মিশরের ইসমায়েলিয়া শহরে নিজ বাসায় রাতের খাবার রান্না করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন মোঃ ফাইজুল ইসলাম (৩৫) নামের এক প্রবাসী। তার দেশের বাড়ি চাঁদপুর জেলায়। আহত অবস্থায় ইসমায়েলিয়ার আবু খালিফা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও দু'জন। তারা হলেন কিশোরগঞ্জের মোঃ হানিফ (৪২) ও ফরিদপুরের লুৎফর রহমান (২৬)।
জানা যায়,অনাগত সন্তানের স্বপ্ন পূরণ আর পরিবারে স্বচ্ছতা আনতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে মিশর এসেছিলেন চাঁদপুরের ফাইজুল ইসলাম। তা আর হলনা এমনকি অনাগত সন্তানের মুখটাও আর দেখা হলোনা। মিশর পৌঁছে কাজে যোগ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই অগ্নিদগ্ধ হন তিনিসহ দু'জন।
নিহত ফাইজুল ইসলামের ভাই, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের শিক্ষার্থী সুজন সরদার জানান,গত ২৩ অক্টোবর আল- আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এয়াহিয়া তানভির এর মাধ্যমে মিশর আসেন আমার ভাই। কায়রো পৌঁছার পর পোশাক শিল্পে কাজ দেওয়ার কথা বলে ইসমায়েলিয়া শহড়ের কানতারায় এলাকায় পাঠিয়ে দেন। তার পর থেকে আমার সাথে ভাইয়ের কোন যোগাযোগ ছিল না বা করতেও পারিনি।
গত ৫ অক্টোবর জৈনিক ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারি সে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। অনেক খুঁজাখুঁজির পর ইসমায়েলিয়ার আবু খালিফা নামক একটি ইসমায়েলিয়ার আবু খালিফা হাসপাতাল থেকে আহত আবু হানিফ এই প্রতিনিধিকে জানান, ঐ দিন সন্ধ্যায় রান্না করার সময় বিদ্যুৎতিক লাইনে আগুন লেগে মুহুর্তর মধ্যে পাক ঘরে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে তাড়াহুড়ো করে বাহির হতে গিয়ে ও আমরা আগুনে দগ্ধ হই। পরে স্থানীয়রা আমাদের ইসমায়েলিয়ার আবু খালিফা নামক একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনজনের মধ্যে ফাইজুল ইসলাম জাগজিগ হাসপাতালে মারা গিয়েছেন বলে শুনেছি। আমি ও লুৎফর এই হাসপাতালেই ভর্তি আছি। আমাদের শরীরে অনেক অংশই ঝলসে গেছে।
আবু হানিফ আরও জানান, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এয়াহিয়া তানভির আমাদের প্রত্যেককে ৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মিশর আনেন অন-এরাইভ্যাল ভিসা দিয়ে। আসার পর তাদের কাজ দিতে নিয়ে যান ইসমায়েলিয়ার এক পোশাক শিল্প কারখানায়। কিন্তু তাদের কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেন কাজ শিখে আসতে। তার কথা মত এহিয়া লুৎফর তাদেরকে শিক্ষা নবীস হিসেবে কাজ দেন ছোট্ট একটি কারখানায়। কাজ শেষে ঘরে এসে নিজেদের রান্না করার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে তানভির এয়াহিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,এই তিনজনকে আমি ভ্রমন ভিসায় মিশর এনে কাজ দিয়েছিলাম ইসমায়েলিয়ার কান্তা এলাকার একটি ছোট কারখানায়। পরে শুনতে পারলাম তারা নিজেদের বাসায় রান্না করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ব্যস্ততার জন্য আমি তাদের দেখতে যেতে পারিনি। তবে, লোক পাঠিয়ে তাদের খোৃজ খবর নিচ্ছি। মিশরে বাংলাদেশিদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট বন্ধ জেনেও আপনি কেন অবৈধ ভাবে দেশ থেকে লোক আনেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তানভির বলেন, মিশরের শ্রম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আছে ভিসিট ভিসায় এসেও এদেশে কাজ করতে পারবে ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া। সেই ওয়েবসাইটের লিংক চাইলে পাঠাবে বলেও তিনি জানান।
মন্তব্য করুন