চীন এবং রাশিয়ার পরে এ বার গৃহযুদ্ধের অভিঘাত সামলাতে ভারতের দ্বারস্থ হয়েছে মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকার। এই উদ্দেশ্যে রাজধানী নেপিডোয় ভারতীয় দূতাবাসে চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মন্ত্রী অং সান এবং উপ-বিদেশমন্ত্রী লুইন বৈঠক করতে গিয়েছিলেন বলে মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী আউং সান সু চির সমর্থক স্বঘোষিত ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইরাওয়াদি’ জানিয়েছে।
মায়ানমারের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অভয় ঠাকুর এবং বিদেশ মন্ত্রকের আধিকারিকেরা ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন। প্রকাশিত খবরে দাবি, আলোচনায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বাণিজ্য এবং পরিবহণক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পাশাপাশি ‘পারস্পরিক কৌশলগত স্বার্থের ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথ অনুসন্ধান’ করার বিষয়টিও এসেছে।
আর তা নিয়েই তৈরি হয়েছে জল্পনা। চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরে জুন্টা প্রধান মিন অং হ্লাইং এ বার গৃহযুদ্ধ ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হয়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন।
ঘটনাচক্রে, নেপিডোর ভারতীয় দূতাবাসে ওই বৈঠক চালাকালীন জুন্টা প্রধান হ্লাইং রাশিয়ায় গিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। ওই বৈঠকের পরে মায়ানমারে একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন পুতিন। তার আগে বিদ্রোহী জোটের অগ্রগতি ঠেকাতে সামরিক জুন্টা সরকারকে ছ’টি আধুনিক যুদ্ধবিমানও দিয়েছেন তিনি।
গত জানুয়ারিতে রাখাইন প্রদেশের রাজধানী সিত্তে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত। মাল্টি-মডেল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট করিডোরের অংশ হিসাবে সিত্তে বন্দর থেকে কলকাতায় সরাসরি পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা চালুরও বার্তা দিয়েছিলেন।
কিন্তু ঘটনাচক্রে, তার পর ওই প্রদেশের ৯০ শতাংশ এলাকায় বিদ্রোহী জোটের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে চলে গিয়েছে। বস্তুত, গত দেড় বছরের গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহী জোটের হাতে দেশের অর্ধেকের বেশি অংশ হারিয়েছে জুন্টা।
কিন্তু জানুয়ারিতে বিদ্রোহী জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ) যুদ্ধবিরতি চুক্তি করায় হ্লাইং সরকার কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি রূপায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট জিনপিং। এ বার কি ভারতের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে জুন্টা?
মন্তব্য করুন