মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করে বাঁশের সেতু দিয়ে

ফিচার ডেস্ক
  ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪০

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের সাজিউড়া বাজার থেকে গোগবাজার সড়কের তেতুলিয়াস্থ ১৫৬ মি. চেইনেজে মাত্র ১৬ মি. দীর্ঘ আরসিসি গার্ডারের একটি সেতু নির্মাণের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পাইল-বোরিং প্রতিবন্ধকতায় এখন পর্যন্ত কাজই শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পুরাতন সেতুটা ভেঙে বাঁশের মাচা (পাটাতন) করে দেওয়া হলেও কয়েক মাসেই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এটি।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (২৪ ও ২৫ অক্টোবর) সরেজমিন দেখা যায়, নতুন সেতু নির্মাণ করতে গত মে মাসে পুরাতন সেতুটি ভেঙে মানুষ ও যানবাহন চলাচলের জন্য রাজি নদীর ওপর (যদিও এখন সরু খাল) একটি বাঁশের মাচা তৈরি করে দেওয়া হয়। সেটিও এখন দেবে গিয়ে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। 

গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটির উত্তর পাশেই রয়েছে তেতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাঁশের মাচাটিতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে সেই আশঙ্কায় আতঙ্কিত থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন তারা।

তেতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসলিমা, তানজিনা, অনয় ও মোবারক জানায়, অনেক দিন যাবত সেতুটি ভাঙা। এই ভাঙা সেতুর ওপর দিয়ে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে এবং বাজারে আসা-যাওয়া করি। বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করি। তাই আমরা চাই এই খালের ওপর দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ করা হোক। যেন আমরা ঝুঁকিমুক্তভাবে আসা-যাওয়া করতে পারি।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোতাহার হোসেন জানান, সাজিউড়া বাজারের এই সড়কে প্রতিদিন অটোরিকশা, ট্রলিসহ বিভিন্ন যানবাহন ও মানুষজন চলাচল করেন। সেতুর আশপাশের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮০ জন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা স্কুল ছাড়াও সাজিঊড়া বাজারে এই মাচার ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করে।

তিনি আরো বলেন, এই স্কুলের মাঠে সেতু নির্মাণের সামগ্রী দীর্ঘদিন যাবত পড়ে আছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঠিকভাবে খেলাধুলা করতে পারে না। তাই শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। তিনি সেতুটির নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেতুটি নির্মাণের জন্য এলজিইডি থেকে গত ২ নভেম্বর/২০২৩ নির্মাণ কাজ শুরুর কার্যাদেশ তারিখ এবং ১৮ সেপ্টেম্বর/২০২৪ নির্মাণ কাজ সমাপ্তের তারিখ দেওয়া হয়েছে। এটি CAFDRIRP এর আওতায় প্যাকেজের একটি কাজ যার মূল্য ধরা আছে ১ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার টাকা।

উপজেলা এলজিইডি সূত্র জানায়, উক্ত সেতুটি সিঙ্গেল স্পেন এবং দুটি Abutment-এর প্রতিটিতে ৬০০ মি. ব্যস ও ২৩.৫০ মি. দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ৮টি করে মোট ১৬টি  RCC Cast-in Citu Pile অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত ২০ মে সেতুর দক্ষিণপাশে ৬নং পাইল পয়েন্টে বোরিংয়ের কাজ শুরু করলে ৩ মি. গভীরে পুরাতন সেতুর বেইজ এ বাধাপ্রাপ্ত হয়। 

১ ঘণ্টা চেষ্টার পর বাধা অতিক্রম সম্ভব হলেও ১০ মি. গভীরে ৩ ঘণ্টা চেষ্টা করেও অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি। বোর হোলের অন্য আরো ২টি পয়েন্টে বোরিং করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে ২৮ মি. আবার উভয় পাশে সোয়েল টেস্ট করা হলে ৩ মি. অধিক অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি।

এলাকাবাসী জানান, পুরোনো সেতুটি করার সময় সেতুর নিচে গাছের বল্লী দ্বারা পাইলিং করা হয়েছিল। পরে ১০ মি. পর্যন্ত বোরিংয়ের সময় গাছের বাকল ও গোলাকার পাথর পাওয়া যায়। এসময় CAFDRIRP এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সোহেল রানা উপস্থিত ছিলেন এবং উক্ত প্রকল্পের সুপার ভিশন প্রকৌশলী একেএম রুহুল আলম সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আল আমিন সরকার জানান, সেতুটি নির্মাণের সমস্যাগুলো নিয়ে নেত্রকোণা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে জানানোর পর তিনি কাজটি বাস্তবায়নে সিদ্ধান্তের পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রকল্প পরিচালক ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্প স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরকে অনুরোধ করে পত্র প্রেরণ করেন। আশা করছি সেতুর কাজটি বাস্তবায়নে দ্রুত ব্যবস্থা হবে।

মন্তব্য করুন