বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

যে কারণে লিবিয়ায় ১০ এনজিও নিষিদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৫

আফ্রিকার অন্যান্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের লিবিয়ায় ‘বসতি স্থাপন’ বা পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেয়ার পরিকল্পনার অভিযোগ এনে দশটি আন্তর্জাতিক এনজিও-এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ৷ বুধবার (২ এপ্রিল) এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে লিবিয়ান কর্তৃপক্ষ।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যেসব অভিবাসী ইউরোপে পৌঁছাতে চান, তাদের কাছে উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া অন্যতম প্রধান প্রস্থান পয়েন্ট৷ সাব-সাহার আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগিরকেরাও ইউরোপ পৌঁছানোর আশায় ভিড় জমান লিবিয়ায়।

লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থার (আইএসএ) মুখপাত্র সালেম গাইথ বলেছেন, নিষিদ্ধ হওয়া এনজিওগুলো লিবিয়ার জাতীয় নিরাপত্তাকে ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন বিরূপ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত’’৷

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘‘লিবিয়ায় আফ্রিকান বংশোদ্ভূত অভিবাসীদের বসতি স্থাপনের পরিকল্পনাকে একটি প্রতিকূল উদ্যোগ হিসাবে দেখা হচ্ছে৷ এর উদ্দেশ্য, লিবিয়ার জনমিতি বদলে দেয়া এবং দেশটির সমাজকে হুমকির মুখে ফেলা৷’’

আইএসএ মুখপাত্র জানান, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ), তেরে দে হোমস, সিইএসভিআই, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কর্পস, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি, ডেনিশ রিফিউজি কাউন্সিল-সহ মোট দশটি এনজিওকে লিবিয়ায় কার্যক্রম স্থগিত করতে বলা হয়েছে৷ একইসঙ্গে ত্রিপোলিতে তাদের অফিস বন্ধ করে দিতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান সালেম৷

আইএসএ-এর বিরুদ্ধে কূটনীতিকদের অভিযোগ
লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা (আইএসএ)-এর বিরুদ্ধে বেসরকারি সংস্থা এবং মানবাধিকার কর্মীদের উপর ‘দমন-পীড়নের’ অভিযোগ এনেছেন ইউরোপীয় দেশগুলোর ১৭ জন রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা৷ বুধবার (২ এপ্রিল) এমন একটি নথি পেয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি৷ 

ধারণা করা হচ্ছে, ওই অভিযোগের জের ধরেই দেশটিতে দশটি আন্তর্জাতিক এনজিও-এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷

যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়াকে শাসন করছে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রশাসন৷ এর মধ্যে ত্রিপোলি প্রশাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ৷ আর ত্রিপোলির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনের পরিচালিত হয় আইএসএ৷

২৭ মার্চ ত্রিপোলিভিত্তিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে কূটনীতিকেরা বলেছেন, ‘‘আইএসএ ছয়টি আন্তর্জাতিক এনজিওর কমপক্ষে ১৮ জন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়েছে৷’’

এদের মধ্যে কয়েকজন এনজিও কর্মীর পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে৷

ওই চিঠিতে কূটনীতিকেরা আরো বলেছেন, আইএসএ-এর এজেন্টরা এনজিও কর্মীদের ‘‘তাদের পদ থেকে পদত্যাগ’’ করতে এবং আর কখনও কোনো আন্তর্জাতিক এনজিওতে কাজ না করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করেছে৷

কূটনীতিকেরা অভিযোগ করেছেন, ‘‘সাবধানতাবশত আরো অনেক সংস্থা তাদের কার্যক্রমও স্থগিত করছে৷’’

অভিবাসীদের জন্য ‘‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’’ ইস্যুতে আইএসএ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ অন্যান্য দেশের কূটনীতিক এবং জাতিসংঘের শীর্ষপর্যায়ের একজন মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি৷

‘‘বন্ধ হয়ে যাওয়া এনজিওগুলোর কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে এবং যত দ্রুত সম্ভব মানবিক কর্মসূচিগুলো চালিয়ে নেয়ার’’ অনুমতি দিতেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন কূটনীতিকেরা৷

এনজিওগুলো ইইউ’র হাতিয়ার: আইএসএ
২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহে লিবিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে উৎখাত এবং হত্যা করা হয়৷ এরপর থেকে লিবিয়ায় সহিংসতা এবং অস্থিতিশীলতা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ এই সুযোগে দেশটি হয়ে উঠেছে মানবপাচারকারীদের ঘাঁটি৷ অভিবাসীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে পাচারকারীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এবং অভিবাসীদের জীবনকে করে তুলেছে বিপন্ন৷ জাতিসংঘসহ একাধিক বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্যের সত্যতা৷

এমনকি মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিবাসীদের দীর্ঘদিন ধরে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগও আনা হয়েছে৷ জাতিসংঘের এক পরিসংখ্যান বলছে, লিবিয়ায় বিভিন্ন দেশের সাত লাখেরও বেশি অভিবাসী রয়েছেন৷ তবে লিবিয়ান কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।

আইএসএ মুখপাত্র গাইথ অভিযোগ করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন লিবিয়ার ‘‘অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিচ্ছে’’ এবং অভিবাসীদের লিবিয়ায় পুনর্বাসনে বাধ্য করতে এনজিওগুলোকে ‘‘হাতিয়ার’’ হিসাবে ব্যবহার করেছে৷

এছাড়াও, এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে ‘‘অর্থ পাচার’’ এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগও এনেছেন তিনি৷

ত্রিপোলিভিত্তিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইমাদ ট্রাবেলসিও গত মাসে বলেছিলেন, লিবিয়া ‘‘এককভাবে অনিয়মিত অভিবাসনের বোঝা বহন করবে না এবং বসতি স্থাপনের অঞ্চলে পরিণত হবে না৷’’

মন্তব্য করুন