মানবতাবিরোধী অপরাধী, জাতির পিতার হত্যাকারী ও জঙ্গিদের যেভাবে বিচার হয়েছে, ঠিক একইভাবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী স্বাধীনতা বিরোধীদের দোসর ইউনূস ও তার সহযোগীদের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার দুপুর ২টায় পূর্ব লন্ডনের ইমপ্রেশন ইভেন্ট হলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত কথিত আওয়ামী লীগের ভাষায় অবৈধ অসাংবিধানিক রাষ্ট্রক্ষমতা জবরদখলকারীদের পদত্যাগ-মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার-অবিলম্বে সকল গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত জনসভায় ভ্যার্চুয়্যালি যুক্ত হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ইউনূস ও তার দোসরদের পরিকল্পনা ছিল ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশকে একটি উগ্রবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করা। ঠিক সেই সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা মাফিক সে ও তার মাস্টার মাইন্ডরা এবং স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী বাংলাদেশকে শ্মশানে পরিণত করেছে। তার যে ক্ষমতা দখল করার পরিকল্পনা ছিল সেটি সবার কাছে পরিষ্কার হয়েছে আমেরিকায় তার মাস্টারমাইন্ডদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। আমি তো রক্তপাত চাইনি, যতদিন যাচ্ছে সকলের সামনে তাদের পরিকল্পনা পরিষ্কার হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আবু সাঈদ, মুগ্ধ থেকে শুরু করে ৩ হাজার পুলিশ-আনসারসহ দেশের সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এরপর থেকে শুরু হয়েছে দেশে অরাজকতা, নেই আইনের শাসন। নেই ন্যায় বিচার। এরা কি চায়? তা জাতির সামনে পরিষ্কার। দেশব্যাপী চলছে লুটপাট, অন্যায় অত্যাচার, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি-ও হলি আর্টিজেনে হামলাকারী দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের কারাগার থেকে ছেড়ে দিয়েছে। অন্যদিকে সাধানরন মানুষ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সাংবাদিক সুশীল সকলকে নির্বিচারে প্রতিদিন গ্রেফতার করা হচ্ছে। শিক্ষকদের করা হচ্ছে অপমানিত। দেশব্যাপী চলছে অরাজকতা, হিন্দু খৃষ্টানসহ মাইনরিটিদের বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট ও অগ্নি সংযোগ, তাদের অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পায়নি সাধু, দরবেশ পীর আউলিয়ার মাজার, মসজিদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, সাধু চিন্ময়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পক্ষে কোনো আইনজীবীকে আদালতে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। নেই আইনের শাসন ইউনূস তো ছিল সাজাপ্রাপ্ত আসামি তার পরেও তাকে বেইল দিয়েছে আদালত। এখন দেশের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট চলে মাস্টার মাইন্ডদের নির্দেশে।
সাংবাদিকদের এক্রেডিয়েশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। অফিস আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সকলকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এই দেশ চলছে মাস্টার মাইন্ডদের ইচ্ছে মাফিক। আমাদের করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের আইনজীবী ছিল তাদের করা হয়েছে এই ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর। সংবিধান লঙ্ঘন করে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা জেলাপরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপর দেয়া হচ্ছে মিথ্যা মামলা।
তিনি আরও বলেন, গতকালকে মৌলবীবাজারের একজন যুবলীগ নেতার বাড়িতে আগুনু দেয়া হয়েছে। তাকে না পেয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে তার বৃদ্ধ মা ও চাচিকে। এখন দেশে বিচার নেই, নেই আইনের শাসন। দেশে নেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। সাংবাদিকরা তাদের ইচ্ছা মাফিক লিখতে পারে না।
সব কথা বলতে পারে না টেলিভিশনে। আমি তো সবকিছুই অবাধ করে দিয়েছিলাম। সংবাদপত্র ও টিভিতে সমন্বয়করা হুমকি দিয়ে-বলে এসব লিখতে পারবে না, এভাবে বলতে পারবে না। ইউনূস তো ক্লিংটন ফাউন্ডেশনে জনগণের টাকা পাচার করে চাঁদা দিয়েছিল। এর হিসেবও একদিন বের হবে, সময় আসছে। সমন্বয়ক ও ইউনূসরা বলছে মেগাপ্রজেক্টের নামে নাকি অর্থ পাচার হয়েছে।
‘আমি চ্যালেঞ্জ করলাম পারলে তা বের করুক। দেশে প্রতিদিনই দেওয়া হচ্ছে মিথ্যা মামলা। আমার ওপরও ২৫০টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর অধিকাংশই হত্যা মামলা। সময় আসছে কারা খুন করেছে সবই বের হবে। দেশে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সবকিছু চলে গেছে সাধারণ মানুষের ক্ষয় ক্ষমতার বাইরে। আমি ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫২টি জেলাকে ভূমিহীন মুক্ত ও ভিখারি মুক্ত করেছিলাম। আমি চালু করেছিলাম, বিধবা ভাতা বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বর্তমানে সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্রদের বৃত্তি সব বন্ধ। এরা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি, গণভবনের সব কিছু লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এই লুটপাটে ইউনূস ও তার সমন্বয়করা জড়িত। এমপি হোস্টেলে আগুন লুটপাট, মেট্রোরেলে আগুন সব কিছুই করেছে সমন্বয়রা। একজন সমন্বয়ক স্বীকার করেছে মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশকে হত্যা না করলে তাদের আন্দোলন সফল হতো না। সকল সরকারি ছুটি বাতিল করেছে। সব কিছুরই বিচার হবে।
ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে সকাল থেকেই মানুষ আসতে শুরু করে। হলে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। বাইরে ছিলেন অনেক মানুষ। নানান বয়সী কয়েক হাজার মানুষে হল ভরে যায়। অনেককেই বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়াতে হয়েছে। তার পরেও কেউ বিরক্ত হয়নি। সবার কান ছিল শেখ হাসিনা কি বলেন সেদিকে।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে কোরআন তেলাওত করেন জিলু খান। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমানসহ যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
মন্তব্য করুন