অনিয়মিত অভিবাসীদের আটক রাখার বৈধতা নিশ্চিত করতে আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ইটালির ডানপন্থি সরকার৷ অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেশটির সাধারণ আদালত থেকে নিয়মিত আপিল আদালতে স্থানান্তর করতে চায় সরকার৷
আলবেনিয়ায় ইটালির তৈরি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অভিবাসীদের আটক রাখার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে দেশটির একাধিক আদালত৷ এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের টানাপড়েন তৈরি হয়৷ এমন অবস্থায় সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্তকে বিচারকদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক আচরণ হিসাবে দেখছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো৷
ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা পুরুষ অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় তৈরি আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে আশ্রয় আবেদন যাচাই বাছাই করতে চায় ইটালি৷ এর মাধ্যমে অভিবাসীদের ডিপোর্ট বা নিজ দেশের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি গতিশীল করাই সরকারের মূল উদ্দেশ্য৷
সরকারের নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, অভিবাসীদের আটকের বিষয় সংক্রান্ত রায় আগামীতে নির্ধারিত হবে ইটালির নিয়মিত আপিল আদালতে৷ ২০ নভেম্বর দিনের শেষভাগে সরকারের নতুন এই প্রস্তাবটিকে অনুমোদন দিয়েছে সংসদীয় কমিটি৷
পরিকল্পনাটি এখনও পার্লামেন্টের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে৷ পার্লামেন্টে অবশ্য সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে৷ ফলে, এটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে কোনো বাধার মুখে পড়ার কথা নয়৷
বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডি) আইন প্রণেতারা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘এটি তাদের বিরুদ্ধে স্পষ্টত প্রতিশোধমূলক সিদ্ধান্ত... যারা আইন লঙ্ঘন করে সরকারের নীতির কাছে নত হতে অস্বীকার করেছেন৷’’
প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির দল ব্রাদার্স অব ইটালি বলেছে, মানবাধিকার সম্পর্কিত ইস্যুটিকে উচ্চ আদালত স্থানান্তরের মানে হচ্ছে পুরো প্রক্রিয়াটিকে আরো দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করা৷
ইটালির বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে যে দেশগুলোকে নিরাপদ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব দেশে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হলে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকবেন৷
আদালতের যুক্তি, বাংলাদেশ ও মিশর পুরোপুরি নিরাপদ দেশ নয়৷ তাই এই দুইটি দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আলবেনিয়ার আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ইটালিতে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত৷
ইটালির বিচারকেরা বলেছেন, ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস বা ইউরোপীয় বিচার আদালতের একটি রায়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ ওই রায় অনুযায়ী, কোনো দেশকে নিরাপদ ঘোষণা দিতে হলে সেই দেশের প্রতিটি অঞ্চল সব ধর্মের, বর্ণের, গোত্রের ও ভিন্নমতের মানুষের জন্য নিরাপদ হতে হবে৷
আদালতের সিদ্ধান্তে শুধু মেলোনি ও তার মন্ত্রিসভা ক্ষুব্ধ হয়নি, বরং এই ইস্যুটি ইটালির প্রেসিডেন্ট সের্গিও মাত্তারেলা ও অ্যামেরিকান বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের মধ্যে উত্তেজনাও ছড়িয়ে দিয়েছে৷
১১ নভেম্বর নিজের মালিকানাধীন মাইক্রো ব্লগিং সাইট ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে ইলন মাস্ক লিখেছেন, ‘‘এই বিচারকদের পদ ছাড়তে হবে৷’’
এর প্রতিক্রিয়ায় ইলন মাস্ককে ইটালির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করতে বলেছেন দেশটির মানুষের কাছে সবচেয়ে সম্মানিত নেতা হিসাবে জনমত জরিপে শীর্ষে থাকা প্রেসিডেন্ট সের্গিও মাত্তারেলা৷ তিনি বলেন, ‘‘ইটালি একটি মহান গণতান্ত্রিক দেশ এবং ...জানে কীভাবে নিজের বিষয়গুলো দেখা-শোনা করতে হয়৷’’
বিরোধী দলের আইন প্রণেতারা বিচারকদের ক্ষমতাহীন করার লক্ষ্যে সরকারের নতুন সিদ্ধান্তকে একটি ‘মাস্কীয় সংশোধন’ বলে অভিহিত করেছেন৷ তারা বলছেন, এটি ইটালির পার্লামেন্টের জন্য একটি ‘অন্ধকার অধ্যায়৷’
মন্তব্য করুন