শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩২

অভিবাসীদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন পরিকল্পনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৩

দীর্ঘ কয়েক মাস আলোচনার পর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মঙ্গলবার অনিয়মিত অভিবাসীদের বহিষ্কার দ্রুততর করার জন্য নতুন পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসন নীতি কঠোর করার জন্য ইইউ চাপে রয়েছে।

ইউরোপীয় কমিশন মঙ্গলবার ‘প্রত্যাবর্তন কেন্দ্র’ বা ‘রিটার্ন হাব’ গঠনের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। কিছু সদস্য দেশ এই উদ্যোগের পক্ষে থাকলেও, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এটির কঠোর সমালোচনা করছে।

বর্তমানে ইইউ দেশগুলোতে অনিয়মিত অভিবাসীদের বহিষ্কারের হার ২০ শতাংশেরও কম। এই হার বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্রাসেলস সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলছে।

পরিকল্পিত পদক্ষেপ:

সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ইইউর বাইরের অঞ্চলে অভিবাসী কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে।
যাদের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়েছে এবং যারা দেশ ছাড়ার আইনি নির্দেশের আওতায় রয়েছেন, তাদের নতুন ‘রিটার্ন হাব’-এ পাঠানো হবে।

ইইউ নিজস্ব কোন কেন্দ্র পরিচালনা করবে না, বরং সদস্য দেশগুলোর ওপর এই দায়িত্ব ছেড়ে দেবে। কেন্দ্রগুলোর আইনি কাঠামো আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে পরিচালিত হবে।

যারা ইউরোপ ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানাবে, তাদের জন্য নিষেধাজ্ঞা, পরিচয়পত্র বাজেয়াপ্ত করা এবং আটক রাখার মতো ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

এক দেশ কর্তৃক নেওয়া সিদ্ধান্ত অন্য দেশেও কার্যকর হবে, যেমন অস্ট্রিয়ায় নেওয়া সিদ্ধান্ত স্পেনেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।
প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক ইউরোপীয় কমিশনের সদস্য ম্যাগনাস ব্রুনার বলেছেন, “এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে মানুষের কাছে এই বার্তা যাবে যে, ইউরোপে যা ঘটছে তার উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ আছে।”

ইউরোপ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের সহযোগী পরিচালক কামি লো কোজ জানান, “আশ্রয় সংক্রান্ত ইস্যুতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অধৈর্যতা বাড়ছে। তারা ব্রাসেলস থেকে কঠোর নীতির দাবি জানাচ্ছে।”

তবে তিনি বলেন, ইইউর এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। বিশেষ করে ‘রিটার্ন হাব’ পরিচালনার দায়িত্ব কার হাতে থাকবে, তা স্পষ্ট নয়। অর্থায়নের দায়িত্ব কে নেবে? ইউরোপীয় তহবিল কি এই প্রকল্পে ব্যবহৃত হবে? এসব বিষয় এখনও অনিশ্চিত।

রাজনৈতিক ও আইনগত চ্যালেঞ্জ
এই প্রস্তাব কার্যকর করতে হলে ইউরোপীয় সংসদ এবং ইইউর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অনুমোদন প্রয়োজন। ম্যাগনাস ব্রুনার আশাবাদী যে, বিলটি দ্রুত অনুমোদিত হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি ইস্যু যা ২৭টি সদস্য দেশের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি করতে পারে।

স্পেন এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছে। মাদ্রিদ আশঙ্কা করছে যে, এটি মানবাধিকারের পরিপন্থি হতে পারে। অন্যদিকে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো এবং নেদারল্যান্ডস কেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে এবং দ্রুত প্রকল্প চালু করার পক্ষে মত দিয়েছে।

সুইডিশ অভিবাসন মন্ত্রী জোহান ফরসেল বলেছেন, “আমরা বছরের পর বছর ধরে বিকল্প ব্যবস্থা আনার চেষ্টা করে আসছি।”
ফ্রান্স এই আলোচনায় এখনো সরাসরি যুক্ত হয়নি, কারণ বিষয়টি তাদের জন্য অত্যন্ত জটিল।

এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরব হয়েছে। আন্তর্জাতিক রেসকিউ কমিটির মতে, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করবে।

গ্রিন পার্টির ইউরোপীয় সাংসদ মেলিসা কামারা বলেন, “এই প্রত্যাবর্তন কেন্দ্রগুলো তৃতীয় দেশের নাগরিকদের জন্য আইনি শূন্যতা তৈরি করবে এবং আটক রাখার আরও কঠোর নীতির দিকে নিয়ে যাবে।”

ইইউ সীমান্তে অবৈধ প্রবেশের সংখ্যা সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ইউরোপীয় সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের পর অনিয়মিত অভিবাসনের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

তবে অভিবাসন নীতি কঠোর করার চাপ অব্যাহত রয়েছে, এবং এই নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে ইইউ অভিবাসন ব্যবস্থাকে আরও সংগঠিত ও নিয়ন্ত্রিত করতে চায়।

মন্তব্য করুন