বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

ফেলে দেওয়া আঁশই ডলার আনছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২২:১৫
ছবি-সংগৃহীত

প্রবাদ আছে মাছে-ভাতে বাঙালি। মাছ মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তবে মাছের আঁশ উচ্ছিষ্ট হওয়ায় তা ফেলে দেওয়া হতো ডাস্টবিনে। কিন্তু এখন সেই আঁশ উচ্ছিষ্ট নয়। আঁশ রোদে শুকিয়ে রফতানি হচ্ছে বিদেশে। এতে আয় হচ্ছে বাড়তি টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বিভিন্ন বাজারে মাছ কেটে বাড়তি আয় করছেন অনেকে।

পৌর শহরের সড়ক বাজার মাছ বাজারে দেখা যায়, মাছ কুটায় যেন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। এ বাজারে বেশ কয়েকজন লোক মাছ কুটার কাজ করছেন। এরপর মাছের আঁশগুলো একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দিচ্ছেন। মাছ কুটা দিনদিন বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। যাদের বাড়িতে মাছ কুটতে সমস্যা হয়, তারাই কেবল মাছ কুটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

মাছ কুটাররা বলেন, অনেকে বড় মাছ কেনার পর বাড়িতে ঝুট-ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে বাজার থেকেই সুন্দর করে মাছ কুটে নিয়ে যায়। একসময় আমরা বড় মাছ কাটার সময় মাছের আঁশ চেষে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হতো। তবে সেই আঁশও যে টাকায় বিক্রি হয়, তা জানা ছিল না। বর্তমানে সেই আঁশ-ই বাড়তি আয়ের পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাছের উচ্ছিষ্ট আঁশ বাড়িতে নিয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে বিক্রি করছেন।

তারা জানান, শুনেছি মাছের আঁশ জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে রফতানি করা হয়। মাছের আঁশ থেকে কোলাজেন ও জেলাটিন পাওয়া যায়। যা দিয়ে ওষুধ, প্রসাধনী সামগ্রী ও সম্পূরক খাবার তৈরি করা হয়। তাই বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আঁশ ক্রয় করছেন।

সড়ক বাজার মাছ বাজারে কথা হয় মাছ কুটা শ্রমিক প্রসেনজিৎ দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই বাজারে ভাড়ায় একটি দোকান নিয়ে দীর্ঘ ৮ বছরের ওপর ধরে মাছ কুটার কাজ করছি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাছ কুটার কাজ করে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার ওপর আয় করছি। আগে বাজারে মাছ কুটা আঁশগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হতো। এখন আর ফেলে দেওয়া হয় ন‍া।

তিনি জানান, রুই, কাতল, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ কেটে আঁশ সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ কেজির ওপর ভেজা আঁশ সংগ্রহ করা যায়। এরপর সেই আঁশ বাড়িতে নিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছি। গত ৪ বছর ধরে মাছের আঁশ বিক্রি করছি। 

এ কাজে সহযোগিতা করছেন মা ও স্ত্রী। প্রতি মাসে ৪-৫ মণ মাছের আঁশ বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। মাছের আঁশ বিক্রি করে প্রতি মাসে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকার ওপর আয় হয়। মাছ কেটে যা পাই, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়। মাছের আঁশ বিক্রি করে যে বাড়তি টাকা পাই, তা দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহ করার পাশাপাশি সংসারের অন্যান্য কাজ করা যায়।

প্রসেনজিৎ সদর উপজেলার শ্যামনগর গ্রামের নিহিল দাসের ছেলে। পরিবারে বাবা-মা, স্ত্রী এক ছেলেসহ ৫ জন সদস্য রয়েছে তার।

সোহেল নামে এক মাছ কুটা শ্রমিক বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বাজারে মাছ কুটার কাজ করছি। তবে আমি মাছ বিক্রি করি না। বাজারে মাছ কুটার ভালো চাহিদা রয়েছে। দৈনিক মাছ কুটার পর আঁশগুলো বাড়িতে নিয়ে যাই। এরপর পরিষ্কার করে রোদে শুকানো হয়। আমার মতো অনেকেই এই কাজে জড়িত।

ভৈরব, নরসিংদী, ঢাকা থেকে পাইকার এসে এসব শুকনো মাছের আঁশ কিনে নিয়ে যায়। এটি আমাদের বাড়তি আয়। আগে তো এসব আঁশ আমরা ফেলে দিতাম। কিন্তু বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করায় এখন সংরক্ষণ করে রোদে শুকিয়ে তা বিক্রি করছি। মাছের আঁশের যে এত চাহিদা তা জানা ছিল না।

মাছ ব্যবসায়ী মাখন দাস বলেন, বাজারে আমাদের থেকে মাছ ক্রয় করে অনেকে কুটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। এতদিন মাছের আঁশের স্থান ছিল ডাস্টবিনে। তবে বর্তমানে সেই উচ্ছিষ্ট মাছের আঁশই তাদের বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে।

মাছের আঁশ ক্রেতা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় মাছ কাটা শ্রমিকদের কাছ থেকে মাছের আঁশ ক্রয় করছি। বড় ব্যবসায়ীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিনে নিয়ে যায়। শুনেছি মাছের ওই আঁশ জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে রফতানি করা হয়। মাছের আঁশ থেকে কোলাজেন ও জেলাটিন পাওয়া যায়। যা দিয়ে ওষুধ, প্রসাধনী সামগ্রী ও সম্পূরক খাবার তৈরি করছে।

আখাউড়া উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নেই। তবে বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন