শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জাতীয়প্রবাস বাংলাঅপরাধবাণিজ্যরাজনীতিসারাদেশমতামতস্বাস্থ্যফিচাররাজধানীপাঠকের কথাআবহাওয়াশিল্প-সাহিত্যগণমাধ্যমকৃষি ও প্রকৃতিইসলামবৌদ্ধহিন্দুখ্রিস্টানআইন-বিচারবিবিধআপন আলোয় উদ্ভাসিতবেসরকারি চাকুরিসরকারি চাকুরি Photo Video Archive

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মানিকগঞ্জে আখের বাম্পার ফলন

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৫২
ছবি-সংগৃহীত

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় এ বছর আগের বাম্পার ফলন হয়েছে। অল্প পরিশ্রমে লাভজনক হওয়ায় উপজেলার এক হাজার কৃষক আখ চাষে ঝুঁকছেন।

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব আখ চলে যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। এ বছর সিংগাইর উপজেলা থেকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার আখ বিক্রির আশা উপজেলা কৃষি বিভাগের।

সিংগাইর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ভালো মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সিংগাইরের আখের আকার ও মান ভালো। চলতি মৌসুমে উপজেলার ২৮০ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে।

এর মধ্যে অমৃত, বোম্বাই, রঙবিলাশ ও দেশি জাতের আখের আবাদ করেন কৃষকরা। সার, কীটনাশক, চারাসহ প্রতি বিঘায় আখ আবাদে কৃষকদের গুনতে হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর এ বছর প্রতি বিঘা আখ বিক্রি হচ্ছে এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকায়। আর আখের সাথে স্বল্প মেয়াদি সাথি ফসল করে বাড়তি টাকা আয় করছেন কৃষকরা।

উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের নয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক আলকাস হোসেন জানান, ‘জীবিকার তাগিদে দীর্ঘ এক যুগ সৌদি আররে কাজ করে দেশে এসে আবারো আখ চাষ শুরু করেন। আগের বছর ফলন কম হলেও এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় চার বিঘায় চাষ করেন অমৃত, বোম্বাই, রঙবিলাশ। এর মধ্যে দুই বিঘা আখ বিক্রি করেছেন ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বাকি আখ এমন দাম থাকলে আরো আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন।’

একই গ্রামের মজিবর পাঁচ বিঘা জমিতে আখের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে দুই বিঘা জমিতে বোম্বাই, আর তিন বিঘাতে অমৃত ও রঙবিলাশ জাতের আখ। প্রতি বিঘায় তার সব মিলিয়ে গড়ে খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা করে। তবে, সব কিছুর দাম বাড়ায় এবার খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষক জাহাঙ্গীর মিয়া জানান, ‘প্রতিবছর নভেম্বর মাসের শেষের দিকে আখের চারা রোপণ করি। এর সঙ্গে বেশ কয়েকবার সাঁথি ফসল দেই। প্রথমে সরিষা করি। সরিষা তোলা হয়ে গেলে তারপর আলু, লালশাক, মূলা করি। সাঁথি ফসল করলে অতিরিক্ত আয় হয়। এ বছর সরিষা আর মূলার আবাদ ভালো হয়েছে। কিন্তু লালশাকের ফলন আসেনি।’

আখ কাটার কাজ করেন একই এলাকার সালাম, সোহেলসহ বেশ কয়েকজন। তারা জানান, প্রথমে আমরা ক্ষেত থেকে আখ কাটি। কাটার পর সেগুলো সাইজ করে আঁটি বাঁধা হয়। পরে সেগুলো ট্রাকে তুলে দেই। প্রতি হাজার আখে আমাদের মজুরি দেয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। সব মিলিয়ে বছরে ৬ মাস আমরা এ কাজ করি। কিন্তু তিন মাসে কাজ বেশি থাকে।

পাইকার মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের বায়রা গ্রাম আখ চাষের জন্য বিখ্যাত। সেই বিট্রিশ আমল থেকেই আমাদের এখানে প্রচুর আখ হয়। আমার দাদা, বাবার পর আমি এই ব্যবসা করছি। বায়রা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আখ কিনে তা ঢাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। আগে বেশ কয়েকটি জেলায় আখ বিক্রি করতাম। এখন আবাদ কমে যাওয়ায় ঢাকাতেই বেশি পাঠাই। ঢাকার সঙ্গে আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থাও বেশ ভালো। এ বছর আখের দামও ভালো পাচ্ছে কৃষকরা।

বায়রা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী শহিদুল ফেরদৌস জানান, ‘প্রতি বিঘায় সাড়ে চার থেকে ৫ হাজার আখ হয়ে থাকে। আকার ও মানভেদে প্রতি পিস আখ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা। চাহিদা থাকায় ক্ষেত থেকেই আখ কিনে নিয়ে যায় পাইকারী ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত এসব আখ পার্শ্ববর্তী সাভার, কেরানীগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী জানান, ‘সিংগাইর উপজেলায় এ বছর ২৮০ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে আখের আবাদ কম হলেও এ বছর আখ চাষে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। আমরা কৃষকদের আখের পাশাপাশি বিভিন্ন সাথি ফসল করতে উদ্বুদ্ধ করছি। বিঘা প্রতি কৃষকরা এবার এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছেন। সে হিসাবে সিংগাইর উপজেলা থেকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার আখ বিক্রি হবে।’

মন্তব্য করুন