শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩২
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩২

লুকিয়ে লুকিয়ে আন্দোলনে যেতেন শহীদ আউয়াল

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৪
ছবি-সংগৃহীত

আবদুল আউয়াল, বয়স ছিল ৫৭ বছর। রাজমিস্ত্রীর কাজ করলেও দেশের সব খোঁজ খবর রাখতেন। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরের মোচাগারা গ্রামে। তার বাবা মৃত মোহর আলী। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ঢাকার কুতুবখালীতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় চারদিকে লাশের মিছিল আর আহতদের আর্তনাদ দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি। দেশের পরিস্থিতির কারণে মধ্য জুলাইয়ে হাতে তেমন কাজও ছিলো না। তাই বিবেকের তাড়নায় ১৫ জুলাই থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ি, কাজলা ও কুতুবখালী এলাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিতেন। প্রাণহানির শঙ্কায় স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫২) বাধা দিলেও তিনি শোনেননি। লুকিয়ে লুকিয়ে আন্দোলনে যোগ দিতেন। 

সর্বশেষ গত ১৯ জুলাই দুপুরে খাবারের পর স্ত্রীর অগোচরে কুতুবখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মিছিলে যোগ দেন। স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান, সেদিন দুপুরে বিকাল ৩টায় খবর আসে পুলিশের এলাপাথাড়ি গুলিতে তার স্বামী আউয়াল মিয়াসহ ৬ থেকে ৭ জন গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন আউয়াল মিয়া গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছেন। তখন স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে খিলগাঁওয়ের মুগদা মেডিকেলে নিয়ে যান। সেখানে ২১ জুলাই বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। 

আউয়ালের মরদেহ সেখান থেকে রাতেই অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তার মরদেহ এলাকায় পৌঁছাতেই এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। তাকে এক নজর দেখার জন্য আশাপাশের এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করে। জানাজায় প্রশাসনের কেউ ছিলো না। তবে স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজতসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। 

সম্প্রতি আউয়ালের গ্রামের বাড়ি মোচাগারায় গিয়ে দেখা যায় পরিবারের দৈন্য দশা। দোচালা একটি ঘরে কোনোমতে থাকেন স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও তার ছেলে হাবিবুর রহমান (১৭)। 

স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান, রাজমিস্ত্রীর কাজ করেই তার স্বামী সাত সন্তানের সংসার খরচ চালাতেন। তাদের ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে আয়েশা (৩৫), মর্জিনা (৩২), সোনিয়া (২৭), তানিয়া (২৫), ফারজানা (২২), আফসানা (২০) ও ছেলে হাবিব (১৭)। এর মধ্যে ছয় মেয়েকেই বিয়ে দিয়েছেন। অর্থের অভাবে তাদেরকে খুব একটা পড়াশুনা করাতে পারেননি। আর একমাত্র ছেলে হাবিবও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। এ মুহূর্তে বেকার। তাই বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে অনেক সংকটকাল পার করছেন তিনি। 

ফাতেমা বিএনপি, জামায়াত এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছ থেকে কিছু অর্থ সহায়তা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এসব অর্থ দিয়ে তিনি কতদিন চলতে পারবেন সে নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। স্বামীর সাথে ঢাকায় থাকা কালে তিনিও টুকটাক কাজ করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর গ্রামে চলে এসেছেন। বর্তমানে কোনো আয়ের ব্যবস্থা নেই। তাই সংসার চালানো নিয়ে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। একমাত্র ছেলের কর্মসংস্থান নিয়েও তিনি শঙ্কিত। আর অর্থাভাবে শ্বশুর বাড়িতে থাকা মেয়েদেরও খোঁজ-খবর নিতে পারছেন না।

তিনি আরও জানান, তার স্বামী হত্যার ঘটনায় ডেমরা থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে। যদিও সেই মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। তিনি তার স্বামী হত্যার বিচার দাবি করেন।

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন- আউয়াল মিয়া এলাকায় নিরীহ মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার মৃত্যুতে পরিবারটির জীবিকা নির্বাহ অনিশ্চিত পড়েছে। 

তিনি জানান, কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের পাঁচবারের নির্বাচিত সাবেক এমপি কায়কোবাদ তুরস্কে থাকাকালীন আউয়ালের পরিবারের জন্য ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। এছাড়াও স্থানীয় নেতাকর্মীরাও পরিবারটিকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে। দেশে এসেও পরিবারটির খোঁজ-খবর নিয়েছেন কায়কোবাদ।

মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা ইউসুফ হাকিম সোহেল জানান, আউয়াল মিয়ার মৃত্যুর পরই তার দলের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এখনও খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, এই উপজেলায় দায়িত্ব পেয়েছি বেশিদিন হয়নি। তারপরও শহিদ পরিবিারগুলোর খোঁজ খবর নিয়েছি। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে শহিদ আবদুল আউয়ালের পরিবারকে ২ লাখ টাকার চেক দেয়া হয়েছে। এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে নতুন কোনো নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুন