আলবেনিয়ার জাদারে ইটালির সেন্টার্স অব পার্মানেন্স অ্যান্ড রিপ্যাট্রিয়েশন (সিপিআর) অর্থাৎ প্রত্যাবাসন কেন্দ্রে কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে রাখা যাবে না বলে এক রায়ে জানিয়েছে ইটালির আপিল আদালত৷
ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আলবেনিয়ায় শেনজিন ও জাদারে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে ইটালি৷
কিন্তু আদালতের রায়ে কেন্দ্র দুটিতে কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে রাখতে পারছিলো না ইটালি সরকার৷ এজন্যই, জাদারকে সিপিআর বা অভিবাসী প্রত্যাবাসন কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারে একটি ডিক্রি জারি করা হয়৷
সরকার জানিয়েছে, প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থী ও যেসব আশ্রয়প্রার্থীকে ইটালি ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে, তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আগে রাখা হবে জাদারে৷ এরই মধ্যে ৪০ জন প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীকে পাঠানো হয়েছে আলবেনিয়ায়৷
রোমের আপিল আদালত জানিয়েছে, জাদারের কেন্দ্রটি আন্তর্জাতিক সুরক্ষা চেয়ে আবেদন করা কোনো ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য হবে না৷
একজন বিচারক বলেছেন, আলবেনিয়ার জাদারের আটককেন্দ্রে একজন বিদেশি আশ্রয়প্রার্থীকে আটক রাখার সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷
মরক্কোর নাগরিকের মামলা
মরক্কোর এক নাগরিকের দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আট পৃষ্ঠার রায় দিয়েছে আদালত৷ ১১ এপ্রিল তাকে আলবেনিয়ায় ইটালি পরিচালিত আটককেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়৷ ২০২১ সাল থেকে ইটালিতে বসবাস করছিলেন তিনি৷ ২০২৩ সালে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া এই অভিবাসীকে ৩১ মার্চের মধ্যে ইটালি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নেপলস কর্তৃপক্ষ৷
আটককেন্দ্রে বসেই আশ্রয় চেয়ে আবেদন করার কথা জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি৷ এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, তার আটকাদেশ বৈধ কিনা তা খতিয়ে দেখতেই শুনানির নির্দেশ দেয় আদালত৷ ইটালি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আশ্রয় সংক্রান্ত বিষয়গুলোর আইনি নিষ্পত্তির এখতিয়ার আপিল আদালতের কাছেই৷
আদালত রায়ে জানিয়েছে, জাদার ‘‘আলবেনিয়ার ভূখণ্ড হলেও, ইটালি-আলবেনিয়া প্রোটোকল অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সুরক্ষার আবেদন ইটালীয় সীমান্ত বা ট্রানজিট এলাকার সঙ্গে তুলনীয়৷ তাই ওই আশ্রয় আবেদন ইটালির কাছেই করা হয়েছে এবং সেভাবেই সেটি নিষ্পত্তি করতে হবে৷’’
আদালতের রায়
আদালত থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, মরক্কোর ওই নাগরিক জাদারে আটকবস্থায় আন্তর্জাতিক সুরক্ষা চেয়ে আবেদনের ইচ্ছা পোষণ করেছেন৷
বিচারক বলেছেন, ‘‘ওই বিদেশি নাগরিককে জোরপূর্বক আলবেনিয়ার কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং ইটালির কর্তৃপক্ষ তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্যই সেখানে নিয়ে গেছেন, ফলে তার আশ্রয় আবেদনটি বৈধ হয়ে যায়৷’’
রায়ে আরো বলা হয়েছে, ‘‘আন্তর্জাতিক সুরক্ষা চাওয়া কোনো বিদেশিকে প্রত্যবাসনের উদ্দেশে আটক রাখা যাবে না৷ বরং তার আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাই করা দরকার৷’’
ফলে, মরক্কোর ওই নাগরিককে ইটালি-আলবেনিয়া প্রোটোকলে বিবেচনা করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে আপিল আদালত৷ কারণ, প্রোটোকল অনুযায়ী, কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে প্রত্যাবাসন কেন্দ্রে রাখার বিধান নেই৷
মন্তব্য করুন