ভূ-মধ্যসাগরে অবস্থিত পূর্ব-ইউরোপের দেশ সাইপ্রাসে গত দশ বছর আগেও প্রচুর বাংলাদেশি যেত, বেশিরভাগই স্টুডেন্ট ভিসায় গেলেও অনেকেই আবার অবৈধভাবে তুর্কি সাইপ্রাস থেকে প্রবেশ করে। তবে সাইপ্রাসে
স্টুডেন্ট ভিসায় থাকা ব্যয়বহুল হওয়ায় ও একটা নির্দিষ্ট সময় পর যখন আর স্টাডি করা সম্ভব হয় না তখন বেশিরভাগই রিফিউজির জন্য আবেদন করে।
আবার যারা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যায় তাদেরও বেশিরভাগ অবৈধ হয়ে যায়। তবে অবৈধভাবে থাকাটা তেমন সমস্যা ছিল না সাইপ্রাসে। সাইপ্রাসে রিফিউজি আবেদন করে ৭-৮ বছর থাকা যেত ও কাজ করা যেত। যার ফলে অনেকেই বাংলাদেশ থেকে একটানা ৮-১০ বছর থাকার পরিকল্পনা করেই যেত সাইপ্রাসে।
সাইপ্রাসে ইনকাম ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বেশি হওয়ায় ও অন্যান্য দেশের চেয়ে সেখানে যাওয়া সহজ হওয়ায় মূলত মানুষ সাইপ্রাসকে বেছে নিত।
এ পর্যন্ত বাঙালির জন্য ভালোই বলা যায়। কিন্তু সমস্যাটা ঘটে সাইপ্রাসে অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশি দালাল ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকের কারণে। সাইপ্রাসে যে সকল বাংলাদেশি ট্রান্সলেটররা কাজ করত এরা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত। যখন কোনো বাংলাদেশি রিফিউজি আবেদন করতে যেত তখন এই ট্রান্সলেটররা ভুলভাবে সাইপ্রাস সরকারকে উপস্থাপন করত।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বারা নির্যাতিত, নিপীড়িত অসংখ্য মানুষ সাইপ্রাসে অবস্থান করছেন। তারা যখন রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতেন ট্রান্সলেটররা সেগুলো বাতিল করার জন্য সাইপ্রাস সরকারকে নানানভাবে ভুলভাল ব্যাখ্যা দিতেন। তারা সাইপ্রাস সরকারকে এটা প্রমাণ করতে চায়ত যে, বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক সমস্যা নেই। আর যখন কেউ ট্রান্সলেটর ছাড়া রিফিউজি আবেদন করত তখন তার ফাইল আরওু আগেই
রিজেক্ট করে দেওয়ার জন্য ট্রান্সলেটররা নানানভাবে সরকারকে অনুরোধ করত ও তাদের হয়রানি করত।
এদের কারণে সাইপ্রাস সরকার বাংলাদেশিদের রিফিউজি আবেদন একের পর এক রিজেক্ট করতে থাকে। কাউকে ১ বছর বা কাউকে মাত্র ৬ মাস থাকার সুযোগ দিচ্ছে। সর্বশেষ ২০২২ সালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে সাইপ্রাসে
বাংলাদেশিদের রিফিউজি আবেদন বন্ধ করে দেওয়ার জন্য জোরালোভাবে প্রচেষ্টা চালায় সাইপ্রাসে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা।
এরপর সাইপ্রাসে বাংলাদেশিদের রিফিউজি আবেদন একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে। তারা মূলত আওয়ামী লীগের ভাব অক্ষুণ্ন রাখার জন্য এই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রবাসীর এই ক্ষতিটা করেছে।
তাদের মূলহোতা সাইপ্রাসের বাংলাদেশি সিনিয়র সিটিজেন শামিম। বাংলাদেশিদের মধ্যে শামীম প্রধান ট্রান্সলেটর হিসেবে কাজ করে, সে সুযোগটা কাজে লাগিয়ে হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রবাসীর ভাগ্য পুড়িয়েছে তিনি।
শামীমের সাইপ্রাসের পাসপোর্ট থাকায় কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেশে ডিপোর্ট করে দিত। যে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলত তাকেই দেশে ডিপোর্ট করে দিত। শত শত প্রবাসী যেন এক শামীমের কাছেই জিম্মি।
এছাড়াও শামীম বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য নিত তিনশ ইউরো, যেখানে খরচ হয় মাত্র ৩৩ ইউরো।
৫ই আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর সে শামীমই এখন আওয়ামী লীগ সমর্থিত তার দলবল নিয়ে সাইপ্রাসে মিছিল মিটিং করতে থাকে। এখন তারাই বলছে, তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তারা
বাংলাদেশে নিরাপদ নয়। যদিও পুরো সাইপ্রাসে প্রায় ৮ হাজার বাংলাদেশি প্রবাসীর মধ্যে হাতেগোনা মাত্র শ'খানেক আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোক পাওয়া যাবে।
সাইপ্রাসে যেসকল আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোক আছে এরা প্রত্যেকেই ভিসার দালালি, অবৈধভাবে তুর্কি সাইপ্রাস থেকে
লোক আনা, কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের নামে মানুষের টাকা মেরে খাওয়াসহ নানান অপকর্মে জড়িত। সাইপ্রাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা এই সকল দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি করছে বাংলাদেশ সরকার ও সাইপ্রাস সরকারের কাছে।
মন্তব্য করুন