শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ডা. মাহমুদউল্লাহ সাইফের মৃত্যু এবং আমার দু’ফোটা অশ্রু

শাহাদাত হোসেন শান্ত
  ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:৫২

সবার প্রিয় বিশেষ করে সরকারি চিকিৎসা নিতে গিয়ে যার আচার-আচরণ, ব্যবহার এবং চিকিৎসা সেবায় মুগ্ধ হওয়া রোগীদের মধ্যে আমারও প্রিয় চিকিৎসক চাঁদপুর বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাহমুদউল্লাহ সাইফ আজ ১৯ রাত ২টা ৩০ মিনিটে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তার নিকট চলে গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। 

বক্ষব্যাধি অসুস্থতা নিয়ে গত ২০ মার্চ আমি প্রথম চাঁদপুর বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের দ্বিতীয় তলায় ডা. মাহমুদউল্লাহ সাইফের চিকিৎসা নেওয়ার জন্য অন্যান্য রোগীদের মতো অপেক্ষা করতে থাকি। আমি সাংবাদিক, চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বা হেনতেন এসব কোনো পরিচয় না দিয়েই একজন সাধারণ রোগীর মতই অপেক্ষা করতে থাকি।

সরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক হিসেবে হাসপাতালে রোগীদের তিনি যেভাবে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরম মমতা ভালোবাসা এবং যত্ন সহকারে চিকিৎসা দিতে দেখে আমি তখন অবাক হয়েছি। আমার সিরিয়াল আসার পর তখন তিনি আমাকেও দেখলেন অনুরূপভাবে। চিকিৎসা শেষে আসার সময় আমি আমার পরিচয় দেওয়ার পর তিনি অবাক হয়ে বললেন আগে পরিচয় দেননি কেন?

আমি তখন বলেছিলাম আমিতো এখানে এসেছি একজন রোগী হিসেবে। অন্যকোনো পরিচয়ে নয়। কিন্তু একজন সরকারি চিকিৎসক হিসেবে সরকারি হাসপাতালে আপনার চিকিৎসা প্রদানের  ধরণ দেখে আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ভালোবাসা জানিয়ে গেলাম। আল্লাহ আপনাকে সুস্থ রাখুন, ভালো রাখুন।

উল্লেখ্য, এর পূর্বে আমাদের দুজনের মধ্যে কখনো আর পরিচয় এবং দেখাদেখি হয়নি। পরে তিনি আমাকে হাসপাতালে তার চেম্বারে চা আপ্যায়নের কথা বলেছিলেন। আমি বলেছিলাম হাসপাতালে নয় আপনি প্রেসক্লাবে আসবেন। আমি আপনাকে চা খাওয়াবো। 

এরপরও আরো দু’একবার রোগী হিসেবে আমি উনার শরণাপন্ন হয়েছে। বিভিন্ন সময় অসহায়, গরিব রোগীদের তার কাছে ফোন করে পাঠিয়েছে। সর্বশেষ ঢালীরঘাটে ইট বালুর কাজ করা রহিম শেখ নামে একজন শ্রমিকের সাথে আমার পরিচয় হয়। অসহায় এই লোকটি বক্ষব্যাধি সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাইভেটে নানান ডাক্তার দেখিয়ে অনেক টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু সুস্থ হচ্ছেন না। তার কষ্টের কথা শোনার পর আমি তখন তাকে চাঁদপুর বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে পাঠিয়ে ডা. মাহমুদউল্লাহ সাইফকে ফোন করেছিলাম। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার পর রহিম শেখের টিবি রোগ ধরা পড়ে। তার চিকিৎসা এখনো চলমান। 

ডা. মাহমুদউল্লাহ সাইফ চাঁদপুর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে যোগদানের পর ঝরা জীর্ণ এই হাসপাতালটির উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিছু কিছু কাজ সম্পন্নও করেছেন। আমাকে দিয়ে দু'একটি দপ্তরে সুপারিশ করিয়েছিলেন। 

গত কয়দিন ধরে আমি অনুরূপ বক্ষব্যাধি সংক্রান্ত অসুস্থতায় ভুগছি। তাই গত ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে গিয়ে জানলাম প্রিয় ডাক্তার সাইফ ভাই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ঢাকায় হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছেন। যে কোন সময় ওনার জীবন অবসান হতে পারে। কথাটি শোনার পর যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।  

দেশ ও সমাজের দুঃসময়ে ডা. মাহমুদউল্লাহ সাইফ এর মত একজন ভালো এবং মানবিক চিকিৎসকের শূন্যতা আমাকে খুবই কষ্ট দিয়েছে এবং অশ্রু সিক্ত করেছে। ঐদিনই সন্ধ্যায় আমি চাঁদপুর প্রেসক্লাবে সাধারণ সম্পাদক জনাব মাহবুবুর রহমান সুমন এবং কোষাধ্যক্ষ তালহা জুবায়ের কাছে ডাক্তার সাইফ এর মারাত্মক অসুস্থতার পরিণতির কথা জানাই। তারাও তখন এই কথা শুনে অবাক হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক জনাব মাহবুবুর রহমান সুমন জানালেন তিনিও ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ডাক্তার সাইফ এর কাছে গিয়েছেন। উনি শুধু চিকিৎসাই দেননি; পরবর্তী সময়ে একাধিকবার ফোন করে আমার ছেলের সুস্থতা সম্পর্কে খোঁজ খবরও নিয়েছেন। 

আমার দীর্ঘ সাংবাদিকতা ও লেখালেখি জীবনে চাঁদপুরে অনেক তথাকথিত (!)   বড় বড় সরকারি চিকিৎসক দেখেছি; যারা সরকারি হাসপাতালে রোগীদেরকে চিকিৎসা দেওয়ার নামে তামাশা করে। ঠিকমতো রোগীর হাতটি পর্যন্ত ধরে দেখেনা। আবার সরকারি দায়িত্ব পালনেরকালীন সময়ে অন্য রুমে গিয়ে বসে গল্প আড্ডা দেয়। যাতে রোগীরা সেসব কুলাঙ্গার চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে চলে যায়। তাদের চিন্তা চেতনায় দেখেছি শুধু টাকা আর টাকা এবং ভন্ডামি। হাসপাতালে নিজ দায়িত্বে ফাঁকি, প্রতারণা এবং স্বার্থপরতা ছাড়া তাদের মাথায় আর শুভ এবং মানবিক কোন চিন্তা কাজ করে না। ডা. মাহমুদউল্লাহ সাইফ ছিল এদের চেয়ে আলাদা এবং অনন্য। 
 
মহান আল্লাহ ডা. মাহমুদউল্লাহ সাইফকে
জান্নাত নসীব করুন। আমীন। 

শাহাদাত হোসেন শান্ত, সভাপতি চাঁদপুর প্রেস ক্লাব 

মন্তব্য করুন