প্রবীণ এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধীদের যত্ন-আত্তির জন্য আগামী বছর আরও ১০ হাজার অভিবাসীকর্মী নিয়োগ দেবে ইতালি। তবে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ থেকে এই ভিসার আবেদন কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পরিচর্যাকর্মীর ঘাটতি পূরণে অভিবাসন বিষয়ক নতুন একটি প্যাকেজ নিয়েছে সরকার। সেই প্যাকেজের আওতায় আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে অতিরিক্ত ১০ হাজার অভিবাসীকর্মী নিয়োগে ভিসা ইস্যু করা হবে। ২ অক্টোবর এক ডিক্রিতে এই তথ্য জানিয়েছে ইতালির সরকার।
ইতালির সমাজে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে বার্ধক্যজনিত নানা সংকটে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও। কিন্তু দেশটির জন্মহারও আশানুরূপ নয়। ফলে, পরিচর্যাকর্মীদের ঘাটতি দীর্ঘদিন ধরে মোকাবিলা করে আসছে দেশটি। এ খাতে জনবল বাড়াতে অভিবাসী কর্মীদের ইতালি আনার সুযোগ দিতে সরকারের কাছে বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছে স্যান্ট’এগিডিও ক্যাথলিক গ্রুপসহ বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা।
২০২৩-২০২৫ সময়কালের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের শ্রমভিসার কোটা গত বছর বাড়িয়ে চার লাখ ৫২ হাজার করেছে মেলোনি সরকার। আগের তিন বছরের তুলনায় সংখ্যাটি প্রায় ১৫০ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে করোনা মহামারির আগে ইতালি মাত্র ৩০ হাজার ৮৫০টি ভিসা ইস্যু করেছিল।
বাংলাদেশিদের আবেদনে কঠোর যাচাই-বাছাই
অভিবাসন বিষয়ক নতুন এই ডিক্রিতে অভিবাসীদের ভিসা প্রক্রিয়ায় যেন কোনো ধরনের জালিয়াতি বা প্রতারণামূলক কিছু না ঘটে সেজন্য বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থাও নিচ্ছে দেশটি। সম্প্রতি ভিসা জালিয়াতি বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির সরকারপ্রধান মেলোনি।
গত ৪ জুন ইতালির মন্ত্রিসভার এক বৈঠকের পর এক ভিডিও বার্তায় জর্জা মেলোনি বলেন, কূটনীতিকেরা বাংলাদেশে শ্রমভিসা কেনাবেচার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। দেশটিতে এক একটি ভিসা ১৫ হাজার ইউরো (প্রায় ১৮ লাখ টাকা) করে বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন তারা।
ইতালির প্রধানমন্ত্রীর মতে দেশটিতে ভিসা ব্যবস্থায় থাকা ফাঁককে কাজে লাগিয়ে বিদেশি কর্মীদের অবৈধভাবে দেশটিতে পাচার করছে অপরাধীচক্র। মাফিয়াবিরোধী প্রসিকিউটরের এ নিয়ে তদন্ত করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
জর্জা মেলোনি সেদিন বলেছিলেন, দেশটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে আসা কর্মীদের সবচেয়ে বড় অংশ আসে বাংলাদেশ থেকে। ইতালির শ্রমভিসা নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন জর্জা মেলোনি।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরই অভিবাসন সংক্রান্ত নতুন ডিক্রিতে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। আর এতে চাপ বেড়েছে বাংলাদেশের ওপর।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোতে ভিসা প্রতারণায় উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। তাই ২০২৫ সালে এই দেশগুলো থেকে যারা আবেদন করবেন, তাদের বিষয়ে কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির ডানপন্থি সরকার অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও, শ্রমঘাটতি পূরণে দেশটি আইনি অভিবাসনের সুযোগ বাড়িয়েছে।
সমুদ্র পেরিয়ে আসা অভিবাসীদের ঠেকাতে নতুন পরিকল্পনা
২ অক্টোবর সরকারঘোষিত নতুন ডিক্রিতেও সমুদ্রে বিপদগ্রস্ত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধারে সক্রিয় এনজিওগুলোর ওপর আরো বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
ভূমধ্যসাগরে সংকটাপন্ন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের খুঁজে বের করা এবং তাদের উদ্ধারে সহযোগিতা করার জন্য অনুসন্ধানী বিমান ব্যবহার করে এনজিওগুলো। সরকার জানিয়েছে, এসব বিমানকে এখন থেকে গতিবিধি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে, অন্যথায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বা জরিমানা আদায় করা হবে।
এ বছরের ৭ এপ্রিল অভিবাসীবাহী নৌকা শনাক্তের কাজে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থার বিমানগুলোকে তিনটি বিমানবন্দর আর ব্যবহার করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইতালি৷ এই সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে এনজিওগুলো।
বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্য নিষিদ্ধ এই তিনটি বিমানবন্দর হলো: সিসিলি, পান্তেলেরিয়া ও লাম্পেদুসা। ওই দিন ইতালির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (ইএনসিএ) এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছিল, শিপিং রুটের কাছাকাছি থাকা এই তিনটি বিমানবন্দর থেকে এনজিওগুলো অভিবাসীদের শনাক্ত করার কাজে ব্যবহারের বিমানগুলো আর উড়াতে পারবে না।
এর আগে সমুদ্রে উদ্ধারকারী জাহাজগুলোরও অভিযানকে সীমিত করেছে ইতালি। বিভিন্ন সময়ে এসব উদ্ধারকারী জাহাজগুলোকে সমুদ্র বন্দরে আটকে রাখার পাশাপাশি অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন