শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যরাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াফিচারশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

মায়ের হাতের সেলাই করা দুটো নকশিকাঁথা

বাকী উল্লাহ খান,সুইজারল্যান্ড
  ০৪ মে ২০২৪, ২৩:২২

"মা” কে স্বপ্ন দেখলাম। মা বললেন, কলেজ খুলবে রোববার আজ শুক্রবার যাবার দরকার কি? কালকে যাস। আরো একদিন বাড়িতে থাক।

আমি আট দশটা বড় বড় বই, অনেকগুলো খাতা, এক সাথে বেঁধে নিয়েছি সাথে ছিল মায়ের হাতের সেলাই করা দুটো নক্সি কাঁথাও। আর কাপড় চোপঁড়ের একটি কাপড়ের ব্যাগ।

লজিংয়ে থেকে পড়াশুনা করি তখন শেরে বাংলার জন্ম স্থান এবং তার নামে নির্মিত তার গড়া কলেজটিতে। ছুটিতে বাড়ী যাই। মা বাবা কি দিয়ে কি খাওয়াবেন তাই নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তাদের ধারণা অন্যর বাড়ীতে লজিংয়ে থাকা ছেলেটি তো আর নিজের ইচ্ছে খাওয়া করতে পারে না। বলতেও পারে না, আজ একটু কচু দিয়ে চিংড়ি মাছ খেতে ইচ্ছে করে তো বানানো যাবে! লজিং মানেই ওই বাড়ীতে যে খাবার রান্না হবে তাই আসবে পড়ার টেবিলে। ঐ দিনের নির্বাচিত খাবারই লজিং মাস্টারের খাবারের ম্যানু। তাই কিছু একটা নিজের ইচ্ছে মতো খাব  তা বাইরে কিনে খাওয়ার বাইরে অন্য কোন উপায় থাকে না এক কথায় পরাধীন। তবে  লজিং টা যদি দীর্ঘ হয়,পরিবারের মতোই হয় সেটা আবার ভিন্ন কথা।

যা হোক মায়ের ইচ্ছে আরো একদিন তিনি আমাকে তার কাছে রাখবেন, আদরে ভরে দিবেন, এবং আবারো চালের গুঁড়ার ছিটুনি পিঠা বানিয়ে খোপের আরো একটি মুরগী তিনি আমাকে খাওয়াবেন। এমন লোভ কে,,ছাড়তে পারে। মায়ের ভালবাসা ছেড়ে কোন সন্তান আছে দু-কদম বাইরে হাঁটতে পারে! তবুও মাকে বললাম, মা আজই যেতে হবে। কারণ আমার ছাত্র-ছাত্রীর পরীক্ষা, তাই দু-দিন আগেই আমাকে যেতে হবে।  তাছাড়া আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে যা মাকে প্রকাশ্যে বলা হয়নি। আমার যেতে যেতে প্রায় দিন শেষ হয়ে যাবে। প্রথমত হাঁটার পথ, তারপর রিক্সা,বাস,লঞ্চ, তারপর আবার হাঁটা মানে পুরোদিনটি আমাকে হাতে নিয়ে পৌঁছতে হয় লজিংবাড়ী।


মা দেখলেন, একদিন আগেই তাহলে যেতে দেয়া ভাল, সারাদিন কষ্টের পরে আমি একটু বিশ্রাম পাব। মা এবার আপসোস করে বললেন, ইস, আমার যদি গাড়ী থাকতো আর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতো তবে পরশু দিন তোকে গাড়িতে করে দিয়ে আসতাম। আমি বললাম, মা হেলিকপ্টার থাকলে তো আরো ভাল হতো তাই না! স্বপ্নের কথাই বললাম। মা এর পাশে ছিলো আমার ছেলে বিবরও। কি অদ্ভুত ব্যাপার আসলে এই স্বপ্ন দেখাটা। মা যখন মারা যান তখন আমার ছোট বোনই অবুঝ যার বয়স এখন প্রায় ত্রিশ তো আমার ছেলে আমার মা এর পাশে থাকবে কি ভাবে!

যা হোক মা বলছিলেন,"ইস আমার না হয় ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই বিবরের থাকলেও তো হতো। আমি বললাম, মা বিবর তো ছোট। ওর তো লাইসেন্স নেবার সময় এখনো হয়নি। "মা" বললেন, যাই হোক তোকে তো আমরা দিয়ে আসতে পারতাম। তোকে আরো দুটো দিন কাছে পেতাম। কি আশ্চর্য এক ভাবনা। আমার মা আমার ছেলেকে মানে তার নাতীকে দেখছেন তাহলে!
 

শেষ কথা


এই মাকে ছেড়ে এর পরে জীবনের এক যুগ ছিলাম দুরে। একযুগে গোপনে হয়তবা তিনবার এসেছিলাম মা কে দেখতে তাও আবার খুব বেশী হলে, এক দুই ঘন্টা। এই এক দুই ঘন্টায়  মায়ের স্পর্শে চার্জ নিয়ে নিতাম আবার সামনের এক যুগের। বিশ্বাস আর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নিজেকে সার্বক্ষনিক' হয়ে বিলিয়ে দিয়েছিলাম,নির্যাতিত, নিপীড়িত, শ্রমিক আর সর্বহারা মানুষের ভাগ্যর পরিবর্তণের লড়াইয়ে।
লেখক, সুইজারল্যান্ড প্রবাসী সাংবাদিক

মন্তব্য করুন