট্রাম্প লঙ্ঘন করেছেন।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেরিকা স্টাডিজের অধ্যাপক ফুয়াদ ইজাদি বলেছেন, ইরানের যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে সফল অভিজ্ঞতা নেই এবং পরমাণু সমঝোতা সংক্রান্ত আলোচনা দুই বছর স্থায়ী হয়েছিল এবং একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বারাক ওবামার প্রশাসনই সেই প্রতিশ্রুতি সম্পূর্ণরূপে পূরণ করেনি। এরপর ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে সেই চুক্তি থেকে সরে আসেন।
ইরানের সন্ত্রাসবিরোধী কমান্ডারের হত্যাকাণ্ড
ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের সন্ত্রাসবিরোধী কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সোলাইমানির হত্যাকাণ্ড এবং ইরানের উপর সামরিক আক্রমণের হুমকির মতো বিষয়ও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।#
মন্তব্য করুন