বয়স হলেই চুল পাঁকবে, ত্বকে পড়বে বলি রেখা। কিন্তু আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই যাদের অকালেই চুল পেঁকে যাচ্ছে। যা মোটেও কাম্য নয়।
কিছু সচেতনতাবোধ আমাদের দূরে রাখবে অকালে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা থেকে।
চুল পেঁকে যাবার কারণঃ
(১) বংশগত কারণঃ
রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় স্বজনের চুল অকালেই পেঁকে যাবার ইতিহাস থাকলে, পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের চুল অকালেই পাঁকতে পারে।
(২) হরমোনের সমস্যাঃ
হরমোন রক্তের ভীষণ জরুরি উপাদান।
হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হাইপার থাইরয়েডিজম নামে এক ধরনের হরমোনের অসুখে চুল অকালেই পাঁকতে পারে।
আমাদের গলার মধ্যে থাইরয়েড নামে এক ধরনের গ্রন্থি রয়েছে। এই গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়। হাইপোথাইরয়েডিজম মানে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং হাইপারথাইরয়ডিজম মানে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।
থাইরয়েড গ্রন্থি ঠিকভাবে হরমোন নিঃসৃত করতে না পারলে এই দুই ধরনের অসুখ হয়।
এই দুই ধরনের হরমোনের সমস্যার জন্য চুল অকালেই সাদা হতে পারে।
(৩) মানসিক অবসাদঃ
অতিরক্ত দুঃখ, কষ্ট, দুশ্চিন্তা থেকে অকালেই চুক পাঁকতে পারে।
আমাদের তারুণ্য বজায় রাখতে সোরোটোনিন হরমোন অনেক বড় একটা ভূমিকা পালন করে।
মানসিক অবসাদ রক্তে সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
পরিণামে মানুষের ত্বক, চুলের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
সেরোটোনিন হরমোন মানসিক উৎকর্ষতার জন্য কাজ করে। যত বেশি আমাদের মন ভালো থাকবে, আমরা ততো বেশি পরিমাণে ইতিবাচক চিন্তা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারবো।
(৪) ভিটামিন এর অভাবঃ ফোলেট, ভিটামিন বি-১২, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এর অভাবে অকালেই চুল পেঁকে যায়।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। যা আমাদের ত্বক, চুল পুষ্টি সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে। রক্তে এই ধরনের ভিটামিন, মিনারেল এর অভাবে অনেকের চুল অকালেই পেঁকে যায়।
(৫) অতিরিক্ত কেমিকেল এর ব্যবহারঃ
চুলে অতিমাত্রায় ডাই, রং ব্যবহার করলেও চুল অকালে পাঁকতে পারে।
সব প্রসাধনী সব বয়সের মানুষের জন্য উপযোগী নয়।
সৌন্দর্যের আশায় অতিরিক্ত কেমিকেল এর ব্যবহার, ভেজাল খাবার পরিবেশ দূষণ এর জন্যও চুল পাঁকতে পারে।
(৬) অতিরিক্ত ফাস্ট ফুডঃ
উচ্চমাত্রার প্রোটিন, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, অতিমাত্রায় কোমল পানীয় এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, বয়স অনুযায়ী দীর্ঘ বছর ওজন বেড়ে থাকলেও মাথার চুল অকালেই পাঁকতে পারে।
(৭) অটোইমিউন অসুখঃ
কিছু অটোইমিউন অসুখেও চুল অকালেই পেঁকে যায়।
চুল পেঁকে যাওয়া রোধে সতর্কতাঃ
(১) মৌসুমী ফল, শাক সবজি নিয়মিত খেতে হবে।
সবুজ হলুদ ফলের মধ্যে এ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে উচ্চমাত্রায়। যা তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
(২) ধর্ম, কর্ম, ইতিবাচক চিন্তা, সৃজনশীল কাজ মানুষের মানসিক প্রশান্তি যোগায়, মন ভালো থাকলে চুল, ত্বক থাকবে পুষ্টি সমৃদ্ধ।
(৩) নিয়মিত কাঁচা সবজি, মৌসুমী ফল খেতে হবে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লিটার পানি রক্ত পরিষ্কার রাখতে এবং শরীর থেকে রোগ জীবাণু দেহের বাহিরে বের করে দিতে সাহায্য করবে।
(৪) ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলস্টেরল বা চর্বির মাত্রা সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
(৫) ফাস্টফুড, অতিমাত্রায় কোমলপানীয়, মাদকদ্রব্য, ধূমপান বর্জনীয়।
(৬) নিয়মিত ভালোভাবে চুল আচড়াতে হবে। তাহলে চুলের গোড়াতে পুষ্টি সরবরাহ হবে।
(৭) সময় পেলেই হাঁটতে হবে। হাঁটলে পুরো দেহের সবগুলো অংগতে রক্ত সরবরাহ হবে।
পরিণামে দেহের সকল অংগ, ত্বক, চুল ভালো থাকবে।
(৮) সারা বছর গরম পানিতে গোসল করা অনুচিৎ।
(৯) কেমোথেররাপি, রেডিওথেরাপিসহ কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় চুল পেঁকে যায়।
এই ধরনের সমস্যায় চিকিৎকের পরামর্শ ব্যতীত চুলে কলপ, কেমিকেল ব্যবহার করা অনুচিত।
(১০) মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী, মানহীন বিউটি পার্লার থেকে সেবা গ্রহণ না করাই ভালো।
১১) চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত রূপচর্চার জন্য কোনো ওষুধ খাবেন না।
মন্তব্য করুন