শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যরাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াফিচারশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

অস্ট্রিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য যে যোগ্যতাগুলো থাকা দরকার

প্রবাহ বাংলা নিউজ
  ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১৩:৪৫
ছবি- সংগৃহীত

বাস্তবসম্মত ও মেধাবৃত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার সহায়ক ও সুস্থ পরিবেশে শিক্ষার সর্বোচ্চ পর্যায় উচ্চশিক্ষার নিশ্চায়ক হলো অস্ট্রিয়া। তবে শিক্ষার অঙ্কুরে নিহিত থাকে কাঙ্ক্ষিত জীবনধারণের স্বপ্ন। আর এই স্বপ্ন বুকে নিয়েই সম্পূর্ণ অপরিচিত দেশটিতে পাড়ি জমান লাখ লাখ শিক্ষার্থী।

বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো অন্যান্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর চেয়ে তুলনামুলকভাবে সাশ্রয়ী খরচে পড়াশোনার সুযোগ দেয়। শিক্ষাক্ষেত্রে এই বিশ্বায়নের উজ্জ্বল একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে সেঙ্গেনভুক্ত দেশ অস্ট্রিয়া।

৯৮ শতাংশ সাক্ষরতার হারের এই দেশটি বিগত দশক জুড়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ব মানের শিক্ষা নিশ্চিত করে আসছে। সেই অভাবনীয় সুযোগ লাভের জন্য চলুন- দেশটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া ও খরচসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।

অস্ট্রিয়া কেন উচ্চশিক্ষার অন্যতম গন্তব্য

জাতীয়ভাবে আর্থ-সামাজিক অবস্থা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্ট্রিয়াকে একটি নিরাপদ অভিবাসনের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি বিশ্ব জুড়ে ব্যবসা ও শিক্ষাভিত্তিক নেটওয়ার্কগুলোতে এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দেশটিকে পরিণত করেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে।

ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সদস্য দেশটি ২৯ দশমিক ৪ গ্লোবাল ক্রাইম ইন্ডেক্স নিয়ে পৃথিবীর শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে ৩০তম অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, ১ দশমিক ৩১৩ গ্লোবাল পিস ইন্ডেক্স অধিকারী এই রাষ্ট্রটি বিশ্বের তৃতীয় শান্তিপূর্ণ দেশ।

অস্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ব জুড়ে শিক্ষার্থী ও স্কলারদের অভিজাত নেটওয়ার্কগুলোতে বহুল সমাদৃত। এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি এবং টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনার কিউএস র‍্যাঙ্কিং যথাক্রমে ১৩৭ এবং ১৯০। এ ছাড়া ৪১৩ নম্বর অবস্থানে রয়েছে গ্রাজ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এবং ৪৭২তম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম জোহানেস কেপলার ইউনিভার্সিটি লিঞ্জ।

আর সেঙ্গেনভুক্ত দেশ হওয়ায় সুযোগ থাকছে একই সঙ্গে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো ভ্রমণ করার। এর মাধ্যমে একাধিক ডিগ্রি নেওয়ার এবং চাকরি কিংবা ব্যবসা ক্ষেত্রে ক্যারিয়ারকে সুবিস্তৃত করার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।

অস্ট্রিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য যে যোগ্যতাগুলো থাকা দরকার

প্রধান ভাষা জার্মান হওয়ায় দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনার পাশাপাশি স্কলারশিপ ও চাকরি প্রতিটি ক্ষেত্রেই গুরুত্ব পায় জার্মান ভাষার ওপর দক্ষতা।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধুমাত্র স্থানীয় ছাত্রছাত্রীদের অধ্যয়ন ফ্রি। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা জার্মান ভাষায় পারদর্শি, তারা তাদের অধ্যয়ন খরচে অনেকাংশে ছাড় পায়। তবে অস্ট্রিয়া থেকে ডিগ্রি লাভের জন্য জার্মান-ই একমাত্র ভাষা নয়। এর বিকল্প হিসেবে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতাও বিশেষ করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পায় সমান গুরুত্ব।

ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য প্রয়োজন হয় ডিপ্লোমা কিংবা হাই স্কুল সনদ পরীক্ষা। স্নাতকোত্তর যে কোনও কোর্স বা ডিগ্রির জন্য একই বা প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্নাতক করা থাকতে হয়। অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিগুলোতে স্নাতক ডিগ্রিতে আবেদনের পূর্বশর্ত হচ্ছে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে পেশাদার অভিজ্ঞতা।

মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য ন্যূনতম ১৮০ ইসিটিএস (ইউরোপীয়ান ক্রেডিট ট্রান্সফার অ্যান্ড অ্যাক্যুমুলেশন সিস্টেম) ক্রেডিট থাকা আবশ্যিক। এর সঙ্গে কমপক্ষে ৬ সেমিস্টারের প্রাসঙ্গিক স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হয়। পিএইচডি প্রোগ্রামগুলোর জন্য প্রয়োজন হয় প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে গবেষণা বা সমতুল্য অধ্যয়নের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।

অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও চাহিদা সম্পন্ন কোর্স

বিশ্বজুড়ে শিক্ষাকেন্দ্রিক প্রসিদ্ধ নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেই বেশি ভিড় হয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের। এরমধ্যে অস্ট্রিয়ার প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো-

ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়

টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনা

ইউনিভার্সিটি অব ইনসব্রুক

ক্লাজেনফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়

ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি

গ্রাজ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি

জোহানেস কেপলার ইউনিভার্সিটি লিঞ্জ

ইউনিভার্সিটি অব গ্রাজ

ইউনিভার্সিটি অব ন্যাচারাল রিসোর্স অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড লাইফ সায়েন্সেস, ভিয়েনা (বকু)

ব্যবসা ও গবেষণা ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার বিকাশে পর্যাপ্ত সুযোগের সূত্রে যে বিষয়গুলো সর্বাধিক প্রাধান্য পায়, সেগুলো হলো

শিল্পকলা এবং হিউম্যানিটিস

ব্যবসা প্রশাসন

ভাষা

মনোবিজ্ঞান

মার্কেটিং

আন্তর্জাতিক ব্যবসা

কম্পিউটার বিজ্ঞান

প্রকৌশল

অস্ট্রিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়

সাধারণত দুটি মৌসুমকে কেন্দ্র করে স্নাতক বা ডিপ্লোমা এবং মাস্টার্স প্রোগ্রামগুলোতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়া হয়ে থাকে। একটি উইন্টার সেমিস্টার, যেটি শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে এবং আর সামার সেমিস্টার শুরু হয় ফেব্রুয়ারি থেকে। অবশ্য কোর্সভেদে প্রতি মৌসুমেই নিবন্ধনের সময়কাল ভিন্ন হয়ে থাকে। যা হালনাগাদ করা হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে। এই অনলাইন পোর্টালগুলোর মাধ্যমে আবেদনের সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এ সময় আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোডের বিষয় থাকে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র


বিশ্ববিদ্যালয়, প্রোগ্রাম ও কোর্স নির্বিশেষে ভর্তির আবেদনে সাধারণত যে কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হয়-

পাসপোর্ট এবং ছবি বা নামের সত্যতা প্রমাণে প্রার্থীর নিজের দেশের সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত যে কোনও পরিচয়পত্রের অনুলিপি

সর্বশেষ ডিপ্লোমা বা হাই স্কুল সনদ পরীক্ষা বা ব্যাচেলর ডিপ্লোমার সনদ

অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক ডিগ্রির জন্য প্রাসঙ্গিক পেশাদার অভিজ্ঞতা

ইংরেজি ভাষার দক্ষতা হিসেবে আইইএলটিএস, পিটিই একাডেমিক বা টিওইএফএল স্কোর কিংবা ক্যামব্রিজ সার্টিফিকেট

জার্মান ভাষায় পাঠদানকৃত কোর্সের জন্য জার্মান ভাষার দক্ষতা প্রমাণপত্র

এগুলোর পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আরও কিছু কাগজপত্র চাইতে পারে।

আবেদন পরবর্তী প্রক্রিয়া

কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে ব্যাচেলর স্তরে প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি সাধারণত একাডেমিক প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার ৬ মাস আগে হয়ে থাকে। অন্যান্য স্তরগুলোতে অনলাইনে (জুম বা স্কাইপে) মৌখিক পরীক্ষা বা ভর্তি ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হয়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ স্বহস্তে পূরণকৃত আবেদন ই-মেইলের পাশাপাশি ডাকযোগে প্রেরণের দরকার পড়তে পারে। পরবর্তীতে আবেদনের ফলাফলসহ যাবতীয় নির্দেশনা ই-মেইলের মাধ্যমেই জানানো হবে। ভর্তি চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হলে অধ্যয়ন ফি পরিশোধের জন্য বলা হয়। এই ফি পরিশোধের পরেই অফার লেটার এবং স্টুডেন্ট আইডি ইস্যু করা হয়।

অস্ট্রিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন পদ্ধতি

দীর্ঘমেয়াদি অধ্যয়নের জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে ডি-টাইপ ভিসায়, যেখানে সেঙ্গেনভুক্ত দেশগুলোতে ৬ মাসের বেশি থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। অস্ট্রিয়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস শুরু হওয়ার কমপক্ষে ৩ থেকে ৬ মাস আগে ভিসার আবেদন করা উচিত।

এখানে প্রধানত পর্যায়ক্রমে প্রথমে রেসিডেন্স পারমিট এবং পরবর্তীতে এন্ট্রি পারমিটের জন্য আবেদন করতে হয়। প্রথম পর্যায়ের আবেদনের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় ভারতের নয়াদিল্লির অস্ট্রিয়ান দূতাবাসে।

অস্ট্রিয়ার দূতাবাসের ঠিকানাঃ ইপি-১৩, চন্দ্রগুপ্ত মার্গ, চাণক্যপুরী, নয়া দিল্লি, দিল্লি-১১০০২১, ভারত।

আবেদনের যাবতীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে দূতাবাসে যাওয়ার আগে ই-মেইলের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিতে হবে। অতঃপর ফিরতি ই-মেইলে নির্দিষ্ট তারিখ জানানো হলে সে অনুযায়ী উপস্থিত হতে হবে দূতাবাসে। এ সময় আঙ্গুলের ছাপ ও ফটোগ্রাফের মতো বায়োমেট্রিক ডেটা নেওয়া হবে।

আবেদনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হলে দূতাবাস থেকে সেটি সরাসরি অস্ট্রিয়াতে পাঠানো হবে এবং সেখানে রেসিডেন্স পারমিটের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এখানে যেহেতু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়, তাই প্রার্থীকে অস্ট্রিয়াতে প্রবেশের অন্তত তিন মাস আগে আবেদন করা উচিত।

অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও স্কলারশিপসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা

অস্ট্রিয়া থেকে রেসিডেন্স পারমিট দেওয়ার কথা দূতাবাসে জানানো হলে দূতাবাস প্রার্থীকে তা অবহিত করবে। এরপরে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের পদ্ধতি। অর্থাৎ এন্ট্রি পারমিটের জন্য আবেদন। রেসিডেন্স পারমিট মঞ্জুর করা হয়েছে এই বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার ৩ মাসের মধ্যে প্রার্থীকে এই এন্ট্রির জন্য আবেদন করতে হবে। এরপর দূতাবাস থেকে অস্ট্রিয়ায় প্রবেশের জন্য ডি-টাইপ ভিসা দেবে। এরপর থেকে আরও ৩ মাসের মধ্যে অস্ট্রিয়ায় পৌঁছে রেসিডেন্স পারমিট সংগ্রহ করা যাবে।

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

স্বহস্তে পূরণকৃত ও সই করা আবেদনপত্রের সঙ্গে যে নথিগুলো দিতে হবে-

কমপক্ষে দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠাসহ একটি বৈধ পাসপোর্ট। যার মেয়াদ থাকবে অস্ট্রিয়াতে পৌঁছার দিন থেকে কমপক্ষে ৩ মাস।

দুটি সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি

অস্ট্রিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অফার লেটার

অধ্যয়নকালীন অস্ট্রিয়াতে জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বহনের জন্য যথেষ্ট আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ। এখানে অবশ্যই ন্যূনতম এক বছরের খরচ হিসেবে কমপক্ষে ৬ হাজার ৬৩০ ইউরো দেখাতে হয়। এই পরিমাণটি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৯০ টাকা (১ ইউরো = ১২৮ দশমিক ০৭ বাংলাদেশি টাকা) সমতূল্য।

জরুরি চিকিৎসা ও ভ্রমণের খরচ বহনকৃত স্বাস্থ্য বীমা। এই ধরনের স্বাস্থ্য বীমার সাধারণ খরচ প্রতি মাসে প্রায় ৬৯ দশমিক ১৩ ইউরো (প্রায় ৮ হাজার ৮৫৪ টাকা)।

অস্ট্রিয়াতে অগ্রিম বাসস্থান ব্যবস্থার প্রমাণ।

এই কাগজপত্রগুলোর মূল কপিসহ এক সেট অনুলিপি প্রস্তুত রাখতে হবে। কোনও নথি বাংলা ভাষায় হলে তা প্রত্যয়িত জার্মান অনুবাদসহ জমা দিতে হবে।

ভিসা ফি এবং প্রক্রিয়াকরণের সময়

আবেদনের পর থেকে শুরু করে ভিসা হাতে পাওয়া পর্যন্ত সামগ্রিক প্রক্রিয়াকরণে খরচ লাগবে ১২০ ইউরো (প্রায় ১৫ হাজার ৩৬৯ টাকা)। এই প্রক্রিয়াকরণে সাধারণত প্রায় ১৫ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে অতিরিক্ত কাগজের প্রয়োজন হলে সময়টি ৩০ থেকে ৬০ কার্যদিবস পর্যন্ত বাড়তে পারে।

অস্ট্রিয়া পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার খরচ

ইউরোপীয় দেশটির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদেরকে গড়পড়তায় প্রতি বছর খরচ করতে হয় ১ হাজার ৪৫২ ইউরো বা প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৫৫ টাকা। ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সে প্রতি সেমিস্টারে ব্যয় হতে পারে ৭২৭ থেকে ৭ হাজার ৫০০ ইউরো (প্রায় ৯৩ হাজার ১০৬ থেকে ৯ লাখ ৬০ হাজার ৫০৯ টাকা)। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক টিউশন ফি সাধারণত ৩ হাজার থেকে ২৩ হাজার ইউরো (প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ২০৪ থেকে ২৯ লাখ ৪৫ হাজার ৫৫৯ টাকা)। কিছু ব্যবসায়িক প্রোগ্রামের জন্য অবশ্য এই অঙ্কটি ৩৫ হাজার ইউরো (প্রায় ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৭৩ টাকা) পর্যন্ত হতে পারে।

জীবনযাত্রার খরচ হিসেবে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা এবং সাল্জবার্গের মতো শহরে থাকার জন্য মাসিক বাজেট রাখতে হবে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ ইউরো। বাজেটটি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ২৬১ থেকে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪৮৯ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে আবাসন, খাবার, সামাজিক ক্রিয়াকলাপ এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টসহ সমস্ত খরচ অন্তর্ভুক্ত। লিঞ্জ বা গ্রাজের মতো শহরগুলোতে খরচ হতে পারে প্রতি মাসে ৯০০ থেকে ১ হাজার ইউরো, যা প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ২৬১ থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৮ টাকার সমান।

অস্ট্রিয়ার সেরা কয়েকটি স্কলারশিপ

এই অর্থের জোগানের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রিয়াতে রয়েছে পর্যাপ্ত স্কলারশিপের ব্যবস্থা। যেমন স্নাতক প্রোগ্রাম বা পিএইচডির জন্য দেওয়া হয় আর্নস্ট মাক গ্রান্ট ওয়ার্ল্ডওয়াইড স্কলারশিপ। এখানে মাসিক উপবৃত্তি পরিমাণ ১ হাজার ১৫০ ইউরো (প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৮ টাকা)। এ ছাড়া ভ্রমণের চালান প্রদর্শনপূর্বক ভ্রমণ খরচের জন্য সর্বোচ্চ ১ হাজার ইউরো (প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৮ টাকা) পাওয়া যায়।

জনপ্রিয় স্পন্সর ইরাস্মাস মুন্ডাসের অধীনে থাকা প্রোগ্রামগুলোর পুরোটা সময়ের জন্য টিউশন ফি বহন করে। এই স্পন্সরশিপের মধ্যে রয়েছে ভিসা সংক্রান্ত খরচ, ভ্রমণ খরচ, বীমা, এবং মাসিক ভাতা। সব মিলিয়ে বহনকৃত তহবিলের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজার ইউরো (১৫ লাখ ৩৬ হাজার ৮১৪ টাকা)।

ওইএডি (অস্ট্রিয়ান এজেন্সি ফর এডুকেশন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনালাইজেশন) অস্ট্রিয়ার প্রসিদ্ধ স্পন্সরগুলোর মধ্যে একটি। এদের ওইএডি হাউজিং স্কলারশিপ ৬ হাজার ইউরো (প্রায় ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৪০৭ টাকা) পর্যন্ত বৃত্তি দিয়ে থাকে।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব বৃত্তি প্রকল্প। যেমন ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনা স্কলারশিপ বহন করে ১২ হাজার ইউরো (১৫ লাখ ৩৬ হাজার ৮১৪ টাকা)।

জয়েন্ট জাপান বিশ্বব্যাংক স্নাতক বৃত্তি প্রোগ্রামের আওতায় রয়েছে টিউশন ফি, মাসিক উপবৃত্তি, রাউন্ড-ট্রিপ বিমান ভাড়া, এবং স্বাস্থ্যবিমা। এই সুযোগ-সুবিধা দেয় অস্ট্রিয়ান ডেভেলপমেন্ট কলাবোরেশন স্কলারশিপ।

হেলমুট ভিথ স্টাইপেন্ড ফর ওমেন ইন কম্পিউটার সায়েন্স নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি। এটি টিউশন ফি, মাসিক উপবৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি পেশাদার দক্ষতা বিকাশের সুযোগ দেয়।

অস্ট্রিয়ায় অধ্যয়নকালীন আর্থিক ব্যবস্থাপনা

স্কলারশিপের পাশাপাশি অধ্যয়ন ও জীবনযাত্রার খরচ ব্যবস্থাপনার জন্য বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা খণ্ডকালীন চাকরি করতে পারে। তবে এর জন্য তাদেরকে ওয়ার্ক পারমিট নিতে হবে। অবশ্য ব্যবসা বা ফ্রিল্যান্সিং-এর ক্ষেত্রে এই সরকারি নথির প্রয়োজন হয় না।

পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট পেতে অস্ট্রিয়ার কোনও একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের অফার পেতে হবে। কাজের অনুমতির জন্য এই জব অফার লেটারের সঙ্গে ইতোমধ্যে প্রাপ্ত রেসিডেন্স পারমিটের নথি প্রদর্শন করতে হবে। এই নবায়ণযোগ্য ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ থাকে ১ বছর, যেখানে প্রতি সপ্তাহে কাজ করা যায় সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা।

জীবনযাত্রার খরচ বাঁচানোর জন্য শহরের কেন্দ্রের বাইরে অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে শেয়ার করে কোনও অ্যাপার্টমেন্টে থাকা যেতে পারে। এগুলোর ভাড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রের তুলনায় অনেকটা কম হয়। এখানে সমস্যা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই আবাসনগুলো বেশ দূরে হয়। এ ক্ষেত্রে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা বেশ সহায়ক হতে পারে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত স্টুডেন্ট কার্ড এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। এটি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবাগুলোতে উল্লেখযোগ্য ছাড় পাওয়া যায়।

অধ্যয়ন শেষে চাকরির উপায় ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ

ডিগ্রি লাভের পর অস্ট্রিয়াতে স্থায়ী হওয়ার জন্য দুই ধরণের ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে। একটি হচ্ছে চাকরি প্রার্থীদের জন্য রেসিডেন্স পারমিট এবং অন্যটি স্নাতকদের দেশে থাকা ও ফুল-টাইম কাজের জন্য লাল-সাদা-লাল কার্ড।

দুটি ক্যাটাগরিতেই স্নাতকরা এক বছর পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি পান। তবে প্রথম ক্যাটাগরির জন্য ছাত্র অবস্থায় রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হয়। এর আওতায় প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।

আর দ্বিতীয় ক্যাটাগরির জন্য আবেদন করতে হয় কোনও চাকরির অফার পাওয়ার পর। আবেদনের পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য প্রার্থীকে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হয়। এই পারমিটে সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা থাকে সর্বোচ্চ ৪০ ঘণ্টা।

শেষাংশ

অন্যান্য সেঙ্গেনভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর মতো অস্ট্রিয়ার উচ্চশিক্ষাও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এক অফুরন্ত সম্ভাবনার প্রবেশপথ। এই সুযোগ লাভের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে ইংরেজি ও জার্মান ভাষায় দক্ষতা এবং ভর্তির প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। শুধু তাই নয়, এই দু’টি বিষয় নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার এবং বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা। অস্ট্রিয়ার স্টুডেন্ট ভিসাপ্রাপ্তিও নির্ভর করে এই লেটার ও স্পন্সরশিপের উপর। সর্বোপরি একটি সফল অভিবাসনের জন্য সময়সীমাগুলোকে বিবেচনায় রেখে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিতে সক্রিয় থাকা আবশ্যক।

মন্তব্য করুন