লক্ষ্মীপুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পুষ্টিকর ফল ড্রাগন। দেশের মাটিতে বিদেশি এই ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার নাইম। লাভজনক হওয়ায় ড্রাগন চাষে আগ্রহ বাড়ছে যুবকদের। শত শত বেকারদের বেকারত্ব দূরীকরণে মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
২০২১ সালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমণীমোহন ইউনিয়নের চর রমণীমোহন গ্রামে ৩ একর ২০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে খান এগ্রো পার্ক নামে ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তোলেন মাজহারুল ইসলাম নাঈম। তার বাগানে প্রায় আড়াই হাজার ড্রাগন গাছ রয়েছে। নতুন করে লাগানো হয়েছে আরো ৫শ গাছ। সবমিলিয়ে বর্তমানে তার বাগানে ড্রাগন গাছ রয়েছে তিন হাজারেরও বেশি।
গত তিন বছর ড্রাগন চাষ করে আসছেন নাইম। বাজারে তার ড্রাগনের চাহিদা থাকায় সরাসরি কৃষি বিপণন অধিদফতর সহযোগিতা করেছে। আকারে বড় এবং সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারজাত নিয়ে তাকে চিন্তা করতে হচ্ছে না। পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা নিজ দায়িত্বে বাগান থেকে নিয়ে যায়।
নাইমের দাবি বাজার ব্যবস্থা আরো ভালো হলে সে আরো লাভবান হতো। তাছাড়া বাইর থেকে ভিন্ন জাতের ড্রাগন আসায় নাইমের উৎপাদিত ড্রাগন নিয়ে কিছু গুজব ছড়ানোর কারণে প্রভাব পড়েছে। কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়ার দাবি তার।
উদ্যোক্তা নাইমের ড্রাগন চাষে বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে। বর্তমানে ১০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছে তার এগ্রো পার্কে। তার বাগানের ড্রাগন আকারে বড় ও সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে চাহিদাও বেশ। চলতি বছরে তার বাগানে ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এবারো ভালো ফলন হয়েছে।
এরইমধ্যে ২০ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করা হয়েছে। বিশাল বাগানে ড্রাগনের ফলন দেখে ড্রাগন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অনেকেই। তার দেখাদেখি অন্যরাও উদ্যোগী হওয়ার চেষ্টা করছেন। তরুণ সমাজের বেকারত্ব কমবে এবং নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে বলে আশা করছেন তারা।
জানা গেছে, তরুণ উদ্যোক্তা মাজহারুল ইসলাম নাইম বিইউবি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি জেলা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের আইসিটি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
ড্রাগনের পাশাপাশি পেঁপে, পেয়ারা, আম, কুল, মাল্টাসহ উন্নত জাতের নানান রকম ফলও চাষ করছে নাইম।
স্থানীয় যুবক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ইঞ্জিনিয়ার নাইম শিক্ষকতার পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণে ড্রাগন চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। তিনি নিজে লাভবান হচ্ছেন। আমরাও চেষ্টা করছি নতুন করে ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফল চাষ করতে। ফলে এলাকার বেকার যুবকরা আর বেকার থাকবেনা।
খান এগ্রো পার্কের মালিক মাজহারুল ইসলাম নাঈম বলেন, গত তিন বছর ধরেই ড্রাগনসহ আরো অন্যান্য ফল চাষ করে আসছি। তবে ড্রাগন ফল চাষে ভালো লাভবান হওয়ায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এবার ৪০ লাখ টাকা খরচ করে এরইমধ্যে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। প্রায় ৮০ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবে বলে আশাবাদী তিনি।
জেলা বাজার বিপণন কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, মাজহারুল ইসলাম নাঈম নিজেই একজন উদ্যোক্তা। তার সকল কাজে আমরা পাশে আছি। তার উৎপাদিত ড্রাগন ফল যদি বাজার জাত করনে সমস্যা হয় আমাদের দফতরের মাধ্যমে আমরা তা বাজার জাত করার ব্যবস্থা করবো। তবে বাইর থেকে কিছু অন্য জাতের ড্রাগন আসার কারনে সাময়িক ক্ষতি হলেও নাইমের ড্রাগন যেন বাজারজাত করতে পারে সে বিষয়ে তার পাশে আছি।
মন্তব্য করুন