শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যরাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াফিচারশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

যে কারণে নারীরা মানবপাচারচক্রের সহজ ‘শিকার’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:১৮
অধিকার কর্মীরা বার্লিনে মানবপাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে 'স্বাধীনতার জন্য হাঁটো'-কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। ছবি: রয়টার্স/এফ.বেঞ্চ

বিশেষজ্ঞ এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, ডিজিটাল দুনিয়াকে সুচতুরভাবে ব্যবহার করছে পাচারচক্রগুলো। নেটদুনিয়াকে হাতিয়ার করে পাচারের গতি এবং সীমার বিস্তার ঘটাচ্ছে তারা। প্রযুক্তিই হয়ে উঠেছে পাচারকারীদের মূল অস্ত্র।

স্প্যানিশ নিউজ এজেন্সি ইএফই বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) জানিয়েছে, মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, পাচারচক্রগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে স্পেনে বিদেশি নারী ও শিশুদের পাচার করে। এখানে শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দ্বিগুণ সহিংসতার শিকার হয়।

স্পেনের রেড ক্রসের মতে, মানবপাচারের চক্রের টার্গেট বেশিরভাগ ব্যক্তি বিদেশি। গত বছর, রেড ক্রস রিপোর্ট করেছে, তারা স্পেনে পাচারকারীদের পাল্লায় পড়া লোকদের মধ্যে ৯৬ শতাংশ (বা আনুমানিক এক হাজার ১০০-এর বেশি) অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন।

এর মধ্যে ৭০ শতাংশ অনিয়মিত প্রশাসনিক পরিস্থিতিতে ছিলেন যার মধ্যে অনথিভুক্তরা থাকতে পারেন। এদিকে পাচারকারীদের পাল্লায় পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ শতাংশেরও কম আশ্রয়প্রার্থী ছিলেন।

জাতিসংঘের মতে, মানবপাচারকারীরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নাবালক এবং সাধারণ যেকোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে। যারা নেটদুনিয়ায় গ্রহণযোগ্যতা, মনোযোগ বা বন্ধুত্ব চায়, তাদেরকে মূলত টার্গেট করে পাচারকারী চক্র।

রেড ক্রসের হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিটের ফুয়েনসান্তা পেরেজ ব্যাখ্যা করেছেন, অভিবাসনপ্রত্যাশী শিশুরা ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ পরিস্থিতিতে থাকে, বিশেষ করে ইউরোপে আসা সঙ্গীহান অপ্রাপ্তবয়স্ক বা নাবালকেরা।

বার্লিন-ভিত্তিক কেওকে-র (জার্মান এনজিও নেটওয়ার্ক অ্যাগেইনস্ট ট্রাফিকিং ইন হিউম্যান বিয়িংস) নির্বাহী পরিচালক সোফিয়া ভিরশ্চহিং ইনফোমাইগ্রান্টসকে বলেছেন, জার্মানিতেও একই অবস্থা৷

সোফিয়া জানান, ‘‘এটা একেবারে সত্যি যে নারী এবং শিশুরা পুরুষদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে থাকেন। প্রথমত, শিশুদের যত্ন নেওয়ার জন্য একজন অভিভাবক বা অভিভাবক প্রয়োজন।

যদি সেটা না করা হয়, তাহলে শিশু বা নাবালকরা শোষণমূলক পরিস্থিতির শিকার হয়। অনেক নারীর ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। ইউক্রেনের যুদ্ধের পরে জার্মানিতে আয়ের খোঁজে আসতে হয়েছিল অনেক নারীকে। তার পাশাপাশি নিজেদের শিশুদের যত্নও নিতে হয়েছিলো।’’

মুখহীন অপরাধীরা

তার দাবি, ডিজিটাল দুনিয়া মানবপাচারকে প্রভাবিত করছে। মানবপাচার চক্রের গতি এবং সীমানাকে আরো প্রশস্ত করে তুলেছে প্রযুক্তি।

সোফিয়া বলেন, ‘‘ডিজিটাল এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রলুব্ধ করা থেকে শুরু করে, ‘টার্গেট’ দের উপর নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করা, তাদের পরিবহন করে নিয়ে আসা সবটাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে করে থাকে মানবপাচারকারীরা৷ কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে এ ছাড়াও আইনপ্রণেতাদের মাধ্যমে এই অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে হবে। পাচার প্রতিরোধ করতে ডিজিটাল সরঞ্জামগুলোর উপর বেশি নির্ভর করতে হবে।

তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘‘পাচারকারীরা হয়তো দক্ষিণ আমেরিকায় থাকতে পারে এবং তারপরে তাদের টার্গেকে ইউরোপে পাঠাতে পারে। সবটাই টাকার ব্য়াপার। ভুক্তভোগী এবং মানবপাচারকারীর মধ্যে সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই।’’ তাই অপরাধীরা যে সরাসরি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এমনটাও নয়।

মানবপাচারের ডিজিটালাইজেশন

যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা প্রকাশিত সর্বশেষ ট্রাফিকিং ইন পারসন্স রিপোর্ট (২০২৪) অনুসারে, ‘‘অপরাধীরা ‘টার্গেট’ খুঁজতে ডেটিং অ্যাপ এবং অনলাইন বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে। তারা অবৈধ যৌন সামগ্রী বিক্রি করার জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। সনাক্তকরণ এড়াতে এনক্রিপ্ট করা মেসেজিং এবং ডিজিটাল মুদ্রার সুবিধা নেয়।’’

আইনজীবী এবং অধিকার গোষ্ঠীর কাছে সচেতনতা গড়ে মানবপাচার প্রতিরোধে প্রযুক্তি ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, "যেহেতু প্রযুক্তি মানবপাচারকারীদের কাজ করা সহজ করে তোলে, আমরা যারা এই ভয়ঙ্কর অপরাধকে সমূলে বিনাশ করতে চাই, অর্থাৎ সরকার, সুশীল সমাজ সবাই মিলে একযোগে কাজ করতে হবে।’’

অপরাধীদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত কৌশলগুলো ধরে ফেলার অর্থ হলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা লোকেদের একত্রিত হতে হবে। এমনকি যারা সাধারণত একসঙ্গে কাজ করেন না, পাচারের মতো ভয়াবহ অপরাধ আটকাতে সবার সমন্বয়ের প্রয়োজন।

সোফিয়ার কথায়, ‘‘সকলকে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। অধিকার গোষ্ঠী, আইনপ্রণেতা, বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলো, এমনকি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।’’

একটা পরিচিত রুটের মাধ্যমে নিয়োগ

ফিলিপ্পো ফিনোকিয়ারো, দক্ষিণ ইটালির সিসিলির অভিবাসী অধিকার আইনজীবী। নিয়মিতভাবে নাইজেরিয়া থেকে পাচার হওয়া নারী ও মেয়েদের সাহায্য করেন তিনি। ইনফোমাইগ্রেন্টসকে তিনি জানান, বেশিরভাগ নারী নাইজেরিয়ার বেনিন থেকে এসেছেন। খুব অল্পবয়সি, দরিদ্র পরিবার থেকে আসেন এই নারীরা। অনেকেই নানা আচার-অনুষ্ঠান (বিয়ে) করতে বাধ্য হন।

ফলে নারী পাচারের প্রবণতা বাড়ে, এদিকে পাচারকারীদের বিচার করা কঠিন হয়।

ফিনোকিয়ারোর মতে, ‘‘নাইজেরিয়া থেকে, তাদের কোনও আত্মীয় বা তাদের পরিবারের পরিচিত কেউ ইউরোপে কাজের প্রতিশ্রুতি দেয়। আমি যাদের সঙ্গে দেখা করেছি তারা সকলেই লিবিয়া হয়ে ইটালিতে এসেছিলেন। সেখানে তারা যৌন দাসত্ব এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। ইটালিতে এসে তারা বোঝেন, কাজের প্রতিশ্রুতিগুলো ভুয়া।’’

তিনি বলেন, ‘‘এই নারীরা সাধারণত তাদের পাচারকারীর বিরুদ্ধে বিচার চায় না…নাইজেরিয়াতে বসবাসকারী পরিবারের পরিণতি নিয়ে ভয় পান অনেকেই। ’’

ইটালি সরকার মানবপাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ অনুমতি প্রদান করে তবে তার জন্য মানবপাচারকারীর নাম প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক।

ফিনোকিয়ারে বলেন, "এ কারণেই পাচারের ভুক্তভোগীদেক মধ্যে অনেকেই রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করে। সাধারণত, সরকার তাদের শরণার্থী হিসাবে স্বীকৃতি দেয় না, কিন্তু যখন তারা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে, তখন আদালত তাদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য যোগ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেয় কারণ সেক্ষেত্রে দেখা হয় তারা কোনো নির্দিষ্ট দেশের নির্দিষ্ট এলাকা থেকে এসেছেন, যা সত্যি ঝুঁকিপূর্ণ।


 

মন্তব্য করুন