বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিঅন্যান্যসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১

ব্যথায় কাতরাচ্ছেন মনির, সুস্থ হতে দরকার ৫ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫২

বাংলাদেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামে এদেশের সাধারণ মানুষ যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাস্তায় নেমেছে, মিছিল করেছে তেমনি তারা প্রাণও দিয়েছে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং অনেক বৃৃহৎ পরিসরে ব্যাপকভাবে মানুষ খুনি হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। জীবন দিয়েছে অকাতরে।

একরমই একজন মো. মনিরুজ্জামান। কোটা সংস্কারের আন্দোলন যখন একপর্যায়ে একদফায় রূপান্তর হয় তখন তার পক্ষে ঘরে বসে থাকা সম্ভব হয়নি। রাস্তায় নেমেছেন, মিছিলে শরিক হয়েছেন তিনি। 

বিশেষ করে ১৬ জুলাই রংপুরের আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডে পুরো দেশবাসীর বিবেক যখন নড়ে ওঠে মনিরুজ্জামানও আর স্থির থাকতে পারেননি।  যোগ দেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে। শিকার হন পুলিশের নির্মমতার। 

গত ২০ জুলাইও মনিরুজ্জামান ছিলেন মিছিলে। সেদিন মানিক নগর বিশ্বরোডের কাছে বিকেল আনুমানিক সাড়ে পাঁচটায় পুলিশের চাইনিজ রাইফেলের গুলিতে মারাত্মক আহত হন। বুলেট ডান পায়ের পেছন থেকে লেগে সামনে দিয়ে বের হয়ে যায়। আশংকাজনক অবস্থায় মনিরুজ্জামানকে দ্রুতই ঢাকা জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে লোহার রিং পরানো হয় পায়ে। 

এখন তিনি বিছানায়। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। কারণ পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির কাছ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছেন। অথচ মনিরুজ্জামানের সুস্থ হতে দরকার অনেক টাকা।  

আহত মনিরুজ্জামান জানান, তিনি একজন দেশপ্রেমিক পুলিশ অফিসারের সন্তান। তার বাবা সৎ এবং একজন আদর্শিক মানবীয় গুণাবলীর অধিকারী। তিনি তার আন্দোলনে যোগ দেয়াকে সমর্থন করেছিলেন। 

তিনি বলেন, দেশ যখন ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ, দেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠিত হচ্ছিল, হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হচ্ছিল হাজার হাজার কোটি টাকা এবং নিরীহ জনগণের ওপর চালানো হচ্ছিল গুলি তখন আমিও ঘরে বসে থাকতে পারিনি। নেমেছিলাম রাজপথে। 

তিনি হতাশার সুরে  বলেন, কিন্তু এখন আমি পঙ্গু। সুস্থ হওয়ার জন্যে দরকার লাখ লাখ টাকা। আমরা এ অর্থ পাবো কোথায়?
এ সময়ে ক্ষোভ আর হতাশাকে চাপা দিতে গিয়ে কান্না শুরু করেন তিনি।

মনিরুজ্জামান (৪০) গত ১৫ বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করে চাকরি করতেন ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারিজে। এখন তিনি সম্পূর্র্ণ বেকার হয়ে পড়েছেন। থাকতেন ঢাকার ৯৯/ডি মানিক নগরে।

তার স্থায়ী ঠিকানা বাগেরহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দশানী বালিকা বিদ্যালয় সড়কের কাছে। মনিরুজ্জামানের পিতা মোঃ রুস্তম আলী (৭৫) অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, মা মজিনা খাতুন (৬৫), গৃহিণী।

মনিরুজ্জামান সহ তারা চার ভাই বোন। তাদের মধ্যে তিনি বড়। দ্বিতীয় মুক্তরুজ্জামান (৩৮) এডভোকেট, তৃতীয় বোন মোচ্ছামাত রওশনারা রুনা (৩৪) বিবাহিত, চতুর্থ ভাই মোঃ মহিনুজ্জামান (৩১), বেসরকারি চাকরিজীবী। 

আহত মনিরুজ্জামানের স্ত্রী সোহেলী সুলতানা (২৯)। এ দম্পতি নিঃসন্তান। সোহেলীর বাবার নাম মিজানুর রহমান (৫২)। তিনি প্রবাসী।  মা কোয়েলা বেগম পিরোজপুর সদরের কালিবাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা। 

মোঃ মনিরুজ্জামান বর্তমানে বাবা মায়ের সাথে বাগেরহাটেই অবস্থান করছেন। অসুস্থ ও পঙ্গু অবস্থায় পরিবারের বোঝা হয়ে দিন কাটছে তার। 

মনিরুজ্জামানের বাবা মা ছেলের চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। 

তারা বলেন, উন্নত চিকিৎসা না পেলে ছেলে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তাই অতি দ্রুত ছেলের চিকিৎসা শুরু করা দরকার। না হলে হয়ে যেতে পারে অনেক বড়ো ক্ষতি।

মন্তব্য করুন