বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় চারদিকে সাঁড়াশি অভিযান, তটস্থ অবৈধ প্রবাসীরা

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া
  ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:৪৬

মালয়েশিয়ায় চারদিকে সাঁড়াশি অভিযানে তটস্থ করে তুলেছে অবৈধ প্রবাসীদের। রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ বিভিন্ন প্রদেশে প্রতিদিন চলছে ধরপাকড় অভিযান। আটক হচ্ছেন শতশত অবৈধ অভিবাসী। 

দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ বলছে, কোনোভাবেই অবৈধ প্রবাসীদের থাকতে দেওয়া হবে না। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবৈধদের নিজ নিজ দেশে ফিরতে হবে। মালয়েশিয়ার এমন দৃঢ় সিদ্ধান্তে দেশে না ফিরলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে দেশটির সরকার।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে থাকা বিদেশিদের বৈধ করতে ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি রিক্যালিব্রেশন ২.০, প্রকল্প হাতে নেয় দেশটি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিবন্ধন করে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়। দফায় দফায় এ প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ থাকার মধ্যেও যারা বৈধতা নিতে পারেনি তারা রয়েছে গ্রেফতার আতঙ্কে। কখন না জানি হানা দেয় ইমিগ্রেশন। জঙ্গলে, খাটের নিচে, বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে, দেয়াল টপকিয়ে, প্রজেক্টের লঙ্কানে বা কাঠের নিচে গর্তে লুকিয়েও রক্ষা পাচ্ছে না অবৈধরা।

অবৈধদের বৈধ করার কর্মসূচি রিক্যালিব্রেশন তালিকায় বরাবরই শীর্ষে থাকে বাংলাদেশ। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ ধাপে এই রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৪ লাখেরও বেশি শ্রমিক নিবন্ধন করে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার। তবে নানা জটিলতায় অনেক অবৈধ বাংলাদেশি এ প্রকল্পের সুযোগ নিতে পারেনি। তাদের বৈধ হওয়ার সুযোগ করে দিতে চলে কূটনৈতিক তৎপরতা। শেষমেষ মালয়েশিয়া সরকার রিক্যালিব্রেশন ২.০ নামে অবৈধদের বৈধ করার একটি বিশেষ প্রোগ্রাম শুরু করে। এই প্রোগ্রামে ১৫০০ রিঙ্গিত দিয়ে কোম্পানি মালিকের মাধ্যমে বেঁধে দেওয়া ৩১ মার্চের মধ্যে নিবন্ধিত হন।

পাশাপাশি চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে শুরু হয় অভিবাসী প্রত্যাবাসন কর্মসূচি (পিআরএম)। এ কর্মসূচির মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের দেশে চলে যেতে প্রতিনিয়ত আহ্বান জানাচ্ছে দেশটির সরকার ও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। ১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই প্রত্যাবাসন কর্মসূচি চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে সুযোগ করে দিয়েছে সরকার।

আর এ সময়ের মধ্যেও চলছে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান। বৈধ পাস/পারমিট ছাড়া কাজ করা এবং বৈধ ভ্রমণ ভিসা নেই এমন বিদেশিদের বিষয়ে তথ্য এবং জনসাধারণের দেওয়া সন্ধানের ভিত্তিতে সমগ্র মালয়েশিয়ার হটস্পটগুলোতে অপারেসি সাপু, অপারেসি সেলেরা, অপারেসি পিন্টু, অপারেসি মাহির এবং অপারেসি পিকআপের মতো বিভিন্ন নামে অভিযান চালিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের নাগরিকদের আটক করছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ।

ফলে মালয়েশিয়া সরকারের দেওয়া এত সুযোগ সত্ত্বেও দেশটিতে বর্তমানে থাকা প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশির মধ্যে যারা অবৈধভাবে বসবাস করছেন, তাদের মধ্যে বিরাজ করছে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। নানা জটিলতায় মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরতে পারে প্রায় ১ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি যার প্রভাব পড়তে পারে রেমিট্যান্স প্রেরণেও।

দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের দেওয়া তথ্য বলছে, গত ১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির অধীনে চলতি বছরের ৯ জুন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন কর্মসূচির আওতায় নিজ দেশে ফিরতে ৭০ হাজার ৩৭৯ জন অবৈধ অভিবাসী নিবন্ধন করেছেন। এদের মধ্যে ৯ জুন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৫৪ জন নিজ দেশে ফিরেছেন। তবে এ সংখ্যায় কতজন বাংলাদেশি ফিরেছেন তা জানা যায়নি। এছাড়া ইমিগ্রেশন বিভাগের অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে প্রতিদিনই  ইমিগ্রেশন অফিসে ভিড় করছেন হাজারো অবৈধ অভিবাসী।

দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের ধারণা, বিভিন্ন দেশের ৩ থেকে ৪ লাখ কাগজপত্রবিহীন অবৈধ অভিবাসী এই কর্মসূচির আওতায় শাস্তি ছাড়াই নিজ নিজ দেশে ফিরবে। ঘোষণা অনুযায়ী দেশে ফিরতে হলে সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে ইমিগ্রেশন বিভাগের। সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে ওয়ানওয়ে এয়ার টিকিট ও পাসপোর্ট। যাদের পাসপোর্ট নেই তাদের সংগ্রহ করতে হবে নিজ নিজ হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পারমিট। এরপরে ইমিগ্রেশন বিভাগে ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে স্পেশাল পাস দিলে পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে দেশে ফিরতে পারবে অবৈধরা। 

দেশে ফেরা প্রবাসীদের এই তালিকায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশ লম্বা হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। সম্প্রতি কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এ বিষয়ে এক নোটিশ জারি করেছে। অনিয়মিত বাংলাদেশিদের দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য পূর্বে তাদের মালয়েশিয়ার অবস্থানকৃত সময়ের ওপর ভিত্তি করে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনে জরিমানা দিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ ছিল। মালয়েশিয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ০১ মার্চ ২০২৪ তারিখ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত অনিয়মিত বাংলাদেশিদের সময় নির্বিশেষে (Irrespective of time) মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনে সর্বোচ্চ ৫০০ (পাঁচ শত) রিঙ্গিত জরিমানা প্রদান করে সহজে দেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ প্রদান করা হয়েছে। 

যেসব অনিয়মিত বাংলাদেশি বাংলাদেশে যেতে ইচ্ছুক তাদেরকে শেষ সময়ের জন্য অপেক্ষা না করার জন্য নোটিশের মাধ্যমে অনুরোধ করা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়, টিকিট প্রাপ্তি, ইমিগ্রেশনে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহণ, দীর্ঘ লাইনসহ শেষ সময়ে অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। উক্ত প্রতিকূলতা এড়াতে দ্রুত ট্রাভেল পারমিট সংগ্রহপূর্বক সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনুরোধ জানিয়েছে হাইকমিশন।

এদিকে চারদিকে সাঁড়াশি অভিযান, অন্যদিকে জেলের ঘানির চিন্তায় যেন তটস্থ করে তুলছে অবৈধদের। দেয়ালবিহীন এ প্রবাস নামক কারাগারে আত্মহত্যা না করতে চাইলে, দেশে ফেরা ছাড়া দ্বিতীয় আর কোনো উপায় নেই তাদের সামনে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ কর্মসূচির আওতায় যারা দেশে ফিরছেন তাদের বেশিরভাগই কর্মহীন কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রবিহীন। অনেকেই সম্প্রতি কলিং ভিসায় এসে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না পেয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ফিরে যাচ্ছেন দেশে।

মন্তব্য করুন